সঞ্চয়পত্রের মৃত্যু দাবী

আব্বা তার চাকরি জীবনের সঞ্চয় দিয়ে কিছু সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছিলেন। আব্বা বেঁচে থাকতেই কিছু সঞ্চয়পত্র আমার আর বোনের যৌথ নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছিলেন। মূলত এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়েই আব্বার চিকিৎসা এবং আনুসঙ্গিক খরচ চালানো হতো। সেই সাথে আমার হাতখরচ।  বাকিগুলোর নমিনি ছিলো আমার ভাই আর বোন।

আব্বা অসুস্থ থাকায় এসব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলতাম আমি। সেজন্য আব্বার কাছ থেকে একটা দরখাস্ত দিতে হয়েছিলো। সেই সাথে প্রতিবার ডাক্তারের সার্টিফিকেট। এজন্য আমি ৪-৬ মাস পর পর মুনাফা তুলতাম। একই কারণে মেয়াদান্তে সেসব সঞ্চয়পত্র নগদায়ন সম্ভব হয় নাই। নগদায়ন করতে হলে আব্বাকে স্বশরীরে পোষ্টঅফিসে যেয়ে সিগনেচার করতে হতো। অসুস্থ ছিলেন বলে পোষ্টঅফিসে যেতে কিংবা সিগনেচার করতে পারতেন না। 

আমি উত্তরা পোষ্টঅফিসের পোষ্টমাষ্টার  সাহেব’কে একবার জিজ্ঞানা করেছিলাম পোষ্টঅফিস থেকে বাসায় গিয়ে টিপসই নিয়ে সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা দেয়া সম্ভব কি না। উ্তরে উনি বলেছিলেন পোষ্টঅফিস থেকে কাউকে পাঠানো গেলেও রেজিষ্ট্রার খাতা (যেটাতে সিগনেচার করতে হয়) অফিসের বাইরে নেয়ার কোন আইন নাই। আর টিপসই নেয়া হয় শুধূমাত্র যদি হাসপাতালের আইসিইউ এ থাকেন। সেক্ষেত্রেও আগে আবেদন করতে হবে। তারপর হেড অফিস থেকে কেউ গিয়ে টিপসই আনবেন। একই কথা বলেছিলেন বিসিএস (পোষ্টাল) এর একজন কর্মকর্তা। 

আব্বা মারা যাওয়ার পর এইসব সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা বোন আর ভাই এর নামে ট্রান্সফার করার জন্য পোষ্টঅফিসে যোগাযোগ করলাম। সেখান থেকে কি কি কাগজপত্র সহ দরখাস্ত করতে হবে জানিয়ে দেয়া হলো। তখন জানতে পারলাম হাসপাতাল থেকে দেয়া ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াও সরকারী ডেথ সার্টিফিকেট লাগবে। আর সেটা সংগ্রহ করতে হলে আগে দরকার বার্থ সার্টিফিকেট। আব্বার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও কোন বার্থ সার্টিফিকেট মানে জন্ম নিবন্ধন ছিলো না। অনলাইনে করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক কি কি লাগবে সেটা সম্পর্কে কোন পরিস্কার ধারণা পেলাম না। স্থানীয় কাউন্সিলরের অফিস থেকে বলা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই চলবে। সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় অফিস থেকে বললো এই এলাকায় নিজের বাড়ী বা ফ্ল্যাট থাকতে হবে। আমি তো পুরাই বেদিশা। 

শেষতক স্মরণাপন্ন হলাম আমার সমবয়সী এক চাচা আর চাচাত ভাই এর। এরা দুজনেই প্রথমে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলো। পরে চাচা মারফত দেশের বাড়ী মানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ এবং মৃত্যুসনদ বের করা হলো। 

এরপর পোষ্টঅফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আবেদন করা হলো। এরপর হেডঅফিস থেকে একজন কর্মকর্তা আসলেন স্থানীয় পোষ্টঅফিসে। তার সাথে দেখা করার এক সপ্তাহের মধ্যে চিঠি উস্যু করা হলো। 

সাক্ষাতকারে কেবল প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো যাচাই করা হয়েছে। আর মেয়াদান্তে কেন নগদায়ন করা হয় নাই এপ্রশ্ন করা হয়েছিলো। 

সঞ্চয়পত্রের মৃত্যু দাবী নিস্পত্তির জন্য যা যা লাগবে :
১. সাদা কাগজে আবেদনপত্র, ডেপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারেল বরাবর (আমার ক্ষেত্রে এটি ছিলো ডেপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারেল, ঢাকা নগরী উত্তর বিভাগ, ঢাকা ১০০০)
২. নমিনি’র ৩ কপি পাসপোল্ট সাইজ ছবি
৩. আমানতকারীর মৃত্যু সনদ (স্থানীয় জন প্রতিনিধি / অনলাইন)
৪. আমানতারীর জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / জন্মসনদ
৫. নমিনি’র জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট / জন্মসনদ 
৬. সঞ্চয়পত্র এবং সনাক্তকরণ রশিদের ফটোকপি
৭. নমিনি’র নমুনা সাক্ষর

আবেদনপত্রে আমাতকারী নমিনি’কে শতকরা কত অংশের নমিনি করেছেন সেটাও উল্লেখ করতে হবে। সাধারণত একটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে একজন নমিনি থাকলে তিনি ১০০% অংশ পাবেন।

আশা করি এই তথ্যগুলো অনেকের কাজে লাগবে। আর আপনার যদি জন্ম সনদ করা না থাকে তবে অতি অবশ্যই সেটি করে ফেলবেন। কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে হয়তো সব কাজ হবে না ভবিষ্যতে। আর এই পোষ্টের তথ্যগুলি পোষ্টঅফিস থেকে ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যাংক থেকে ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মৃত্যদাবী একই না ভিন্ন, সেটি আমার জানা নাই।

ভাল থাকুন নিরন্তর।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।