আমার তৈরী কার্ড পর্ব ১

বছর দুই হলো কার্ড / স্ক্র্যাপবুক আর জুয়েলারি নিয়ে টুকটাক কাজ করছি। নিতান্তই শখের বিষয়। অন্যান্য শখের মতোই এখানে টাকা খরচ করতে হয়। জুয়েলারি তৈরির বেশ কিছু জিনিস পাওয়া গেলেও কার্ড / স্ক্র্যাপবুক তৈরীর অনেক কিছুই এখানে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরণের টুলস। শুধু দেশে পাওয়া যায় এমন কাগজ / আঠা / এন্টিকাটার / রং ইত্যাদি’র উপর ভর করে অনেক কিছুই হয়তো করা যায়, তবে তাতে ব্যক্তিগত দক্ষতার বিষয়টি মূখ্য হয়ে উঠে। কারো হয়তো এই দক্ষতা জন্মগত, কেউ হয়তো নিয়মিত চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করেছেন। ইন্টারনেটের যুগে ইউটিউব অথবা বিভিন্ন সাইটে দেখা যায় দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জন নানারকম টুলস ব্যবহার করে কত অনায়াসে অসাধারণ সব কার্ড অথবা স্ক্র্যাপবুক তৈরি করে ফেলছেন স্বল্প সময়ে। এসব দেখতে দেখতেই মনে হলো নিজেও তো তৈরী করতে পারি। সমস্যা হলো এ ব্যাপারে নিজের কোন দক্ষতা নাই। ছোটবেলায় খাতার কাগজ ভাঁজ করে টুকটাক ছবি একে ঈদকার্ড বানানোর হালকা-পাতলা অভিজ্ঞতা (?) অবশ্য ছিলো, যদিও আমার আকার হাত একেবারেই সূবিধার না। তখনও ছিলো না, এখনও নাই।

যাই হোক এই বুড়ো বয়সে এসে সময় কাটানোর জন্য টুকটাক কার্ড বানানো শুরু করলাম, সেই সাথে চললো বিভিন্ন টুলস সংগ্রহের কাজ। কাগজ, স্কেল, এন্টিকাটার, আঠা, রং এসব তো দেশেই পাওয়া যায়। প্রথম টার্গেট ছিলো একটা পেপার ডাইকাটিং মেশিন কেনার। শুরুতে অবশ্য কিনেছিলাম, এমবোসিং মেশিন। একসময় কিনলাম সিজিক্স বিগশট প্লাস নামের পেপার ডাই কাটিং এবং এমবোসিং মেশিন। সেটা দিয়েই এখন কাজ করি। আরো বেশ কিছু টুলস আছে। সেগুলির সাথে ভবিষ্যতে আস্তে-ধীরে পরিচয় করিয়ে দিবো।

ডাই কাটিং অথবা এমবোসিং এর জন্য শুধু এই মেশিন হলেই চলে না, সাথে দরকার হয় বিভিন্ন ডিজাইন এর কাটিং ডাইজ অথবা এমবোসিং ফোল্ডার। অসংখ্য ডিজাইন আছে আর তাই প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু কাটিং ডাইজ আর এমবোসিং ফোল্ডার কিনতে হয়।

আজকের এই কার্ড তৈরী করতে বেশ কিছু কাটিং ডাইজ, ষ্ট্যাম্পস, ষ্ট্যাম্প প্যাড, ফয়েল পেপার, আঠা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। টুলস হিসেবে পেপার ট্রিমার, ডাই কাটিং মেশিন, ষ্ট্যাম্পিং টুল, লেমিনেটিং মেশিন ইত্যাদি।

বেস কার্ড তৈরী করা হয়েছে সাধারণ এ৪ সাইজের সাদা কার্ডবেস থেকে। এগুলো ১০০ শিটের প্যাকেট হিসেবে পাওয়া যায়, দাম ২৫০ টাকার মতো। এরপর ব্যবহার করা হয়েছে কমলা রং এর কার্ডষ্টক, এটি কিনেছিলাম ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ / পেজ Passion For Papers থেকে। এই কার্ডষ্টকে পলকা ডট প্রিন্ট করা হয়েছিলো লেজার প্রিন্টারে। পরে ফয়েলিং করা হয়েছে লেমিনেটিং মেশিন দিয়ে। শেষে ডাইকাটিং মেশিনে কাটা হয়েছে আয়তাকারে। এই অংশটির এক সাইডে ক্রস ষ্টিচের জন্য দুই সারি ছিদ্র করা হয়েছে ডাইকাটিং মেশিনে ডাইজ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে হলুদ সুতা ব্যবহার করে ক্রস ষ্টিচ করা হয়েছে। ইচ্ছে ছিলো সেলাইগুলোর মাঝে সিড বিডস ব্যবহার করার, আপাতত এই পরীক্ষামূলক কার্ডে সেটা বাদ দেয়া হয়েছে। এই ক্রস ষ্টিচের পাশেই ডাইজ দিয়ে কাটা কালো ও সাদা দুটো ওভাল শেপের লেয়ার / ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। সাদা লেয়ারে ষ্ট্যাম্পিং করে ‘You are so Cool’ লেখা হয়েছে। সবশেষে আঠা / ডাবল সাইডেড টেপ ব্যবহার করে লেয়ার / ম্যাট মূল কার্ডবেসে বসানো হয়েছে।

নিচের ভিডিও’তে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডাইজ দেখানো হয়েছে। কিনতে চাইলে নিচের লিংকগুলি ঘুরে আসতে পারেন

১. আয়তাকার ডাইজ, ডাবল সিইউং থ্রেড সহ (৮ পিসের সেট)
২. ক্রস ষ্টিচ ডাইজ (২ পিসের সেট)
৩. ওভাল শেপ ডাইজ (৭ পিসের সেট)
৪. ফয়েল পেপার (৫০ শিট)

https://www.youtube.com/watch?v=JeTpQvZRhDA&t=7s

হ্যাপি ক্র্যাফটিং
ফেসবুক পেজ + ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন, লাইক দিন, কমেন্ট করুন, প্রশ্ন করুন। আগাম ধন্যবাদ

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।