যদাচার

১. চেক বই এর রিকুইজিশন স্লিপ হারিয়ে ফেলেছিলাম। দোষ আমারই। ব্যাংকে চেক বই আনতে যাব বলে আগেই সেই স্লিপ বই থেকে ছিড়ে রেখেছিলাম। কিন্তু কোন কারণে ব্যাংকে যাওয়া হয় নাই। পরে যখন চেক আনতে যাব তখন দেখি স্লিপ নাই। আতিপাতি করে খূঁজেও পাই নাই। শেষে ব্যাংকে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বলতেই তিনি জানালেন আগে জিডি করতে হবে, তারপর এপ্লিকেশন করতে হবে প্রেসক্রাইবড ফর্মে এবং সেই ফর্ম আরেকজন গ্রাহক (একাউন্ট হোল্ডার) কে দিয়ে প্রতিসাক্ষর করে ২০০ টাকার রাজস্ব ষ্ট্যাম্প লাগিয়ে ব্যাংকে জমা দিলে আমি নতুন চেক পাবো।

প্রথমেই ঘাপলা বাধলো অনলাইন জিডি করতে গিয়ে। জিডি তো পরের কথা জিডি এপে রেজিষ্ট্রেশনই করতে পারলাম না। পরে দরখাস্ত একটা লিখে সরাসরি থানা থেকেই জিডি করে আনতে হলো। 

জিডি করার পর ব্যাংকের প্রেসক্রাইবড ফর্ম পূরণ করে একজন গ্রাহককে দিয়ে প্রতিসাক্ষর করিয়ে গেলাম পোষ্টঅফিসে। রাজস্ব ষ্ট্যাম্প কিনতে হবে ১০০ টাকা দামের ২টা। কর্মচারী একগাল হেসে জানালেন এই দামের ষ্ট্যাম্প পোষ্ট অফিসে নাই, ষ্ট্যাম্প ভেন্ডরদের কাছ থেকে কিনতে হবে। ষ্ট্যাম্প ভেন্ডর কোথায় পাই। সেদিন আবার বুধবার, মার্কেট হলিডে। ভাবতে ভাবতে ব্যাংকেই গেলাম। পিয়নদের কাছে মাঝে মধ্যে রাজস্ব ষ্ট্যাম্প পাওয়া যায় দেখেছি। যদিও দাম কিছু বেশী রাখে। ব্যাংকে ঢুকে দেখি প্রায় সব কাউন্টারেই ভিড়। চেকের কাউন্টারেও। 

পরে গেটের কাছে বসা এক পিওনকে বললাম রাজস্ব ষ্ট্যাম্পের কথা। দাড়িওয়ালা পিওন জানালো এতো দামের ষ্ট্যাম্প সাধারণত রাখে না। তবে বললে বাইরে থেকে কিনে এনে দিবে। ২০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে লাগবে ৩০০ টাকা। জিজ্ঞেস করলাম ডিউটি রেখে যেতে পারবে কিনা। বললো পারবে, সমস্যা নাই। টাকা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

প্রায় আধ ঘন্টা পরে তিনি আসলেন। আমাকে ষ্ট্যাম্প বুঝিয়ে দিলেন। আমি কাগজপত্র সহ চেকের কাউন্টারে গেলাম। ভিড় কিছুটা কম, কিন্তু এক একজন করে বিদায় করতেই ব্যাপক সময় লাগতেছে। শেষতক আমার পালা আসলো। আমি কাগজপত্র দিয়ে শেষে ষ্ট্যাম্প দিলাম কাগজে না লাগিয়েই। এই ভদ্রলোকও দাড়িওয়ালা, কপালে দাগ। আমার কাগজপত্র নিয়ে চেক করলেন। ষ্ট্যাম্পের বাড়তি কাগজ ছিড়ে দেখি ড্রয়ারে রাখলেন। এরপর কম্পিউটার থেকে কি একটা নাম্বার কাগজে লিখে নিয়ে উঠে গেলেন। বেশ সময় লাগিয়ে খূঁজে বের করলেন আমার চেক বই। তারপর রেজিষ্ট্রার খাতায় সব তথ্য লিখে আমার সাইন রেখে চেক হস্তান্তর করলেন। আমি চেকের পাতা দেখে-গুণে নিয়ে কাউন্টার ত্যাগ করলাম। 

ব্যাংকের গেট পার হওয়ার আগে মনে হলো ষ্ট্যাম্প তো দরখাস্তে লাগাতে দেখলাম না। 

২. আব্বার জন্য Assure নামে একটা ডায়পার কিনতাম। মিডিয়াম সাইজ ২০টার দাম ১৪৫০ টাকা। প্রতিদিন ৩টা করে লাগে। মাস খানেক হলো দোকানে নাই। আশে-পাশের সব দোকান থেকে বললো ডিষ্ট্রিবিউটর সাপ্লাই দিচ্ছে না। এক দোকান থেকে বললো দাম বাড়াবে তাই আপাতত সাপ্লাই বন্ধ। এই জিনিস কিনতেই হয়। তাই দেখে শুনে কমদামী একটা কিনলাম টেষ্ট করার জন্য। নাম Thai, ১০টার দাম ৬০০ টাকা। দোকানের কর্মচারী বললো ইম্পোর্টেড। বাসায় নিয়ে এসে ব্যবহার শুরু করলাম। ফিনিশিং এ ছোটখাট কিছু প্রব থাকলেও জিনিস কিন্তু বেশ ভাল। প্রথমত যে ম্যাটেরিয়াল ব্য্হার করেছে, সেটা অনেকটা কাপড়ের মতোই। শরীর ঘামে না। আবার প্রস্রাব ভিতরের ম্যাটেরিয়াল শুষে নেয়ার পর আবার বাইরের দিকে আসে না। ফলে শরীরে প্রস্রাব সবসময় লেগে থাকে না। একটা বেড সোর হয়েছে কয়েকমাস হলো, ভিজে থাকার কারণে শুকাচ্ছিলো না। এবার মনে হলো শুকাবে।

একই জিনিস আরেক দোকান থেকে কিনলাম দ্বিতীয়বার। ১০ পিসের প্যাকেট ৫৮০ টাকা করে রাখলো। আমার জন্য ভালই হলো। এখন থেকে ডায়পারের খরচ কমে গেলো কিছুটা। সাথে কোয়ালিটিও ভাল পেলাম। 

আপাতত এভাবেই জীবন চলছে, চলবে।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।