শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড : ব্লারড ব্যাকগ্রাউন্ড

ফেসবুকের ফটোগ্রাফি বিষয়ক গ্রুপগুলোতে ইদানিং একটি প্রশ্ন প্রায়ই দেখি – ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করবো কি ভাবে অথবা অমুক লেন্স দিয়ে কি ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল ঘোলা হয় নাকি অন্য কোন লেন্স / ক্যামেরা আছে ব্যাকগ্রাউন্ড বেশী ঘোলা করার। মাঝে মধ্যে এরকম প্রশ্ন দেখলে হাসি পায়। মনে হয় কেবল ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করার জন্যই লোকে ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে এতো দাম দিয়ে। আসলে ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে শাটার টিপলে ছবি উঠবে কিন্তু ফটোগ্রাফি জানতে-বুঝতে আপনাকে এর ব্যবহার শিখতে হবে বৈকি। শুধূ শাটার টিপলে তো ছবি উঠে যে কোন ক্যামেরাতেই এবং বর্তমানের মোবাইল ক্যামেরাগুলোও এতো এডভান্স যে, শাটার টিপলেই অনেক ভাল ছবি উঠে। তাহলে আর এতো টাকা দিয়ে ডিএসএলআর কেনার দরকার কি। তবে আপনি যে ভাবে চাইছেন ঠিক সে ভাবেই ছবি চাইলে আপনাকে ডিএসএলআর কিনতে হবে এবং জানতে হবে এর ব্যবহার।

আপনি ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তোলার সময় ছবির কতটুকু ফোকাসে থাকবে সেটি নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। একে বলে ডেপথ অফ ফিল্ড। আপনি ইচ্ছে করলে পূরো দৃশ্যটিকেই ফোকাসে রাখতে পারেন, যাতে ক্যামেরার সামনের যে কোন কিছু থেকে শুরু করে পিছনের যে কোন কিছুই শার্প ফোকাসে থাকবে। যেমনটি আমরা করে থাকি ল্যান্ডস্কেপ ছবি তোলার সময়। আবার সাবজেক্ট বাদে এর সামনে-পিছনে সব কিছুই ব্লার / ঘোলা করে দেয়া সম্ভব, কিন্তু সাবজেক্ট হবে শার্প। এমনটি আমরা করে থাকি পোর্ট্রেট ছবি তোলার সময়। সাবজেক্ট শার্প ফোকাসে রেখে, বাকি সব ব্লার করে দেয়া হলো শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড। এই শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড পেতে হলে মোটামুটি ৪টি বিষয় আপনাকে এপ্লাই করতে হবে।

১. এপারচার : এপারচার হলো ক্যামেরায় আলো প্রবেশের পথ। বড় এপারচার মানে বেশী আলো, ছোট এপারচার মানে হলো কম আলো। এর বাইরে এপারচার এই ডেপথ অফ ফিল্ডও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আপনি বড় এপারচার ব্যবহার করলে ডেপথ অফ ফিল্ড শ্যালো হয়ে যাবে, মানে সাবজেক্ট বাদে বাকি সব কিছুই ব্লার দেখাবে। সুতরাং আপনি যদি এফ/৫.৬ এর বদলে এফ/১.৮ ব্যবহার করেন তবে ব্যাকগ্রাউন্ড বেশী ব্লার দেখাবে।

টিপস ১ : সাধারণ কিট লেন্স (১৮-৫৫ মিমি) এ সবচেয়ে বড় এপারচার থাকে এফ/৩.৫ (১৮ মিমি) এবং এফ/৫.৬ (৫৫ মিমি)। ৫০ বা ৩৫ মিমি প্রাইম লেন্সে সবচেয়ে বড় এপারচার হলো এফ/১.৮ অথবা এফ/১.৪। আশা করি বুঝতে পারছেন এক্ষেত্রে কোন লেন্স ব্যবহার করলে ব্যাকগ্রাউন্ড বেশী ব্লার হবে।

টিপস ২ : জানা বিষয়, তারপরও আবার বলি। বড় এফ নাম্বার মানে হলো ছোট এপারচার আর ছোট এফ নাম্বার মানে হলো বড় এপারচার। সুতরাং এফ/১৬ এর চাইতে যে এফ/১.৮ বড় এপারচার নির্দেশ করে সেটা আশা করি আপনার মনে আছে।

২. ফোকাল লেন্থ : দ্বিতীয় যে বিষয়টি শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করে সেটি হলো ফোকাল লেন্থ। ৫০ মিমি এর চাইতে ২০০ মিমি এ ছবি তুললে পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড বেশী ঘোলা দেখাবে যদি আপনি একই এপারচার এবং একই দূরত্ব থেকে সাবজেক্টের ছবি তুলেন। মানে হলো আপনি যদি ৫০ মিমি প্রাইম লেন্স দিয়ে এফ/৩.৫ এপারচারে সাবজেক্টের ছবি তুলেন এবং পরে ৫৫-২০০ মিমি জুম লেন্স দিয়ে একই এপারচার ব্যবহার করে এবং একই দূরত্ব থেকে ছবি তুলেন, দ্বিতীয় ছবিতে ডেপথ অফ ফিল্ড বেশী শ্যালো হবে অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ড বেশী ঘোলা দেখাবে।

টিপস : প্রাইম লেন্সের কোয়ালিটি সাধারণ জুম লেন্সের চাইতে ভাল। তাই ব্লার বেশী হয় বলে (ফোকাল লেন্থ ৩৫ / ৫০ / ৮৫ মিমি ইত্যাদি) প্রাইম লেন্স ফেলে দিয়ে সাধারণ জুম লেন্স (৫৫-২০০ / ৫৫-৩০০ মিমি) কিনতে যাবেন না আশা করি।

৩. ক্যামেরা থেকে সাবজেক্টের দূরত্ব : ক্যামেরা থেকে সাবজেক্টের দূরত্ব যত কম, আপনি তত বেশী শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড পাবেন।

৪. সাবজেক্ট থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডের দূরত্ব : সাবজেক্ট থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড যত বেশী দূরত্বে থাকবে সেটি ততো বেশী ব্লার বা ঘোলা দেখাবে।

আশা করি শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড পেতে হলে কি করতে হবে, সেটি বুঝতে পেরেছেন। আমরা হয়তো সব ধরণের লেন্স কিনতে এবং ব্যবহার করতে পারি না। তাই আপনার যে লেন্স আছে, সেটি দিয়েই চেষ্টা করে দেখুন কিভাবে এই শ্যালো ডেপথ অফ ফিল্ড আদায় করে নিতে পারেন।

হ্যাপি ক্লিকিং

Featured Image : Dragonfly
Camera : D3000, Lens : AF-S 55-200mm, Aperture : f/5.6, Shutter Speed : 1/640 sec, ISO : 200
মুল ছবিটি এখানে পাবেন

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।