বিদায় ২০২২

আজ বছরের শেষ দিন – ৩১শে ডিসেম্বর ২০২২।

২০২১ সালে হারালাম আম্মা’কে, ২০২২ এ আব্বা’কে। গত ২ বছরে এই দু’টিই উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। এর বাইরে আমার আর আমাদের ভাইবোনদের জীবনে আর তেমন কোন ঘটনা ঘটেছে বলে মে পড়ছে না। 

আম্মা যেদিন মারা গেলেন (৪ঠা মে, ২০২১) সেদিন প্রথমেই যে কথা মাথায় এসেছিলো তা হলো আম্মাকে আর কোনদিন দেখতে পারবো না। এখনও আম্মার রুমের পাশ দিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে মনে হয় আম্মা ডাকতেছে। উকি দিয়ে দেখি। আব্বা-আম্মার যে খাট ছিলো সেটাই এখন ঐ ঘরে পাতা আছে। আম্মার সেই হসপিটাল বেড এখন আব্বার ঘরে। সেই ঘরেও আব্বার জিনিসপত্র এলোমেলো ছড়ানো। ধীরে ধীরে সব সরানো হচ্ছে। প্রথমে সরালাম ঔষধপত্র। যেগুলো ফেরত দেয়ার মতো ছিলো ফেরত দিয়ে অন্য জিনিস কিনে আনা হয়েছে। বেশ কিছু ঔষধ ফেরত দেয়া যায় নাই। কাপড়-চোপড় এখন আলনা বা আলমারীতে ঝুলছে। বিছানার চাদর আর কম্বল ইত্যাদি ধোয়ার অপেক্ষায়। কিছু অবশ্য ধোয়া হয়েছে। 

এখন ব্যস্ত আব্বার কাগজপত্র নিয়ে। পেনশন বন্ধ করার জন্য অনলাইনে ডেথ সার্টিফিকেট আপলোড করেছিলাম। দুই দিন পরেই পেনশন বন্ধ করা হয়েছে দেখলাম। সঞ্চয়পত্র ছিলো কিছু, সেগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে জানলাম ডা্তারের ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াও সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া ডেথ সার্টিফিকেট লাগবে। তবে এখন হাতে লেখা কোন সার্টিফিকেট দেয়া হয় না। সব অনলাইনে। অনলাইনে এপ্লাই করতে গিয়ে জানলাম আগে বার্থ সার্টিফিকেট লাগবে। আব্বার কেবল ন্যাশনাল আইডি আছে। অনলাইনে বার্থ সার্টিফিকেট করতে গিয়ে মাথা ঘুরায় গেলো। অতঃপর গেলাম স্থানীয় কাউন্সিলর এর কার্যালয়ে। সেখান থেকেও জানানো হলো এটা অনলাইনেই করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এর অফিস থেকেও একই কথা। বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য দরকার মূলত এসএসসি সমমানের সার্টিফিকেট, ডাক্তারের দেয়া জন্ম তারিখের প্রত্যায়নপত্র, জমির দলিল / খাজনার রশিদ। আব্বার কাগজপত্র ঘেটে কোনটাই পেলাম না। উত্তরায় আব্বার যে ফ্ল্যাট আছে সেটা এখনও রেজিষ্ট্রি হয় নাই, কর / খাজনার কোন রশিদও নাই। এগুলো ছাড়া কেবল ন্যাশনাল আইডি দিয়ে জন্ম সনদ হবে কি না, সেটা ধোয়াশাই। 

শেষতক যোগাযোগ করলাম দেশের বাড়িতে। সমবয়সী এক চাচা এবং এক চাচাত ভাই জানালেন তারা করে দিবেন। চাচাকেই কাগজপত্র পাঠালাম। ও জানালো ওর কাছে এজমালি সম্পত্তির দলিল আছে, আমার পাঠানো কাগজপত্রের সাথে সেটার কপি দিয়েছে। গত পরশু এসএমএস পেলাম যে জন্ম সনদের জন্য আবেদন গৃহিত হয়েছে। এ সপ্তাহেই হয়তো ডেয়ে যাবে। এরপর এটা দিয়েই মৃত্যু সনদ। 

অবস্থা দেখে মনে হলো আমার নিজেরও তো জন্ম সনদ নাই, কেবল ন্যাশনাল আইডি। এসএসসির সার্টিফিকেট আছে, তবে জমির কোন দলিল নাই। এই ভাবতে ভাবতেই অনলাইনে www.bdris.gov.bd সাইটে গেলাম। সেখানে জন্মস্থান বিষয়ে কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখন জন্মস্থান বলতে কি যেখানে জন্ম হয়েছে নাকি স্থায়ী ঠিকানা, সেটাই বুঝতে পারলাম না। আমার জন্ম তো স্থায়ী ঠিকানায় হয় নাই, হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখন কি করি ?

চাচাত ভাইকে জানালাম। সে জানালো তার কর্মস্থলের ইউননিয়ন পরিষদ থেকে সে জন্ম সনদ নিয়েছে। তাই আসলে কি চাইছে সেটা সেও জানে না। তবে সে এবং আরো কয়েকজন জানালো কেবল ন্যাশনাল আইডি না, এখন জন্ম সনদ থাকাটাও জরুরী। ভাবতেছি আব্বার কাজগুলো হয়ে গেলে নিজের জন্মসনদের জন্য কাজ শুরু করবো। 

আব্বা মারা যাওয়ার পর সময় কাটবে কিভাবে এই নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। আামি অবশ্য তেমন চিন্তিত না। বাসায় অনেক বই জমে গেছে, পড়া হয় নাই। আবার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারি। বই পড়েই তো সপ্তাহ পার করা যায়। তারপর আছে নেটফ্লিক্স, হইচই, চরকি আর ইউটিউবের মতো ভিডিও দেখার নানা সাইট। আছে রেডিও। সেই সাথে ফটোগ্রাফি নিয়েও সময় কাটানো যাবে। তবে আয়-রোজগারের একটা পথ বের করতে পারলে খূবই ভাল হয়। 

সামনের দিনগুলি কেমন যাবে সেটা সময়ই বলে দিবে। ব্যাপক চিন্তা করে লাভ নাই। 

আপনারা ভাল থাকুন। ২০২৩ সবার জন্য শুভ হোক এই কfমনাই করি।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।