বইমেলা ২০২৩

শুক্রবার বিকালে গেলাম বই মেলায়। সকালের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু সকালে কেউ ফ্রি না। অগত্য বিকালেই গেলাম। দুপুরে খেয়ে ৩টার দিকে বের হলাম। প্রথম গিয়ে নামলাম ফার্মগেট, এরপর হেটে কাওরান বাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ হয়ে বইমেলায়। বাংলা মোটর পার হওয়ার পর টের পেলাম পদব্রজে যারা যাচ্ছে, সবার গন্তব্য বই মেলা। শাহবাগ থেকেই মানুষের মিছিল পায়ে পায় এগিয়ে চলছিলো বই মেলার দিকে। 

অবশেষে বই মেলার গেট পর্যন্ত পৌছানো গেলো। শুক্রবার বলে ভিড়টা একটু বেশীই। বেশীর ভাগই কম বয়েসী ছেলে, আসছে ঘুরতে আর মজা (?) নিতে। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে এসেছেন। তবে এই তরুণ সম্প্রদায় থেমে থেমে ধাক্কাধাক্কি করছিলো লাইনে। কয়েকজন ভদ্রলোককে দেখলাম অপেক্ষাকৃত ছোট বাচ্চাদের কোলে / কাঁধে তুলে নিতে। গেটে  চেক করা হচ্ছে। আমার সামনের এক তরুণকে দেখলাম পকেট হাতরে বেশ ভালমতো চেক করলো। আমি পিঠের ব্যাগ আগেই হাতে নিয়ে নিলাম। কিন্তু পুলিশ সদস্য আমাকে আর চেক না করে সামনে যাওয়ার ইঙ্গিত করলেন। ঠিক বুঝলাম না বয়স্ক লোক দেখে পুলিশ চেক না করায় খুশী হবো নাকি নিজেকে বয়স্কদের কাতারে দেখে দূঃখিত হবো।

প্রথমে পুরো এলাকা একবার ঘুরে দেখবো ঠিক করলাম। কিন্তু যে দিকেই যাই ছেলে-মেয়ে সবাই দেখি সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কেউ কেউ ষ্টলের সামনে দাড়িয়ে বই নেড়ে-চেড়ে দেখছে আর সাথের জনকে পরামর্শ দিচ্ছে কিভাবে তুলবে। আবার কেউ ষ্টলের নাম সহ তোলার চেষ্টা করছে। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দেখলাম কয়েক তরুণ দাড়িয়ে আছে। অনতি দূরে একজন মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করছে। কোন তরুণী কিংবা তরুণীর দল কাছে আসলেই একজন বলে উঠছে এখন কর , এখন কর। 

তাম্রলিপির প্যাভিলিয়নের সামনে দেখি ব্যাপক ভিড়। আমি সাইডে গিয়ে ভিড় এড়ানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু পিছনের তরুণদের চাপে কিছুক্ষণ পর নিজেকে সেই ভিড়ের মাঝেই আবিস্কার করলাম। শেষতক ঠ্যালা-ধাক্কা দিয়েই ভিড় থেকে বের হলাম। মাঝে মধ্যেই ভিড় থেকে উল্লাস ধ্বনি ভেসে আসছিলো। কিছু তরুণকে দেখলাম সেই ভিড়েই জোরে ধাক্কা দিচ্ছে। আবার ২/৩ জন তরুণীর দলকে বলতে শুনলাম ‘চল দেখি কে আসছে’, মানে ভিড়ে ঢুকে ধাক্কাধাক্কি করাতে তাদেরও সমান আগ্রহ। 

পুরোটা মেলা চক্কর দিয়ে ভাবলাম চেনা-পরিচিতজনদের লেখা কিছু বই কিনি। পরিচিত বলতে ব্লগ / ফেসবুকে যাদের সাথে পরিচয় আর কি। পেন্ডুলাম এর ষ্টল খূজতে গিয়ে আর পাই না। ষ্টল এর নাম্বার ছিলো ৫৪২-৫৪৩, সিরিয়ালি ৫২০ এর পর নাই। পরে এক ষ্টলে জিজ্ঞেস করার পর ভদ্রলোক বলে দিলেন ডিরেকশন। অবশেষে খূজে পেলাম। ইহতিশাম আহমেদ এর বই খোঁজ করতেই পেলাম। সেটা নেড়ে-চেড়ে দেখার সময় সন্নাসি রতনের অনুবাদ বই ‘হোয়াই সেক্স ইজ ফান’ চোখে পড়লো। দুটো কিনে নিয়ে ঘুরতেই দেখি ইহতিশাম আহমেদ ভাই দাড়িয়ে আছেন। টুকটাক কথাবার্তা বলেই অটোগ্রাফ নিয়ে নিলাম। এরপরের ষ্টপ বিদ্যানন্দ, কিশোর কুমার দাশের লেখা ‘অদেখা’ কেনার ইচ্ছে। বই পেলাম। আদর্শ লিপি খোজ করলাম, সেটা নাই। নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ বাজারে আসে নাই। কিশোর কুমার দাশ দেশে আছেন জানতাম, খোঁজ নিয়ে জানলাম তিনি এখন খুলনায়।

মনে করতে পারছিলাম না আর কার কার বই কেনার কথা ছিলো। হঠাৎ মনে পড়লো নজরুল সৈয়দ ভাই এর মেয়ে নিধি’র বই বের হয়েছে। ফেসবুক খুলে নজরুল ভাই প্রোফাইল ঘেটে বের করলাম প্রকাশনীর নাম। অতঃপর নিধি’র দুটো বই হিয়ার খোঁজে আর রেণুর পুতুল কেনা হলো। ইংরেজী ভার্শন কিনবো পরে, অষ্ট্রেলিয়া আর ফিনল্যান্ডে পাঠাতে হবে, দুই নাতনির কাছে। 

আরো কিছু বই কিনবো বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না কোনগুলো। বাসায় আসার পর মনে পড়লো শেখ রানার ‘টুকরো নাগরিক জার্নাল’ কেনার ইচ্ছে ছিলো। পরে আবার গিয়ে কিনবো।

ঘড়িতে দেখলাম ৭:৩০ বাজে। বের হয়ে এলাম। হাটতে হাটতে আর্ট কলেজ (চারুকলা ইনষ্টিটিউট) এর পাশে গিয়ে চোখে পড়লো সেই ছোট ছোট চিকেন ফ্রাই আর আলুর চপ ভাজা হচ্ছে। কে যন বলতো ‘কাক ফ্রাই’। আগে কত করে খেতাম মনে নাই, কাল দেখলাম চিকেন ফ্রাই ১২ টাকা আর চপ ৫ টাকা। দুটোর সাইজই আরো ছোট হয়েছে। বিশেষ করে চপের সাইজ দেখে তাজ্জব, আমার বুড়ো আঙ্গুলের চাইতেই ছোট। 

এরপর সিলভানায় গিয়ে হালিম, রুটি আর শেষে চা খেয়ে আবার বাস ষ্ট্যান্ডে। বাসে করে সোজা রাজলক্ষী। বাসায় যখন ঢুকছি ঘড়িতে ৯:৩০ এর মতো বাজে। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।