ওজন এবং অন্যান্য

ওজন আর টিজি (ট্রাই গ্লিসারাইড) নিয়ে ব্যাপক সমস্যায় আছি। ওজন এই সপ্তাহে বাড়ে তো পরের সপ্তাহে কমে। এর পরের সপ্তাহে হয়তো আবার একটু বাড়ে। গত কয়েকমাস ধরে এই একই চক্র চলতেছে।

আব্বা মারা যাওয়ার পর চিন্তা করলাম কিছু টেষ্ট করা দরকার। আব্বা-আম্মা দু’জনেরই ডায়বেটিস ছিলো, তাদের সন্তান হিসেবে আমার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। এর মধ্যে বোনেরও হয়েছে। আর ডায়বেটিস থাকলে অন্য শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। আর শেষ বয়েসে কি অবস্থা হয় সেটা তো আব্বা আম্মাকে দেখেই শিখলাম।

ইচ্ছে ছিলো টেষ্ট করে ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন সাহেব কে দেখাবো। উনি আব্বা’কে দেখতেন। অত্যন্ত অমায়িক ভদ্রলোক। সময় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু প্রথমবার টেষ্ট করার পর চিনআ করলাম আগে নিজের মতো করে চেষ্টা করি। যদি একেবারেই কাজ না হয় তো ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া যাবে। 

ডিসেম্বর ৩১, ২০২২ তারিখে প্রথম টেষ্টে HbA1c তে সুগার আসলো ৮%, এটা ৩ মাসের গড়। বেশীই বলা চলে। স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৬% এর কম। হিমোগ্লোবিন ১৬.৭ g/dl, এটা ঠিক আছে। পূর্ণ বয়স্ক পূুরুষদের  ক্ষেত্রে ১৫, +/-২ রেফারেন্স ভ্যালু ধরা হয়। টিজি ছিলো ৮০০, রেফারেন্স ভ্যালু হলো ৫০-২০০, মানে ব্যাপক বেশী।

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ তারিখে ওজন ছিলো ৮৩.১ কেজি। এরপর শুরু হলো ব্যাপক হাটাহাটি আর খাবারে কাটছাট। টিজি সাধারণত ভাত খাওয়ার উপর অনেকটা নির্ভর করে। ভাত খাওয়া কমাবেন, টিজি কমবে। আবার ভাত খাওয়া বাড়াবেন টিজি বাড়বে। অতএব রাতে ভাত খাওয়া বন্ধ করলাম। অন্যান্য খাবারও কমানো চেষ্টা করলাম। যেমন মিষ্টি জাতীয় খাবার। 

দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করলাম মার্চ ৩১, ২০২৩ এ। HbA1c পরীক্ষায় সুগার আসলো ৫.৬%, মানে আমার হাটাহাটি এবং রাতের ভাত বাদ দেয়ার সুফল কিছু হলেও পাওয়া গেলো। হিমোগ্লোবিন ১৬.৬ g/dl, আগের মতোই বলা চলে। আর টিজি কমে আসলো ২৫২ mg/dl, যা স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে বেশী। 

৩১শে মার্চ, ২০২৩ তারিখে ওজন ৭৯.১ কেজি। ৩ মাসে ৪ কেজি ওজন কমেছে এটা ভালই বলা চলে।

দ্বিতীয় পরীক্ষার পর থেকে দুপুরের  ভাতও বাদ দিলাম। কিন্তু রোজা শুরু হওয়ার পর সেটা আর ধরে রাখা গেলো না। ইফতারি কম করার চেষ্টা করলাম। প্রথম কয়েক রোজা ইফতারীর পর একবারে সেহরী। ইফতারীর পর আধ ঘন্টা হাটাহাটিও করলাম। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পর থেকে হাটাহাটি বন্ধ, ইফতারীর পর খিচুরি / পোলাও টাইপের কিছু খাওয়া শুরু হলো। রোজা শেষ হওয়ার পরও হাটাহাটি সেভাবে করতে পারলাম না, কারণ গরম। এখন চলছে সেই রকম গরম।। ফ্যানের নিচে বসে থাকলেও ঘাম হয়। ফলাফল দেখা গেলো তৃতীয় পরীক্ষায়।

১লা জুন, ২০২৩ তারিখে তৃতীয়বার পরীক্ষা করলাম। HbA1c তে সুগার আসলো ৬.৫%, মানে আবার বেড়েছে। হিমোগ্লোবিন ১৬.৩ g/dl, যদিও রেঞ্জের মধ্যে আছে তারপরও দশমিকের পরের সংখ্যা কমতেছে কেন জানা দরকার। আর টিজি !?! সেটা বেড়ে ৩৯৫ mg/dl হয়েছে। 

আর ওজন মাপলাম আজ (২রা জুন, ২০২৩)। ৭৮.২৫ কেজি, ৩ মাস আগের ওজন থেকে কম ঠিকই। কিন্তু প্রতি সপ্তাহের ওজনের গ্রাফ দেখলে পুরা ঢেউ খেলতেছে মনে হয়।

পরবর্তী ৩ মাসে কি হবে জানি না। কারণ এখনও প্রচন্ড গরম। হাটাহাটি করতে কষ্ট হয়। এমনিতেই প্রচুর ঘাম হচ্ছে। হাটলে মনে হয় ঝরণা বইছে। আপাতত খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ আর ঘরে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করছি। 

দেখা যাক কি হয়। ভাল থাকুন।

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।