টেকসান পিএল-৩১০ইটি

ছোট বেলায় কয়েকটি পকেট রেডিও ছিলো, বিভিন্ন সময়ে। তবে সেসময় আসলে রেডিও’র মজা তেমন বোঝার বয়স ছিলো না। সত্যিকার অর্থে রেডিও শোনা শুরু হয় ১৯৭৮/৭৯ সাল থেকে, স্যানিও’র একটা টু-ইন-ওয়ান দিয়ে। টু-ইন-ওয়ান এর ক্যাসেট পার্ট নষ্ট ছিলো বলে কেউ খূব একটা ব্যবহার করতো না। একসময় এটি পুরোপুরোই আমার নিজের সম্পত্তি হয়ে যায়। আমি এটি ব্যবহার করেছি মোটামুটি ৮০’ দশকের শেষ পর্যন্ত। ১৯৮৯ সালে কয়েক মাসের জন্য ষ্টকহোম, সুইডেনে যাওয়ার সূযোগ হয়। যাওয়ার আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম একটি ডিজিটাল রেডিও কিনতে হবে। নিজের টাকায় প্রথম রেডিও কিনি ফিলিপস ডি-২৯৩৫, যেটি ঢাকায় পৌছায় ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি। আমরা তখন থাকি মোহাম্মদপুর বাবর রোডে। ছাদে একটা বাঁশ দিয়ে ইনভার্টেড ভি আকৃতির একটা এন্টেনা দিয়ে শুরু হয় আমার ডিএক্সইং। তখন শর্টওয়েভ এ প্রচুর ষ্টেশন। মাঝে মধ্যে রাত জেগেও রেডিও ষ্টেশন খূঁজতাম। ফলশ্রুতিতে রেডিও ব্রাস (ব্রাজিল), সুপার রক কেওয়াইওওয়াই (সাইপান), টাইম সিগনাল (হাওয়াই) এর মতো (এই এলাকায়) কিছু দূর্লভ ষ্টেশন শুনতে পেরেছিলাম। এগুলো থেকে কিউএসএল কার্ড ও পেয়েছিলাম

এই ফিলিপস রেডিও সচল ছিলো ২০০৫/৬ পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে নষ্ঠ হতে থাকে। কয়েক বছর আগে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়। এর মাঝে অবশ্য রেডিও শোনায় ভাটা পড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে। কয়েক বছর আগে আবার মনে হতে হতে থাকে রেডিও আসলে একটা দরকর। যদিও তখন ইন্টারনেটে অনেক ষ্টেশনই পাওয়া যায়, শর্টওয়েভের সাথে তুলনা করলে প্রচার মান অনেকটা এফএম এর মতোই। তারপরও রেডিও’তে রেডিও শোনার মজা অন্যরকম। অবশেষে ব্যাকপ্যাক এর মাধ্যমে আমাজন থেকে অর্ডার করি টেকসান পিএল-৩১০ইটি। সাইজে আমার আগের ফিলিপস রেডিও থেকে বেশ ছোট হলেও কাজে বেশ ভালই। নিচে এই রেডিও’র স্পেসিফিকেশন দিলাম।

Radio

TECSUN PL310ET PLL DSP PORTABLE MULTIBAND (FM-stereo via earphones / MW / LW / SW) RADIO RECEIVER

FM: 64-108 MHz
LW: 153-513 kHz
MW (AM): 520-1710 kHz
SW: 2300-21950 kHz

550 station memories
Multi-tuning methods:
– Auto tuning storage (ATS) for FM / MW / LW / SW
– Auto-scan tuning with 3 seconds pre-listening for both frequency & memory
– Manual tuning
– Direct keypad frequency entry
– Easy tuning mode (ETM)
Selectable FM Frequency
Sleep timer from 1-120 minutes
Alarm clock function, alarm stopper within 1-90 minutes
Clock, temperature & battery consumption display
Backlight and snooze function
9K/10K tuning step for MW
Keylock function
Built-in rechargeable function via USB jack (5V)
USB DC jack (5V)
Power sources: 3 x UM3 (AA size) batteries or DC 5V adaptor
Weight: Approx. 190g
Size: 141 x 87 x 30 mm

