একুয়া কার্ড

বাংলাদেশ থেকে বিদেশী কোন ইকমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা, ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনে অংশগ্রহন কিংবা প্রয়োজনীয় কোন বই বা সফটওয়্যার সংগ্রহ করতে গেলে প্রথম সমস্যা হলো টাকা পাঠাবো কিভাবে। কোন এক কালে বন্ধুরা যখন বিদেশে যাওয়ার জন্য দৌড়-ঝাঁপ দিচ্ছিলো তখন তাদের সাথে থেকে বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম। ২০/৩০ ডলারের এপ্লিকেশন ফি দিতে গেলেও নানা ঘাটে ঘুরে তারপর পারমিশন বের করে সেই পরিমাণ ডলার এর ব্যাংক ড্রাফট / পে অর্ডার পাওয়া যেতো। অবশ্য সেই ব্যাংকে মালদার কোন আমানতকারী পরিচিত থাকলে বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যেতো। তখন তারাই নিজেরাই উপযাচক হয়ে কাজ করে দিতো আর উপদেশ বর্ষণ করতো এই মরার দেশে থেকে কি করবেন।

যাই হোক, মোদ্দা কথা হলো বিদেশে টাকা পাঠানো খূব একটা সহজ কাজ না। ইদানিং দেশে ইকমার্স চালু হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের কার্ড ব্যবহার করে সহজেই কেনা কাটা করা যায়। আবার ক্যাংশ অন ডেলিভারী নামক অসাধারণ একটা সিষ্টেমও তারা উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে টাকা ছাড়াই অর্ডার করা যায়, ক্রেতা জিনিস বুঝে পেয়ে হাতে হাতে টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বিদেশে কোন প্রয়োজনে ডলার খরচ করতে হলে এখনও সেই প্রতিবন্ধকতা আছেই। তবে যারা বড় মাপের আমানতকারী এবং নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন তাদের জন্য সূযোগ-সূবিধা কিছুটা বেড়েছে। সমস্যা হলো আমার মতো আম-জনতাকে নিয়ে। মাত্র ৫ ডলার খরচ করতে চাইলেও খাবি খেতে হয়।

ইদানিং কয়েকটি ব্যাংক ডুয়াল কারেন্সি প্রি-পেইড ডেবিট কার্ড বের করায় সূবিধা হয়েছে আমার মতো সাধারণ ভোক্তাদের। এখন মোটামুটি সহজেই এইসব কার্ডের মাধ্যমে টাকা এবং ডলারে লেনদেন করা যাচ্ছে। এরকমই একটি কার্ড হচ্ছে ইষ্টার্ণ ব্যাংক ধিমিটেডের একুয়া ডুয়াল কারেন্সি প্রিপেইড কার্ড। এর জন্য ব্যাংকে কোন একাউন্ট থাকার দরকার নেই।আপনি যে পরিমান টাকা জমা করবেন, সেই পরিমান টাকাই ব্যবহার করতে পারবেন।

কার্ড করতে যা যা লাগবে :
১. ১ কপি ছবি
২. NID এর ফটোকপি (অরিজিনাল কপি দেখতে চাইতে পারে, সাথে রাখবেন)
৩. পাসপোর্ট (ডলার এন্ডোর্সের সময় লাগবে)
৪. ৫৭৫ টাকা (৩ বছরের জন্য

ইষ্টার্ণ ব্যাংক লিমিটিডের যে কোন শাখায় গিয়ে বললেই হবে আপনি একুয়া কার্ড নিতে চান । তাদের দেয়া ফর্ম ফিলাপ করে দিলে ছবি এবং ন্যাশনাল আইডি এর ফটোকপি এটাচ করে নগদ ৫৭৫ টাকা জমা দিতে হবে। তাদের প্রি-প্রিন্টেড কিছু কার্ড আছে, সেগুলো নিলে সাথে সাথেই কার্ড পেয়ে যাবেন। নিজের নাম প্রিন্ট করে নিতে চাইলে ৭-১০ দিন সময় লাগবে। কার্ড তৈরী হলে আপনার দেয়া মোবাইল নাম্বারে মেসেজ আসবে। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় গিয়ে কার্ড এবং পিন সংগ্রহ করতে হবে।

এরপর ? কার্ড এবং পিন হাতে পেলে পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্স করতে হবে। সার্ক ভুক্ত দেশের জন্য বছরে ৭ হাজার ডলার এবং বাকি সব দেশের জন্য ৫ হাজার ডলার এন্ডোর্স করতে পারবেন প্রতি বছর। আপনি যে পরিমাণ ডলার এন্ডোর্স করেন না কেন, কার্ডে আপনার সূবিধা মতো ডলার লোড করতে পারবেন। বছর শেষে অথবা এন্ডোর্স করা ডলারের বেশী লাগলে আবার এন্ডোর্স করতে হবে। ডলার এন্ডোর্স করার পর ব্যাংকের নিধারিত ফর্ম ফিলাপ করে টাকা জমা দিতে হবে। ডলার চাইলে ফর্মে ডলারের ঘরে পরিমাণ লিখবেন টাকায়। সেদিনের এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী ডলার পাবেন। একই ভাবে টাকাও লোড করতে পারেন। যা দিয়ে আপনি লোকাল ইকমার্স সাইট অথবা দোকান থেকে কেনাকাটা, বিল পরিশোধ ইত্যাদি করে পারবেন। এটিএম থেকে টাকাও তুলতে পারবেন।

ইষ্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড এর ইবিএল ষ্কাই ব্যাংকিং নামে একটা এপ আছে। যে কোন এন্ড্রয়েড ফোনে ইন্সষ্টল করে আপনার কার্ড এড করে নিলে ট্র্যানজ্যাকশন এবং ব্যালান্স চেক করতে পারবেন।

নোটস ১ : আমার ক্ষেত্রে নমিনি এবং তার জন্মতারিখ দিতে হয়েছে।
নোটস ২ : কার্ড হাতে পাওয়া / ডলার এন্ডোর্স করা এবং ডলার লোড করার পর সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা সময় লাগতে পারে একটিভ হতে। না হলে আপনি এপ থেকে অথবা ১৬২৩০ নাম্বারে কল দিয়ে অনুরোধ করতে পারেন।
নোটস ৩ : পিন নাম্বার খূবই গুরুত্বপূর্ণ। আপাত দৃষ্টিতে এর তেমন কোন ব্যবহার না থাকলেও যথাযথ গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করুন। এটিএম এ টাকা তুলতে এবং POS এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে এই পিন নাম্বার লাগে।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।