৭৫ এর স্মৃতি

আব্বা মাত্র কয়েকমাস আগেই ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে বদলি হয়েছে। আমরাও ঢাকা থেকে চলে এসেছি। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন স্কুল, নতুন মানুষজন। একটু একটু করে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। ময়মনসিংহ তখন একেবারেই মফস্বল শহর। আর পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট বলা চলে শহরের একপ্রান্তে, মাসকান্দায়। 

আমি পড়ি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে। বয়স বছর দশেক। আব্বা অফিসের কি এক কাজে যেন ঢাকা গিয়েছে। ১৫ তারিখ সকালেই কার কাছে যেন শুনলাম ঢাকায় কিছু একটা হয়েছে। বাসার সবাই তখন আব্বাকে নিয়ে চিন্তিত। আমার যদিও এতসব কিছু বুঝার মতো বয়স হয় নাই, তারপরও আম্মার শুকনো মুখ দেখে কিছুটা ভয় ভয় করছিলো। সেসময় তো মোবাইল ছিলো না, ল্যান্ডফোন ও সবার বাসায় নাই। বাসায় সেসময় রেডিও ও ছিলো না। টিভি একটা ছিলো বটে, কিন্তু ঢাকা টিভি ষ্টেশন ধরতে পারা অসম্ভব একটা ব্যাপার। আর টিভি ষ্টেশন চালুও হতো সন্ধ্যার পর। ময়মনসিংহে তখন ও আলাদা কোন টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র হয় নাই।  দৈনিক পত্রিকা আসতো দূপুরের দিকে সুতরাং আমরা সবাই অন্ধকারে। 

আম্মার কাছে শুনলাম আব্বার সেদিনই আসার কথা। বারান্দায় গিয়ে দেখি আব্বার সহকর্মীরা কলোনীর রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলছেন। একজন আমাকে দেখে হাত তুলে ডেকে আব্বার কথা জানতে চাইলেন। আমিও বললাম আজই আসার কথা। 

ঘরে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পর আবার বারান্দায় গিয়ে দেখি আব্বা, সবার সাথে কথা বলছেন। আম্মাকে দৌড়ে গিয়ে খবর বলেই আমি নিচে নামলাম। আব্বা তখন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসার কাহিনী বলছেন। আমার হাতে ব্যাগ দিয়ে বললেন বাসায় যাও। 

আমি বাসায় আসলাম। আব্বাও কিছুক্ষণ পরে বাসায় আসলেন। কাপড় চেঞ্জ করতে করতেই বলছিলেন ঢাকার কথা। আর্মিরা শেখ সাহেব’কে মেরে ফেলেছে। যদিও কনফার্ম খবর পাওয়া যায় নাই, হয়তো তার বাসার সবাই নিহত। আব্বা সকালেই রওনা হয়েছিলেন। রাস্তায় তেমন সমস্যা হয় নাই। কেবল বেইলী রোড দিয়ে আসার সময় সেরনিয়াাতের সরকারী বাসার সামনে প্রচুর লোক দেখেছেন। লোক মুখে শুনেছেন সেই বাড়িতে ৫০/৬০ জন কে মারা হয়েছে। তার বাসায় কারো বিয়ের আয়োজন ছিলো। গ্রামের বাড়ী থেকে আসা লোকজন ছিলো বাড়ীতে। 

সেদিন সারাদিনই সবাই ফিসফাস করে কথা বলছিলো। কোন সঠিক খবরই পাওয়া যাচ্ছিলো না। তবে সন্ধ্যা নাগাদ অবশ্য জানা গেলো বঙ্গবন্ধু’কে স্বপরিবারেই হত্যা করা হয়েছিলো। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।