ইদানিং চিকিৎসা খরচ মনে হয় দিন দিন বাড়ছেই। যত দিন যাচ্ছে তত চিন্তা বাড়ছে নিজের কি হবে। আব্বা-আম্মার চিকিৎসা ব্যয় না হয় পরিবারের কিছু সঞ্চয় ছিলো বলে এখন পর্যন্ত মোটামুটি করা যাচ্ছে। আর ১০/১৫ বছর পর নিজের বয়স যখন ৬৫-৭০এর কোঠায় পৌছাবে তখন কি করবো !?! আর রাজকীয় কোন রোগ হলে তো চিন্তায় করা যাচ্ছে না।
নভেম্বরের ২৭ তারিখ আব্বাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিলো, রিলিজ করা হয়েছিলো ডিসেম্বরের ১ তারিখ। এই ৪ দিনে মোট খরচ প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। খাতওয়ারি খরচ অনেকটা এরকম –
ফিক্সড বিল (এডমিশন চার্জ, ডাক্তার অন্যান্য আনুসঙ্গিক) – ৳ ১৪,৫৩০.০০
হাসপাতাল চার্জ (বেড ভাড়া) – ৳ ১৬,৮০০.০০
বিভিন্ন পরীক্ষা – ৳ ১৬,৬২৮.০০
ঔষধ – ৳ ৪,৮০৮.০০
সর্বমোট – ৳ ৫২,৫৬৭.০০ (সার্ভিস চার্জ সহ)
হাসপাতাল থেকে বাসায় আনতে ৬০০ টাকা এম্বুলেন্স চার্জ দিতে হয়েছে। আর আয়া / ওয়ার্ডবয় আর এম্বুলেন্সের লোক যারা দোতালায় ষ্ট্রেচার তুলে দিয়েছিলো তাদের বকশিষ বাবদ কিছু। হাসপাতালের একজন পরিচালক দুলাভাই এর পরিচিত থাকায় তিনি কিছু ছাড় দিয়েছিলেন। তাতে খরচ নেমে এসেছিলো ৫০ হাজারের ঘরে। সাধারণ বেডে বা কেবিনে রাখলে হয়তো খরচ কিছুটা কমতো। তবে আব্বার বয়স এবং শারীরিক সমস্যা বিবেচনায় আমরা তাকে HDU রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাতে ২৪ ঘন্টা ডাক্তার নার্স এর নজরদারীতে থাকবে এটাই ছিলো বড় সূবিধা।
উত্তরায় সবই বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক। নতুন একটি হাসপাতাল হয়েছে (কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল) ৬ নাম্বার সেক্টরের ঈশা খাঁ এভিনিউ এ , সেটি শুনলাম সরকারী। তবে সার্ভিস কেমন এখনও জানি না। এরপর কাছাকাছি সরকারি হাসপাতাল বলতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। সব মিলিয়ে উত্তরায় চিকিৎসা সেবা নিতে হলে বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকের উপরই নির্ভর করতে হয়। এর চাইতেও বড় সমস্যা আছে। কোন জরুরী প্রয়োজনে সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তার খূঁজতে হয় হ্যারিকেন দিয়ে। উত্তরায় আসার আগে এই সমস্যা কখনই হয়নি। বাসার আশে-পাশে কোন না কোন ডাক্তার চেম্বার ছিলো, হাউজ কলে তাদের নিয়ে আসা যেতো। ১৪ নাম্বার সেক্টরে আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন বসতেন, তাকে কলে আনা যেতো। তিনি বাড়ী বিক্রি করে চলে গেলেন তার দেশের বাড়ী। এখন আর কাউকেই পাই না। এখন সব ঔষধের দোকানদারদের রাজত্ব। এক সৌদি প্রবাসী এখানে নতুন এক ঔষধের দোকান দিয়েছেন। কথাবার্তায় আমি বুঝি নাই তিনি ডাক্তার না। আব্বা-আম্মাকে দুইবার দেখিয়েছি। কপাল ভাল তার কাছ থেকে কোন প্রেসক্রিপশন নিতে হয়নি। জাষ্ট প্রেসার ইত্যাদি এবং শারীরিক অবস্থা বুঝার জন্য এনেছিলাম। প্রেশার এবং অন্যান্য কিছু লেখার জন্য দেখি সাদা কাগজ ব্যবহার করেন। জানতে চাইলে আমাকে বললো যে বাড়ীওয়ালার সাথে চুক্তি এখনও কমপ্লিট হয় নাই, তাই প্যাড ছাপানো হয় নাই। আমি বিশ্বাস করেছিলাম। বছর পার করে জানতে পারলাম তিনি আসলে এলএমএফ, সাথে কি একটা ডিপ্লোমা আছে। কিন্তু নামের শুরুতে ঠিকই ডাক্তার লিখেন। কি এক মুসিবত।
ভাবতে ভাবতে একদিন ঘুমের ঘোরে চলে যেতে পারলে সবচেয়ে ভাল। বুড়ো বয়সে যে শারীরিক কষ্ট, সে তো আব্বা-আম্মাকে দেখেই বুঝতে পারছি প্রতিনিয়ত।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন নিরন্তর।
ফেসবুক মন্তব্য