করোনা কাল ৭

অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে মনে হয়। আজও দুইশতাধিক করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। কোন কোন জায়গার অবস্থা বেশ খারাপই মনে হচ্ছে। যেমন নারায়নগঞ্জ। মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি কারফিউ জারি করার জোর দাবী জানানোর পর নারায়নগঞ্জ শহর লকডাউন করা হয়েছে। তারপরও শোনা যাচ্ছে নারায়নগঞ্জ থেকে লোকজন আসছে এবং যাচ্ছে। সাম্প্রতিক খবর হলো উত্তরবঙ্গে যে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে, সে নারায়নগঞ্জ থেকে গিয়েছে। আজ ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিষ্টের একজনোে ষ্ট্যাটাস এর অংশ বিশেষ “নারায়নগঞ্জে আব্বার বাসার ঠিক পাশের বিল্ডিংয়ে আজ একজন মারা গেলেন। কিছুদিন যাবত তার জ্বর এবং কাশি ছিলো। কিন্তু তার বাসার লোকজন বলছে সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিলো। কোনো অবস্থায় তারা করোনা টেস্ট করতে রাজি না।” এখন সেই পরিবারের লোকজন হয়তো মনে করছে ভদ্রলোক বেচারা তো মারাই গেছেন আর এসব করে কি হবে। অথচ সেই মৃত ব্যক্তির কারণে তারা নিজেরা, প্রতিবেশীরা এবং সর্বোপরি যেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই এখন একধরণের ঝুঁকিতে রয়েছেন। পরীক্ষা না করিয়ে দাফন করে ফেললে জানা যাবে না ভদ্রলোক করোনা আক্রান্ত ছিলেন কিনা, সেই সাথে অন্যান্যরাও তার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন কিনা। একজন প্রখ্যাত মুফতি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সম্প্রতি। হাসপাতাল থেকে জানাজা পর্যন্ত সর্বত্রই তথ্য গোপন করেছেন তিনি এবং তার পরিবার। তথ্য গোপন করা আর মিথ্যা বলার মধ্যে আদতে তেমন কোন পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। অথচ এদের কথায় হাজার হাজার লোক আজও ধর্মান্ধ হয়ে আছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে, করোনা চড়াচ্ছে।

সরকার অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই। কিন্তু যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো কিছু লোকের জন্য ঠিকমতো কার্যকর করা যাচ্ছে না। যেমন – মসজিদে নামাজ না পড়ে ঘরে পড়ার জন্য বলার পর দেখা গেলো লোকজন আরো বেশী সংখ্যায় মসজিদে গিয়ে ভিড় করছে। তারপর ঘোষনা দেয়া হলো প্রতি ওয়াক্তে ৫জন এবং জুমার নামাজে ১০ জন নিয়ে জামাত করতে হবে, এর বেশী লোক হতে পারবে না। একদল তারপরও জামাতে নামাজ পড়ার জন্য সদলবলে উপস্থিত হলো। আর ৫/১০ জনের জামাতের ছবি / সংবাদ সংগ্রহের জন্য ১৫/২০ জন সংবাদ কর্মী কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে জড়ো হলেন। আবার আরেক দল মসজিদে নামাজ পড়তে না পড়ে বিভিন্ন আবাসিক বাসার ছাদে জামাতের ব্যবস্থা করলেন। সরকারের ঘোষণার বারোটা বাজালেন এভাবেই। অথচ করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ার জন্য তাদে্র খূঁজে পাওয়া যায় না।

একবার কেবল চিন্তা করেন আপনার করোনা হয়েছে সেটি লুকিয়ে ফায়দা আসলে কি ? আপনি একাই হয়তো আরো ১০-১৫ জন ব্যক্তিকে সংক্রমিত করছেন। তার মধ্যে হয়তো চিকিৎসক, নার্স সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও আছে। এখন আপনার দ্বারা একজন ডাক্তার বা অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী যখন সংক্রমিত হচ্ছেন এবং সেটি জানার পরই কিন্তু সংশ্লিষ্ট সবাই’কে কোয়ারান্টাইনে যেতে হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি লকডাউন করা হচ্ছে। তারমানে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এমনিতেই আমাদের চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব আছে। এভাবে এক এর পর এক ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি আক্রান্ত হন, হাসপাতাল / ক্লিনিক লকডাউন করতে হয় তাহলে তো শেষ পর্যন্ত সাধারণ চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থাও নষ্ট হয়ে যাবে।

কিছু লোক তো শুরু থেকেই এখানে করোনা চিকিৎসা করা যাবে না, ওখানে করোনা হাসপাতাল তৈরী করা যাবে না – এসব বলে মোটামুটি ৩টি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কার লাভ হলো, কার ক্ষতি হলো সেটি হয়তো কেউ ই ভেবে দেখেন নাই।

এখনও যদি কেউ মনে করেন করোনা তো বাংলাদেশে এখনও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে নাই, তাহলে বড় রকমের ভুল করবেন। যতদিন যাচ্ছে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। খূব সহজেই এই মহামারি থামবে না।

তাই ঘরে থাকুন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। বাইরে গেলে মাস্ক এবং প্রয়োজনে গ্লাভস পরে যান। ফিরে এসে এবং ঘরে থাকার সময়ও নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে থাকুন।

শুভ কামনা।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।