ক্যান্সার

আমার দেখা প্রথম ক্যান্সার রোগী ছিলো প্রাপ্তি। সেসময় ৫ বছর বয়স ছিলো ওর। হয়েছিলো ব্লাড ক্যান্সার। সে সময় সামহোয়্যার ইন ব্লগারবৃন্দ প্রাপ্তির জন্য ক্যাম্পেইন করেছিলো তার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করার জন্য। গতবছর প্রাপ্তির ফুফু সারিয়া তাসনিম’কে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রাপ্তির কথা। সে এখন পুরো সুস্থ্য। পড়াশোনা করছে। সারিয়ার কাছ থেকেই শুনেছিলাম সেই অল্প বয়েসেই মেয়েটাকে কেমো থেরাপীর মতো কষ্টকর চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো। তবে সব ভাল যার শেষ ভাল, মেয়ে এখন সুস্থ্য।

তবে সবার ক্ষেত্রে হয়তো এই শেষটা ভাল হয় না। তার অন্যতম প্রধান কারণ সময় মতো এই রোগ ধরা না পরা। আমার দেখা দ্বিতীয় ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছিলো। আমার এক বন্ধুর মা, পেটে ব্যথা হলে হোমিওপ্যাথি ঔষধ খেতেন। ব্যথা নাই তো চিন্তাও নাই। একসময় ব্যথা অসহ্য হয়ে উঠলে সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তার, সেখান থেকে স্পেশালিষ্ট ডাক্তার। ধরা পড়লো কোলন ক্যান্সার। তখন আর তেমন কিছু করার ছিলো না। ক্যান্সার অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে। প্রবাসী ছেলে চিকিৎসার কোন ত্রুটি করে নাই। কিন্তু শেষটা আর ভাল হয় নাই।

তৃতীয় ক্যান্সার রোগী ছিলেন আমার একমাত্র দুলাভাই এর মেঝ বোন। পর্দানশীল মহিলা, তিনিও শুরুতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। সার্জারির পর ২/৩ বছর ভালই ছিলেন। এরপর আবার ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করে। কেমোথেরাপি দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর কিছুই করা যায় নি।

সাম্প্রতিক কালে এক ভাগ্নে (দুলাভাই এর বোনের ছেলে) ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করছে। এই ভাগ্নেও হোমিওপ্যাথির ভক্ত। অবস্থা খারাপ হলে ভারতে গিয়েছিলো। সেখানকার ডাক্তাররা কিছুই করতে পারে নাই (বলা ভাল করার কিছু ছিলো না)। ঢাকার স্পেশালিষ্ট ডাক্তার ছেলের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সার্জারী করা সম্ভব নয় জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি কেমোথেরাপিও দেয়া সম্ভব নয়। পরে অবশ্য ওরাল কেমো দেয়া হয়েছিলো। কিছুদিন অপেক্ষাকৃত ভাল ছিলো। এরপর থেকে ভাল খারাপের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। আজ সকালে উঠেই শুনি তাকে আইসিইউ এ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে তো এই রোগ ধরা পরে অনেক দেরীতে। ডাক্তারের কাছে যেতে রোগীর অনীহা একটি বড় কারণ। ঔষধের দোকানে গিয়ে দোকানদারের পরামর্শমত ঔষধ কিনে খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরেই আছে। সেই সাথে চিকিৎসা ব্যয় দিন দিন যে ভাবে বাড়ছে এবং কিছু কিছু ডাক্তার যেভাবে ঢালাও টেষ্টের ব্যবস্থাপত্র দেন তাতে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার চাইতে দোকান থেকে ঔষধ কিনে খাওয়া বা হোমিওপ্যাথি / কবিরাজি চিকিৎসায় আস্থা স্থাপন করা অনেকের কাছেই শ্রেয়তর মনে হয়। ফলে ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধি সময় মতো ধরা পরে না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। আর ক্যান্সারের চিকিৎসা !?! ঘটি-বাটি সহ সব কিছু বিক্রি করে দিলেও হয়তো শেষ রক্ষা হয় না।

ক্যান্সার চিকিৎসার এই বিপুল ব্যয়ের জন্যও অনেকে নানা ধরণের চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে হোমিওপ্যাথি / কবিরাজি সহ নানা কিছুতে আকৃষ্ট হচ্ছেন। সারা পৃথিবীতেই যখন এই রোগ চিকিৎসায় ডাক্তাররা খাবি খাচ্ছেন বলা চলে, সেখানে এদেশে অনেকেই দাবি করেন তারা ক্যান্সার ভাল করে দিতে পারবেন। অথচ তাদের কেউ নোবেল প্রাইজ দেয় না। 

ছোটবেলায় এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো চোখের ছানি চিকিৎসার জন্য। তিনি ঔষধ দিয়ে বলেছিলেন নিয়মিত ঔষধ খেলে আমার চোখের ছানি গলে যাবে। ষ্টকহোমের এক ডাক্তার আমার এই কাহিনী শুনে হাসতে হাসতে বলেছিলো যে ঔষধ খেলে চোখের ছানি গলে যায়, সেটা যে পুরো চোখ গলিয়ে ফেলবে না তার নিশ্চয়তা কি।

সব কথার শেষ কথা – কোন রোগ’কেই হেলাফেলা করা ঠিক না। আমরা হয়তো অর্থনৈতিক কারণে অনেক সময়ই অনেক কিছুই এড়িয়ে যাই। কিন্তু সেটাই হয়তো পরে বড় ধরণের অর্থনৈতিক ধ্বস তৈরী করে দিতে পারে যে কারো জীবনে।

ভাল থাকুন।

Featured Image : Sara Bakhshi

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।