বুক রিভিউ : আলতাফ

বাংলাদেশের অধিবাসী অথচ শহীদ আলতাফ মাহমুদের নাম শুনে নাই এমন কাউকে হয়তো খূঁজে পাওয়া যাবে না। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদ’দের স্মরণে জনাব আবদুল গাফফার চৌধূরীর লেখা গানে সুরারোপ করে অমর হয়ে আছেন এই শিল্পী। হ্যঁ, তিনি গায়ক ছিলেন, গীতিকার ছিলেন, ছিলেন সুরকারও। কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। এর বাইরে তিনি যে অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন সে খবর হয়তো আমাদের তেমন ভাবে জানা নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এক-আধটু নাড়াচাড়া করেন তারা হয়তো জানেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার এবং ক্র্যাক প্লাটুনের অবদানের কথা।

অমিত গোস্বামীর লেখা ‘আলতাফ’ শহীদ আলতাফ মাহমুদের জীবনী ভিত্তিক উপন্যাস। গত বছর অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হলেও আমি শেষ পর্যন্ত এই বছর অক্টোবরে এসে বইটি নিয়ে বসতে পারলাম। আর এক বসাতেই ৯৬ পৃষ্ঠার বই শেষ। ঝরঝরে লেখায় আপনি এতোটাই ডুবে যাবেন যে শেষ না করে উঠতেই পারবেন না। আপনার মনে হবে আপনি পৌছে গেছেন সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টিতে। উপন্যাসের শুরু ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাত্রিতে আর শেষ হয় ১৬ই ডিসেম্বরে চুড়ান্ত বিজয়ের ২ দিন পর। এই সময়ের মাঝে মাঝে অবশ্য অমিত গোস্বামী অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে আলতাফ মাহমূদের জীবনের নানা খন্ডাংশ হাজির করেছেন ফ্ল্যাশব্যাকে। তাঁর সংগীত জীবন, রাজনৈতিক চিন্তা, পারিবারিক ইতিহাস, প্রেম-বিয়ে, ক্র্যাক প্লাটুনের সাথে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক,  এরপর পাকি জান্তার হাতে চরম নির্যাতন এবং অবশেষে নিখোজের তালিকায় ঠাঁই নেয়া – সবই উঠে এসেছে এক এক করে।  ইতিহাস আর জীবনীর এক অসাধারণ মিশেল এই অনবদ্য উপন্যাস আলতাফ’।

এই বইটি ইতিহাস নয়, কিছু কিনছু ঘটনা হয়তো কল্পনাশ্রয়ী, কিন্তু পড়তে পড়তে আপনার মনে হবে ঘটনা আপনার চোখের সামনেই ঘটছে। আপনি একজন অসাধারণ মেধা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক যোদ্ধাকে অবলোকন করবেন ‘আলতাফ’ এর মাধ্যমে।

ভাল লাগে নাই : এক অধ্যায় শেষ হওয়ার ঠিক পরেই পরের অধ্যায় শুরু হয়েছে। নতুন অধ্যায় নতুন পৃষ্ঠা থেকে শুরু হলে ভাল লাগতো।

বই এর নাম : আলতাফ
লেখক : অমিত গোস্বামী
প্রকাশক : বাংলাপ্রকাশ
মূদ্রিত মূল্য : ৩০০ টাকা

প্রাপ্তিস্থান : রকমারি

শহীদ আলতাফ মাহমুদ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে
উইকিপিডিয়া
বাংলাপিডিয়া
শহীদ আলতাফ মাহমুদ (ওয়েব সাইট)

[এই বইটি পড়ার আগে / পরে জাহানারা ইমামের লেখা একাত্তরের দিনগুলি বইটি পড়তে পারেন}

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *