বন্ধু চিরকাল

আমার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে স্কুল ছিলো বটমলি হোম গার্লস হাই স্কুল। গার্লস স্কুল হলেও ছেলেরা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পারতো। আব্বা চিটাগাং পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন ১৯৭০ সালে। তেজগাঁও এর সিনিয়র ষ্টাফ কোয়ার্টারের ৪ তলায় তখন আমরা থাকতাম। বোন’কে ভর্তি করা হয়েছিলো এই স্কুলেই। পরের বছর দীর্ঘ নয় মাসের স্বাধীনতা সংগ্রাম। তাই ১৯৭২ সালে আমাকে ভর্তি করা হোল একই স্কুলে। ছোট ভাই তখন একদমই ছোট। কোয়ার্টার এর আরো কিছু ছেলে মেয়ে তখন এই স্কুলেই ছিলো। আমরা সবাই দল বেঁধে রেললাইন পার হয়ে স্কুলে চলে যেতাম। 

এই প্রথম স্কুল এবং শেষ স্কুল (উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল) নিয়ে আমি সবসময়ই এক ধরণের স্মৃতিকাতরতায় ভুগি। যদিও বটমলি হোম স্কুলের কারো সাথেই ধরতে গেলে আর যোগাযোগ নেই। একমাত্র ক্লাসের ফার্ষ্ট বয় সাব্বির এর সাথে ফেসবুকে এটাচ। তবে ওর সাথেও যোগাযোগ ক্ষীণ। তেজগাঁও উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে স্বল্পকালীন স্কুল জীবনে হিন্দোল, বিনু সহ আরো কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ হয়েছিলো। হিন্দোলের সাথে মোহাম্মদপুরে বেশ অনেকদিন দেখা সাক্ষাত হয়েছে। তারপর সেটাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ফেসবুকে বটমলি হোম স্কুলের বেশ কয়েকটি পেজ / গ্রুপ আছে। এরকম কয়েকটি গ্রুপে যোগ দিয়ে স্কুলের দিদি’দের এবং সতীর্থদের খোজ খবর করছিলাম বেশ কিছুদিন ধরেই। একমাত্র খোঁজ পেলাম আমার প্রথম শিক্ষা গুরু মিলন দিদির। দিদি অবশ্য এখন আর স্কুলে নেই, তবে তার এক মেয়ে স্কুলের শিক্ষিকা। যাচ্ছি যাবো করে এখন পর্যন্ত স্বশরীরে স্কুলে গিয়ে খোঁজ খবর করা হয়ে উঠেনি। মাঝে একবার স্কুলে পূনর্মিলনী হওয়ার কথা ছিলো, সেটাও মনে হয় মিস হয়ে গেছে। গ্রুপ গুলো’তে সবসময়ই ২০০০ সাল পরবর্তী প্রজন্মের দেখা পাই, কিন্তু আমাদের সময়ের কাউকেই দেখি না। অবশ্য দেখার কথাও না। সবাই হয়তো চাকরি-বাকরি আর সংসার নিয়েই ব্যস্ত।

বটসলি হোম স্কুলের সবচেয়ে একটিভ পেজে (যেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করেন) কয়েকদিন আগে একটি পোষ্ট চোখে পড়লো। স্কুলের ৭৫তম বার্ষিকী হতে যাচ্ছে ২০২১ সালে। সে উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রথমিক পদক্ষেপ। যিনি পোষ্ট দিয়েছিলেন তার নামের শেষাংস পরিচিত লাগছিলো। তবে চেহারা চেনার কোন উপায় ছিলো না। ১৯৭২-৭৫ সালের স্মৃতি বড় ভাসা ভাসা। আর এতো বছর পর সবার চেহারাই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নব্বই এর দশকে সাব্বির’কেই প্রথম দেখায় চিনতে পারি নাই, ও অবশ্য আমাকে ঠিকই চিনেছিলো।

মূল পোষ্টের মন্তব্য পড়তে পড়তে জানা হয়ে গেলো সেই পোষ্টদাত্রী স্কুলের সহপাঠি হিয়া’র বড় বোন আপন। আপন, ভাল, হিয়া এই তিন ভাই বোন তখন স্কুলে পড়তো। হিয়া ছিলো আমার সহপাঠি, ভাল এক ক্লাস উপরে আর আপন আরো এক ক্লাস উপরে। হিয়া’র বোন আপন আপা – তার মানে হিয়ার সাথে যোগাযোগ হবে, সেই সূত্রে অন্যান্যদের সাথেও। ভাবতেই অন্যরকম ভাল লাগছিলো। হিয়া’র সাথে অবশ্য সেরকম বড় কোন স্মৃতি মনে নেই। কেবল মনে আছে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় আমরা পাশাপাশি বসতাম। আর স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে অথবা গেমস এর সময় আমরা বেশ কয়েকজন মিলে একটা খেলা খেলতাম। খেলা অনেকটা পিলো পাসিং এর মতো। তবে এখানে সবাই গোল হয়ে বসতাম মাটিতে, একজন সেই বৃত্তের বাইরে দিয়ে দৌড়াতো আর সবাই সমস্বরে সুর করে বলতাম ‘পাহাড়ে আগুন লাগছে, দৌড়াও দৌড়াও’। সে দৌড়াতে দৌগাতেই যে কোন একজনের পিঠে কিল দিতো, তখন তাকেও দৌড়াতে হতো। সেই খালি জায়গায় যে কোন একজনকে আগে বসতে হতো, অন্যজন কে আবার আগের মতোই দৌড়াতে হতো। তবে খেলা কিভাবে শেষ হতো তা হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না।

বটমলি হোম নিয়ে এরকম আরো অনেক স্মৃতি। সেই স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই আপন আপাকে মেসেজ পাঠালাম। হিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে চাই। মেসেজ পাঠিয়েছিলাম রাতে ঘুমানোর আগে। সকালে একসময় দেথি মেসেজ এর উত্তর চলে এসেছে। কিন্তু যা জানলাম সেটির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আপা জানালেন হিয়া আর নেই।
মেসেঞ্জার মেসেজ

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।