জন্ডিস

সে অনেক কাল আগের কথা। এক পরিচিত ভদ্রলোক এক সিকিউরিটি কোম্পানি খুলেছেন, মানে বাসা-বাড়ী এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ করেন। লোকজন সব তার নিজের এলাকা মানে ময়মনসিংহের এক উপজেলা থেকে আনা। রামপুরায় এক বাসা ভাড়া করে সে সব গার্ড থাকে। নিজেরাই রান্না করে খায় আবার সময় মতো ডিউটিতে চলে যায়। গার্ড সবই বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। ৩ বেলা শিফটিং ডিউটি। কোন কোনটায় ২ বেলা, সাথে কিছু সময় ওভার টাইম। 

কিছুদিন পর শুনলাম তার কোম্পানির গার্ডদের ঢাকার পানি নাকি সহ্য হচ্ছে না। গণহারে সব পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে অবস্থা আরো খারাপ। বেশ কয়েকজন জন্ডিসে আক্রান্ত হলো। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো ডিউটি নিয়ে। রোষ্টার ডিউটি ঠিক রাখা যাচ্ছিল না এই অসুস্থ্যতার কারণে। পেটের পীড়ায় তাও ঔষধপত্র দেয়া যায়, কিন্তু জন্ডিসের কোন চিকিৎসা নাই। একমাত্র চিকিৎসা হলো পরিপূর্ণ বিশ্রাম। নতুন কোম্পানির পক্ষে দিনের পর দিন এসব গার্ডদের বসিয়ে খাওয়ানোও কষ্টকর। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো যারা বাড়ীতে যেতে চায় যেতে পারে, সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে আবার চাকরি করতে পারবে। দেখা গেলো জন্ডিস আক্রান্তরা সবাই যেতে আগ্রহী। ঢাকা শহরে জন্ডিসের চিকিৎসা না থাকলেও তাদের এলাকায় নাকি এর অব্যর্থ চিকিৎসা আছে। 

কিছুদিন পর শুনলাম যারা বাড়ীতে গিয়েছিলো তারা প্রায় সবাই সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসেছে। আমার খুব জানতে আগ্রহ হলো কি এমন চিকিৎসা গ্রাম-দেশে আছে, অথচ ঢাকা শহরে নাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম চিকিৎসা বলতে কবিরাজ একটা মালা তৈরী করে ফুল-লতা-পাতা দিয়ে। তারপর সেটা বসিয়ে দেয় মাথায় উপর। আমার ঠিক মনে নেই ১৫ কিংবা ২০ দিন মালা মাথার উপর রাখতে হয়। মালা আস্তে আসতে শুকায়, সাইজে বড় হয় এবং মাথা বেয়ে নিচে নামতে থাকে। একসময় সেটা পুরোপুরি গলায় নেমে আসে। মানে রোগীর জন্ডিস ভাল হয়ে গেছে।  

এই পদ্ধতির উপর ওদের এতো বিশ্বাস যে ভিন্ন কিছু বলা মুশকিল। তবে অনেকের সাথে আলাপ করে যা মনে হয়েছে সেটা হলো জন্ডিসের যে প্রধান চিকিৎসা মানে পরিপূর্ণ বিশ্রাম সেটাকেই এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। রোগী কোন পরিশ্রমের কাজ করতে পারবে না, গুরুপাক খাবার খেতে পারবে না এসবই কবিরাজ সাহেব বলে দেন। পরিপূর্ণ বিশ্রামে জন্ডিস ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যায়, মাথার মালাও শুকিয়ে বড় হয় এবং একসময় গলায় নেমে আসে। 

কবিরাজের কেরামতি বাড়ে। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।