হৃৎযন্ত্র

ঘটনা ১ : আব্বা তখন কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করেন। আবদুল গণি রোডের শিক্ষা ভবনে অফিস। একদিন অফিস ছুটির বেশ আগেই বাসায় চলে আসলেন। বললেন শরীরটা ভাল না। পরে জানলাম অফিসে হঠাৎ করে বুকের ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। কলিগরা কাছের সরকারী কর্মচারী হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে জানা গেলো বুকের ব্যথা আসলে হার্টের ছিলো না। পেটে গ্যাস জমে বুকে প্রচন্ড চাপ তৈরী করেছিলো। যা অনেকটা হার্ট এটাকের মতোই তীব্র ছিলো। 

ঘটনা ২ : খবর পেলাম বড় চাচা হাসপাতালে, লাইফ সাপোর্টে। হাসপাতালে গিয়ে ঘটনা জানলাম। চাচা বারান্দায় বসে তার বড় ছেলের সাথে কথা বলছিলেন। কথা শেষে উঠতে গিয়ে পড়ে যান এবং জ্ঞান হারান। ম্যানেজার এবং চাচাতো ভাই মিলে তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সিপিআর এবং ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার পর হার্ট চালু হয় ঠিকই কিন্তু কোমায় চলে যান। ৩য় দিন কোমায় থাকা অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়। চাচা কোমায় থাকা অবস্থাতেই জানলাম চাচার কার্ডিয়াক এরেষ্ট হয়েছিলো, কোন কারণে তার হৃৎপিন্ড কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। চাচার ডায়বেটিস, হৃদরোগ সহ আরো কিছু রোগ ছিলো, সাথে বয়সও হয়েছিলো ৮০ বছরের উপর। 

কার্ডিয়াক এরেষ্ট হলে প্রথম কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব সিপিআর দিয়ে হৃৎপিন্ড চালু করা। কার্ডিয়াক এরেষ্ট হয়ে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে হলো শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যা্ওয়া। এর প্রথম ধাক্কাটা লাগে মস্তিস্কে। এক নাগাড়ে মিনিট সাতেক পরিশুদ্ধ রক্ত না পেলে মস্তিস্কের ব্রেন সেলগুলো মরে যেতে থাকে। যত বেশী ব্রেন সেল মারা যাবে, মস্তিস্ক তত বেশী অকার্যকর হয়ে পড়বে। আমাদের শরীরের সবকিছুই যেহেতু মস্তিস্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই মস্তিস্ক অকার্যকর হয়ে যাওয়া মানে হলো পূরো শরীরই অকার্যকর হয়ে যাওয়া। তাই কার্ডিয়াক এরেষ্ট হলে এই ৭ মিনেটের ভিতরই সিপিআর দিয়ে তার হৃৎপিন্ড চালু করতে হবে। যত বেশী দেরী হবে মস্তিস্কের কার্যকারীতা তত কমবে।

আমাদের কারোরই এই সম্পর্কিত জ্ঞান ছিলো না। চাচাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌছাতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লেগেছিলো। মানে হলো ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছিলো। হৃৎপিন্ড চালু করা গেলেও তার মস্তিস্ক সাড়া দিচ্ছিলো না। তার বাকি সব ছেলে-মেয়ে বিদেশে থাকায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো। মস্তিস্কের সাথে সাথে তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অসাড় হয়ে গিয়েছিলো। 

আমাদের সবারই হয়তো এসব অজানা থেকেই যায়, যদি না পরিবারের কারো এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। চাচার বড় ছেলে বা ম্যানেজার যদি জানতো তাহলে হয়তো নিজেরাই চেষ্টা করতো সিপিআর দিয়ে হৃৎপিন্ড চালু করার। 

এবার আসল কথায় আসি। শরীরের এরকম নানা অসূখ-বিসূখ নিয়ে বাংলাদেশ বেতারে চমৎকার অনুষ্ঠান হয়। জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেল এর তৈরী করা এসব প্রচারিত হয় সূখী সংসার নামের অনুষ্ঠানে প্রতিদিন রাত ৮:১০ মিনিটে। আর এসব অনুষ্ঠান আপনি রেডিও ছাড়াও বাংলাদেশ বেতারের ওয়েব সাইট বা মোবাইলে এপ দিয়েও শুনতে পারবেন। এছাড়া ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউবেও ভিডিও আপলোড করা হয় যা যে কোন সময় শুনতে পারেন। 

হৃদরোগে জীবন বাঁচাতে প্রাথমিক চিকিৎসা সিপিআর 

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ

হার্টের ব্যথা না গ্যাসট্রিকের ব্যথা বুঝবেন যেভাবে

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য

বাংলাদেশ বেতারের ওয়েব সাইট ঢাকা ক (লাইভ রেডিও লিংক থেকে অন্যান্য কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে পারবেন)
জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেল এর ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল
বাংলাদেশ বেতার এন্ড্রয়েড এপ  

এছাড়া রেডিও সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেসবুক পেজে জয়েন করতে পারেন
Rado Lovers of Bangladesh
Central Radio Listeners Club

বাংলাদেশ বেতার তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিতই কুইজের আয়োজন করে থাকে। পুরস্কার হিসেবে রেডিও এবং প্রাইজবন্ড দেয়া হয়।

তো আর দেরী কেন ??? আজই বাংলাদেশ বেতার শুনুন এবং নানা বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করুন।

হ্যাপি ডিএক্সইং 

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।