অনলাইনে কেনাকাটা

অনলাইনে প্রথম কেনাকাটা ছিলো খূব সম্ভবত কোন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে।  এরপর টেকশপ আর রকমারি থেকে।  প্রথম প্রথম একটু ভয়ে ভয়েই অর্ডার করতাম।  যদি ধরা খাই।  তবে প্রথম ধরা খেয়েছিলাম কেইমু.কম নামের এক সাইট থেকে।  ৩০০ টাকায় কিবোর্ড ভ্যাকুয়াম ক্লিনার কিনেছিলাম একটা।  হাতে পাওয়ার পর দেখা গেলো সেটি খেলনা।  ভিতরে একটি মোটর আছে ছোট, কেবল ঘুরে।  কিন্তু কোন ডাষ্ট টেনে নেয়ার ক্ষমতা নেই।  সেটি ফেরতও দেয়া যায়নি।  পূরো টাকাটাই গচ্চা। 

ক্র্যাফটিং এর বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালস এর জন্য আমি ফেসবুক ভিত্তিক ছোট ছোট গ্রুপ / পেজ এর উপর নির্ভর করতাম।  এসব গ্রুপ / পেজ এর মালিক বেশীর ভাগই গৃহবধূ।  তারা অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের সেই পেজ বা গ্রুপ পরিচালনা করেন।  জিনিসপত্রও ঠিকঠাক পাঠিয়ে দেন।  ২/১ বার হয়তো কোন আইটেম ভুল পাঠিয়েছেন অথবা কম পাঠিয়েছেন, বলার পর পরই সেটির সমাধান হয়েছে। রিভিউটেকশপ এবং রকমারি একই কোম্পানির দু’টি শাখা।  বলা চলে শুরু থেকেই তারা প্রফেশনাল।  আমার ক্ষেত্রে টেকশপে একবার সামান্য সমস্যা হয়েছিলো (মিনি ড্রিল এর ড্রিলবিট পাই নাই)।  মেসেজ দেয়ার পর পরই সেটির সমাধান হয়েছিলো।  আমাকে অবশ্য জিনিসটি বয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিলো তাদের অফিসে।  রকমারি’তে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি।  মাঝে একবার তাদের বই কিনে একটি বুক শেলফ জিতেছিলাম।  আমি অবশ্য বুক শেলফ না নিয়ে হাজার পাঁচেক টাকার বই নিয়েছিলাম।  রকমারি থেকে নিয়মিতই বই কিনি। নেগেটিভ রিভিউবাংলাদেশের ইকমার্স কোম্পানিগুলির মধ্যে পিকাবু অন্যতম।  তবে খূব বেশী কেনাকাটা আমি করিনি।  একবার শাউমি পাওয়ার ব্যাংক অর্ডার করে নকল প্রোডাক্ট পেয়েছিলাম।  ফেসবুকে এ নিয়ে পোষ্ট দেয়ার পর এক ছোট ভাই পিকাবুর একজন ম্যানেজার’কে ট্যাগ করে দিয়েছিলো।  এরপরই সেটিঃর সমাধান হয়েছিলো, আমি নতুন পাওয়ার ব্যাংক পেয়েছিলাম। 

বাগডুম থেকে প্রথমবার কেনাকাটায় প্যাঁচ লাগিয়েছিলো ডেলিভারী কোম্পানি ইকুরিয়ার এর ডেলিভারীম্যান।  ফোন করে আসবে বলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও সে আসেনি।  তার কারণে আমি সেদিন একটি পারিবারিক দাওয়াত মিস করেছিলাম প্রায়।  আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম পরে প্রোডাক্ট ডেলিভারী না নিয়ে।  যদিও এক্ষেত্রে বাগডুমের কেন দোষ ছিলো না।  ইকুরিয়ার থেকেও পরে ফোন করে দূঃখ প্রকাশ করা হয়েছিলো।  এরপর থেকে আর বাগডুমে অর্ডার করা হয়নি।

মজার রিভিউ(প্রোডাক্টের রিভিউ দেখতে গিয়ে এটি পেয়েছিলাম)

আজকের ডিলে আগে টুকটাক কেনাকাটা করা হতো।  এখন প্রায় করাই হয় না।  তারাও একবার দু’টো প্রোডাক্টের জায়গায় একটা প্রোডাক্ট পাঠিয়েছিলো।  বিল ছিলো ২টি প্রোডাক্টেরই।  ডেলিভারীম্যানের সামনেই খুলেছিলাম বলে ভুল ধরা পরেছিলো।  পরে আজকের ডিলে ফোন করে পুরো প্যাকেটই ফেরত দিয়েছিলাম। 

