হালিম এবং চা

১. বটমলি হোম গার্লস হাইস্কুলের ৭৫ বছরপূর্তি উৎসব হবে। আগেই হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনার কারনে পিছিয়ে এবছর করা হবে এই অনুষ্ঠান। কয়েকজনের সাথে যোগাযোগও হয়েছে এর মধ্যে। কিন্তু আব্বার অসুস্থতার কারণে যাব কি যাব না করতে করতে রেজিষ্টেশন আর করা হয় নাই। আব্বা মারা যাওয়ার পর ঠিক করলাম যাব। খোঁজ নিয়ে ৩ তারিখে গেলাম স্কুলে। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় আর করা হয়নি। এর মধ্যে আবার দেখলাম ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। জানলাম বিকাশেও রেজিষ্ট্রেশন ফি দেয়া যাবে। পরে কেবল ফোন করে কনফার্ম করতে হবে। আমি তাই সকালে বিকাশে ফি পাঠিয়ে দিয়ে ফোন করলাম। সিস্টার শুনে বললেন স্কুলে এসে একটা ফর্ম ফিলআপ করতে হবে। শুনে একটু বোকাই মনে হলো নিজেকে।
 
২. কি আর করা। দূপুরের খাবার খেয়েই ছুটলাম ফার্মগেট। স্কুলে যখন পৌছালাম তখন বাজে পাঁচটা। ফর্ম ফিলআপ করে বিকাশের ডিটেইলস দিয়ে প্রাপ্তিস্বীকারপত্র নিয়ে আসলাম। তবে ঘটনা হলো এই অনুষ্ঠানে যাওয়া হবে কিনা কে জানে। কারণ একই সাথে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ পড়েছে। এই সময় উত্তরা থেকে বের হওয়া কিংবা ঢোকা একটা বিশাল সমস্যা।
 
৩. আমার পাশাপাশি আরো তিনজন মহিলা ফর্ম ফিলআপ করলেন। দূজনে একটুু চিন্তিত ছিলেন পলো টিশার্ট এর সাইজ কি দিবেন সেটা নিয়ে। আমি বললাম এক সাইজ বড় নিয়েন। ওনারা পরস্পর আলাপ আলোচনা করে S / M সাইজ ঠিক করলেন। আমি অবশ্য একটু হাসলাম মনে মনে। জামা বা শাড়ির উপর এই পলোশার্ট পড়তে গেলে নির্ঘাত ছিড়বে নয়তো কোমড়ে টান লাগতে পারে। আমি অবশ্য XXL সাইজ দিয়ে এসেছি নিজের জন্য।
 
৪. বাসায় আসার জন্য আনন্দ হলের কাছে গেলাম বাস ধরতে। বাস আর আসে না। হঠাৎ চোখ গেলো নিউ ষ্টার হোটেলের দিকে। আগে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ফার্মগেট গেলে এখানে একবাটি হালিম আর এক কাপ চা খেতে ঢুকতাম। হালিম ছিলো ১০ টাকা আর চা মনে হয় ৩/৪ টাকা, ঠিক মনে নেই। হালিমের দাম বাড়তে বাড়তে হলো ৫০ টাকা আর চা ১০ টাকা। এরপর মনে হয় এখানে খূব একটা যাওয়া হয় নাই। ইনফ্যাক্ট মাংসের দাম বাড়ার পর হালিমই আর তেমন খাওয়া হয় নাই, রোজার সময় ছাড়া।
 
৫. বাস আসে না দেখে নিউ ষ্টার হোটেলে ঢুকলাম হালিমের সেই পুরাতন স্বাদ নিতে। হোটেল নাম হলেও এটা আসলে রেষ্টুরেন্ট। ষ্টার কাবাব এর শাখা। আগে যেটা ছিলো এখন সেটার সাথে পাশে একতলা-দোতলা যোগ হয়েছে। হালিম আসলো, চা আসলো। টেষ্ট আগের মতোই আছে। তবে হালিমের পরিমান কমেছে কিনা বুঝতে পারলাম না। বিল দেয়ার সময় ৫০০ টাকা দিলাম বেয়ারার হাতে, ভাংতির দরকার ছিলো। বেয়ারা আমাকে ফেরত দিলো ৩৭৫ টাকা। মানে বিল ১২৫ টাকা। হালিম ১০০ টাকা আর চা ২৫ টাকা। অতঃপর বেয়ারাকে ২০ টাকা টিপস দিয়ে সামনে অপেক্ষমান বিআরটিসির দোতলা বাসে উঠলাম।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।