এসডিআর (২)

গত পোষ্টে লিখেছিলাম আরটিএল-এসডিআর ডঙ্গল কিনতে চাইলে আমার পরবর্তী পোষ্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। আজ সেই পোষ্ট দেয়ার দিন। নিজে ডঙ্গল কিনে পরীক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই সেটা ভাল। অনেক কিছু জানতে এবং শিখতে পারবেন। কিছু জানতে-শিখতে চাইলে হাতে কলমে কাজ করার কোন বিকল্প নাই। তবে আপনি যদি শুধূ একজন রেডিও শ্রোতা হয়ে থাকেন এবং মাঝে মধ্যে হঠাৎ এক আধবার রেডিও শুনে থাকেন, তাহলে টাকা খরচ করে এই জিনিস কেনার দরকার নেই। আপনি বিকল্প পদ্ধতিতে আরটিএল-এসডিআর এর সূবিধা ব্যবহার করে শর্টওয়েভ / এফএম কিংবা হ্যাম ব্যান্ডগুলি নিয়মিত শুনতে পারবেন।

আরটিএল-এসডিআর কিনলে আপনার অবশ্যই একটি ভাল এন্টেনা থাকতে হবে এবং সেটা খোলা জায়গায় উচুতে স্থাপন করতে হবে। ঢাকা শহরে আমরা যারা থাকি তাদের জন্য এই ‘খো্লা জায়গা আর উচুতে’ কোন কিছু স্থাপন করা বাস্তবিকই কঠিন কাজ। তবে এলাকা ভেদে হয়তো উনিশ-বিশ আছে। আমি যেমন থাকি দোতালায়, বিল্ডিং হলো ৪ তলা, তিনদিক ৬ তলা বিল্ডিং দিয়ে ঘেরা। সামনে রাস্তার ওপারে আবার ৬ তলা বিল্ডিং এর সারি। বারান্দায় তার টানানো ছাড়া গতি নাই আর সেটাও সীমিত আকারে। ভাল এন্টেনা (সাধারণ লম্বা তার খোলা উচু জায়গায় টানানো হলেও চলে) ছাড়া এই ডঙ্গলে রিসেপশন খূব ভাল না। আর ঘরের ভিতর / বারান্দায় তার টানালে নয়েজ অনেক বেশী হয়।। সবচেয়ে বেশী নয়েজ মনে হয় আসে পিসি বা ল্যাপটপ থেকে, এরপর আইপিএস / ইউপিএস থেকে। সুতরাং এই ডঙ্গল নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা খূব একটা সূখকর না। এফএম ষ্টেশনগুলিও সব টিউন করতে পারি নাই। এয়ার ব্যান্ডেও কিছু শুনতে পারি নাই। তাই কালে ভদ্রে রেডিও শুনে থাকলে এই আরটিএল-এসডিআর আপনার না কেনাই ভাল।

তাহলে কি করা যায় !?! পৃথিবীর অনেক দেশেই অসাধারণ কিছু মানুষ তাদের এসডিআর সেটআপ অন্যদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন ইন্টারনেটে। জ্বি, আপনার নেট কানেকশন থাকলে আপনি যে কোন ব্রাউজার ব্যবহার করে তাদের সেই এসডিআর এক্সেস করে নিয়মিত অনুষ্ঠান শুনতে পারবেন। এমন সব রেডিও ষ্টেশনও শুনবেন যেগুলি এদেশ থেকে শোনার কল্পনাও করতে পারতেন না।

Global Tuner

এরকম একটি সাইট হলো গ্লোবাল টিউনার। এখানে আপনাকে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। তবে কিছু রেডিও এবং সার্ভিস আছে প্রিমিয়াম, যেমন রেকর্ড করতে চাইলে আপনাকে টাকা দিয়ে মেম্বার হতে হবে। মোটামুটি ৪০/৪৫টি রেডিও অনলাইনে থাকে। মেনু থেকে Available অপশনটি সিলেক্ট করলে সেই মুহুর্তে অনলাইনে থাকা রেডিও গুলির লিষ্ট দেখাবে। রেডিও’র নাম (সাধারণত শহরের নাম) এ ক্লিক করলে পরবর্তী স্ক্রিণে কিছু তথ্য দিবে। Open this radio তে ক্লিক করলে রেডিও’র ইন্টারফেসটি পাবেন। সাধারণত নির্দিষ্ট একটি ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন করাই থাকে। প্লে বাটনে ক্লিক করলে অডিও শুনতে পারবেন। পাশে ফ্রিকোয়েন্সী ইনপুট দিতে পারবেন অথবা < বা > বাটন চেপে আপডাউন করতে পারবেন।

এরকম আরো কিছু সাইট আছে। যেমন
ওয়েবএসডিআর.ওআরজি
এসডিআর.এইচইউ

আমেরিকার আইডাহো তে একটি এসডিআর রেডিও’র রেকর্ডিং এটি। ক্রমাগত নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে যে অংশটুকু তাকে বলে ওয়াটারফলস। নীল ব্যাকগ্রাউন্ডে লাল/হলুদ/সবুজ যে লাইনগুলো নেমে যাচ্ছে সেগুলো এক একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নির্দেশ করে। আপনি কার্সর কোন একটি লাইনের উপর নিয়ে ক্লিক করলে সেই ফ্রিকোয়েন্সীতে টিউন হবে। পাশের ইন্টারফেসে ফ্রিকোয়েন্সি লিখে এন্টার চাপলেও টিউন হবে। এখান থেকে আরো বিভিন্ন প্যারামিটাv পরিবর্তন করতে পারবেন।

তো আর দেরী কেন – শুরু করে দিন রেডিও শোনা।

ভাল থাকুন।



 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।