এর মাঝে আরো কিছু ইকমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটা করা হয়েছে।  একটি ছাড়া বাকি সবগুলিই ভাল ছিলো বলতে হবে।  একমাত্র ব্যতিক্রম বই বাজার.কম।  বিকাশ করে মূল্য পরিশোধের পরও তারা বই সরবরাহ করতে পারেনি এবং আমার টাকাও ফেরত দেয়নি।  যোগাযোগ করলেই তারা কেবল রেফারেন্স চায়, অথচ তাদের সাইটে কিংবা মেসেঞ্জারে সব তথ্যই আছে।  শেষ পর্যন্ত ১৫২ টাকা জলে গেলো। একই তথ্য বার বারপ্রথম ধরা খাওয়ার কাহিনী ছিলো কেইমু.কম সাইটে।  কালের পরিক্রমায় এটি এখন দারাজ.কম, চীনের আলিবাবা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।  বর্তমানে আমার অনলাইন কেনাকাটার সিংহভাগ করি এই সাইট থেকেই।  আমার কেনাকাটা মূলতঃ ক্যামেরা, কম্পিউটার রিলেটেড বিভিন্ন পার্টস এবং গ্যাজেট।  এখান থেকে কেনাকাটা করেও নষ্ট, ভুল বা ভিন্ন সাইজের জিনিস পেয়েছি।  তবে অন্য অনেক সাইটের সাথে বর্তমান দারাজের বড় পার্থক্য হলো রিটার্ণ এবং রিফান্ড পলিসি।  ঢাকায় থাকি বলে হয়তো এই সার্ভিস দু’টি অপেক্ষাকৃত দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাই।  বলা চলে দারাজ দিনে দিনে আরো প্রফেশনাল হয়ে উঠছে।  তাই নিশ্চিন্তে প্রিপেমেন্ট করে অথবা ক্যাশ অন ডেলিভারীতে অর্ডার করে দেই।  সন্তুষ্ট না হলে রিটার্ণ করে রিফান্ড নিয়ে নেই।  এতো কিছুর পরও কিছু কিছু সেলার আছেন যারা চেষ্টা করেন যেনতেন প্রোডাক্ট গছিয়ে দিতে।  কিছুদিন আগে একটি সেলফি লাইট অর্ডার করেছিলাম।  সেলার ফুলে উঠা নষ্ট ব্যাটারি সহ বিযুক্ত প্রোডাক্ট পাঠিয়ে দিয়েছিলো।  সেটি ফেরত দিয়ে রিফান্ড নিয়েছিলাম। 

দারাজে এখন বড় সূবিধা হলো ইউজার রিভিউ পাওয়া যায়।  যদিও রিভিউ দিলে তারা সেটি প্রকাশ করতে যথেষ্ঠই দেরী করে, হোক সেটি পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ রিভিউ।  তবে অনেকেই রিভিউ দেন নেগেটিভ কিন্তু সাথে ৫ ষ্টার দিয়ে রাখেন।  এতে বিভ্রান্ত হতে হয়।  অনেকে কোন রিভিউ লেখেন না, কিন্তু ৫ ষ্টার দেয়া থাকে।  এটির সম্ভাব্য কারণ হয়তো সাইট বা এপে ৫ ষ্টার সেট করাই থাকে, রিভিউয়ার হয়তো সেটি প্রয়োজন অনুযায়ী কমান না।  ৩ ষ্টার সেট করা থাকলে হয়তো সব রিভিউ’তে এটাই পাওয়া যেতো। 

বাংলাদেশের ইকমার্স সেক্টরটি আরো বেগবান হয়ে উঠুক, সরই সাথে সর্বোচ্চ প্রফেশনাল এই কামনাই করি।  জ্যামের এই শহরে ৩-৫ ঘন্টা রাস্তায় কাটিয়ে কেনাকাটা করার চাইতে ২৫-১৫০ টাকা শিপিং দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা অনেক বেশী সাচ্ছন্দের।  ইকমার্স সাইট বা মার্কেটপ্লেস গুলি যদি তাদের সেলারদের ব্যাপারে সর্তক এবং কঠোর হয় তাহলে আমরা ক্রেতা সাধারণ অনেক আস্থার সাথেই কেনাকাটা করতে পারি।  সেই সাথে সহজ রিটার্ণ এবং রিফান্ড পলিসি থাকলে আস্থার পরিমান আরো বাড়বে।  এতো কিছুর পরও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তো থাকছেই। 

ভাল থাকবেন। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।