রেডিও হাতে আসার পর টুকটাক ব্যবহার শুরু করলাম। সমস্যা হলো ৮০/৯০ দশকের মতো রেডিও ষ্টেশন আর নাই। শর্টওয়েভের অনেক ষ্টেশনই বন্ধ হয়ে গেছে। রেডিও মস্কো, রেডিও নেদারল্যান্ড, রেডিও অষ্ট্রেলিয়ার মতো ষ্টেশন গুলি সব বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এফএম ষ্টেশন পাওয়া গেলো বেশ কিছু, আগে যেখানে কোন এফএম ষ্টেশনই ছিলো না বাংলাদেশে।

এই রেডিও’র ফিচারগুলির মধ্যে ভাল লাগে
১. বড় ডিজিটাল ডিসপ্লে, যেখানে ফ্রিকোয়েন্সীর পাশাপাশি সিগনাল ষ্ট্রেন্থ, সময়, তাপমাত্রা ইত্যাদি দেখা যায়। সাথে LED সাইড লাইট আছে
২. স্লিপ টাইমার এবং এলার্ম আছে।
৩. বিভিন্ন ভাবে টিউন করা যায়। রোটারি ডায়াল ঘুরিয়ে, সরাসরি কিপ্যাড থেকে ফ্রিকোয়েন্সী ইনপুট দিয়ে এবং মেমোরি থেকে
৪. প্রতিটি ব্যান্ডেই স্ক্যান করা যায়, স্ক্যান করে সরাসরি মেমোরিতে ষ্টোর হয়ে যায়
৫. শর্টওয়েভ / মিডিয়াম ওয়েভে ব্যান্ডওয়াইথ কন্ট্রোল আছে ৬,৪,৩,২,১ কিলোহার্টজ। নয়েজ এবং পাশের ফ্রিকোয়েন্সী থেকে আসা ইন্টারফারেন্স অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়
৬. NiMH ব্যাটারী সেটেই রিচার্জ করা যায়। ব্যাটারী না থাকলে ৫ ভোল্টের মোবাইল চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে সরাসরি শোনা যায়
৭. এফএম এবং শর্টওয়েভ এর জন্য আলাদা এন্টেনা জ্যাক

তবে এই সেটে কোন এসএসবি নাই। ফলে এমেচার রেডিও বা ইউটিলিটি ষ্টেশন শোনা যায় না। আমার কাছে এন্টেনা জ্যাকটি বেশ কাজের মনে হয়েছে। লম্বা একটি তার বাইরে টানিয়ে সরাসরি সেটে সংযোগ দেয়া যায়। এতে এফএম এবং শর্টওয়েভ রিসেপশন আরো ভাল হয়।

আমি এই রেডিও’টি হাতে পেয়েছিলাম ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে। গত ৫ বছরে আরো বেশ কিছু ভাল রেডিও বাজারে এসেছে। যারা নতুন রেডিও কিনতে আগ্রহী তারা বাজেট আরেকটু বাড়িয়ে টেকসান পিএল-৩৩০ নিয়ে নিতে পারেন। পিএল-৩৩০ আরো অনেক ভাল এবং ফিচার সমৃদ্ধ। সাথে এসএসবি এবং সিংক অপশন তো থাকছেই। আর বাজেট কম থাকলে এটিও নিতে পারেন, খারাপ হবে না।

তবে সব কথার শেষ কথা – শর্টওয়েভে ভাল রিসেপশনের জন্য এক্সটার্নাল এন্টেনা জরুরী। বিশেষ করে ঢাকা শহরে রুমের মধ্যে অনেক সময়ই ভাল রিসেপশন পাওয়া যায় না। তখন বাইরে খোলা যায়গায় সেট নিয়ে গেলে বা একটা লম্বা তার এক্সটার্নাল এন্টেনা হিসেবে ব্যবহার করলে রিসেপশন অনেক ভাল হয়।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।