ইদানিং কেমন যেন লাগে। কি হওয়ার কথা ছিলো আর কি হচ্ছে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা কেমন যেন পরস্পর বিরোধী হয়ে যাচ্ছে। অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলতে আমরা এক সেকেন্ড দেরী করি না, অথচ নিজের ব্যাপারে সব ঠিক।
আজ ফেসবুকের এক গ্রুপে একজন পোষ্ট দিয়েছিলেন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে। তাকে যে ভাবে এবং যে ভাষায় তুলোধূনো করা হলো তাতে মনে হলো সামনে পেলে হয়তো গণপিটুনি দিতে পিছপা হতো না। পোষ্ট ছিলো এরকম
“শীতের সময় বিভিন্ন স্হানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ করা কি ঠিক হবে ?
কোথায় কিভাবে অভিযোগ করতে হয় ?”
প্রথম যে কমেন্ট ছিলো সেটা ছিলো এরকম
“পাকনামি একটু কম করলে হয় না ভাই? এমনেই দেশে খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ ই নাই। সব অবৈধ দখল। আপনার কোন স্বার্থে আঘাত লাগতেছে একটু জানাইয়েন৷”
আরো একটি কমেন্ট
“অমানুষিক চিন্তাভাবনা। অবৈধ ভাবে মানে কি? সরকারি কলোনী তে যেটা হয় সেটা নেওয়া হয় সিড়ি থেকে আর প্রাইভেট এলাকায় নেয় খাম্বা থেকে তাতে তহ আপনার বিল দিতে হয় নাহ। বিদুৎ অফিস এর লোক আইসা মানা করে না, আইছে অবৈধ শিখাইতে, আপনার মাথায় সমস্যা আপনার ডাক্তার দেখানো উচিত।”
এবং এই কমেন্ট
“আরে ভাই ভাল জিনিস নিয়ে একটু চুল্কানি না করলে হয়না? কোটি কোটি টাকা মেরে দিছে দূর্নীতিবাজ দের বিরুদ্ধে কিছু করেন না, সামান্য দু’টাকার বিদ্যুৎ নিয়ে পড়লেন।”
তবে কিছু মানুষ সাপোর্টও করেছেন। যেমন
“আমরা মনে হয় সবাই জানি যে, ভুতুরে বিদ্যুৎ বিল সবার এসেছিলো। এখনো অনেক এলাকায় অাসতেছে। কারন কি জানেন! এই যে চোরাই সংযোগ গুলো যাচ্ছে। শুধু ব্যাডমিন্টন না৷ ওভারঅল বলছি। এগুলোর জন্য সরকার কোন বিল পাচ্ছে না৷ অথচ কারেন্ট ফুরাচ্ছে৷ এগুলা তো সরকার বুঝিয়ে দিতে হবে৷ দেখেন বিদ্যুৎ খাতে শুধু লস অার লস৷ এই লস পুরন করার জন্য বিদ্যুৎ অফিস ভুতুরে বিল করে এবং সরকারকে লাভ দেখানো হয়। আল্টিমেটলি আমাদেরই কিন্তু এই মাসুল টা দিতে হচ্ছে৷
গতকাল রাতে আরেকটি পোষ্ট দেখেছিলাম। সেটি ছিলো গাড়ীতে টিন্টেড গ্লাসের ব্যবহার নিয়ে। ভদ্রলোক এই ধরণের গ্লাসের ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়মনীতি জানতে চেয়েছিলেন। অনেকেই উত্তর দিয়েছিলেন। যেমন একজন উত্তর দিয়েছিলেন – গাড়ী প্রস্তুতকারক যদি অরিজিনাল টিন্টেড গ্লাস দিয়ে থাকে তবে সেটি ব্যবহার করা যাবে। তবে টিন্টেড গ্লাস পেপার দিয়ে সাধারণ গ্লাসকে টিন্টেড বানানো যাবে না।
আরো একজন উত্তর দিলেন এরকম – একজন স্কিন স্পেশালিষ্ট ডাক্তারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিন যে আপনার স্কিন সূর্যালোকের ইউভি (আল্টা ভায়োলেট) রে সেনসেটিভ। তারপর সেটি জেলা সিভিল সার্জন দ্বারা সত্যায়িত করে বিআরটিএ’তে জমা দিন প্রয়োজনীয় ফি সহ। টিন্টেড গ্লাস ব্যবহারের পারমিশন পেয়ে যাবেন।
ঘটনা হলো সাকিব আল হাসান পূজা মন্ডপে গেলে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে। তার জন্য লাইভে রাম দাঁ দেখিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। অথচ এসব ছোটখাট চুরিচামারিকে আমরা কোন অপরাধ বলে মনে করি না। না ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে, না নৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে।
এই জন্যই কবি বলেছেন – তুমি করলে হারাম, আমি করলে আরাম। (শাজাহান শামিম)
ফেসবুক মন্তব্য