দু’দিন আগে ফেসবুকের ডিএসডি গ্রুপে একজন সাহায্য চাইলেন তেলাপোকা দমনের ব্যাপারে। বেশ ভাল রেসপন্স ছিলো। এরকম পোষ্ট অহরহই দেখা যায়। কখনও তেলাপোকা, কখনও পিঁপড়া, কখনও বা ছাড়পোকা। এক-আধবার টিকটিকি নিয়েও পোষ্ট দেখেছি। মানে হলো এরকম ছোট ছোট পোকা-মাকড়ের অত্যাচার অনেকেই নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। আমি যে বাসায় থাকি সেখানেও তেলাপোকার অত্যাচার ছিলো। রাত হলেই সব দল বেঁধে বের হতো। এক রাত্রে তো ঘুমের মধ্যে গায়ের উপর উঠে পড়েছিলো একটা। ঘুম ভাঙ্গার পর এসিআই কোম্পানির ককরোচ কিলার নিয়ে সোজা বাথরুমে এবং অকৃপন ভাবে স্প্রে করলাম সব জায়গায়। বাথরুম দিয়েই এগুলো বেশী আসতো। পরদিন ষ্টোর আর যেসব জায়গা কম পরিস্কার করা হয় বা জিনিসপত্র ষ্ট্যাক করে রাখা হয় সে সব জায়গায় ভালমতো স্প্রে করলাম। ২/৩ দিনের মধ্যেই দেখা গেলো এখানে-সেখানে প্রচুর তেলাপোকা মরে পড়ে আছে। সেই সাথে এদের সংখ্যাও ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এখন ২/১টা কালেভদ্রে দেখা যায়।
তবে এই বাসায় ছারপোকার যন্ত্রনা মারাত্মক। পাশে একটা খালি প্লটে ছাপড়া ঘর করে কিছু নিম্নবিত্ত পরিবার থাকতো। বিল্ডিং তোলার আগে সেসব ভাঙ্গার পর থেকেই বাসায় ছারপোকার আক্রমন শুরু। এখন প্রায় প্রতিটা ঘরেই কম-বেশী আছে। কোন কিছু দিয়েই শতভাগ ছারপোকা মুক্ত করা যাচ্ছে না। মাঝে একবার আমি আমার সব তোষক-বালিশ ফেলে দিয়েছিলাম। নতুন ম্যাট্রেস/বালিশে কিছুদিন ছারপোকা ছিলো না। কিন্তু ইদানিং আবার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ম্যাট্রেসে যে প্লাষ্টিক/পলিথিন এর কাভার দেয়া থাকে সেটা ছিড়ে যাওয়ায় ফেলে দেয়ার পর থেকে। আমি ২/৩ দিন পর পূরো ম্যাট্রেস উল্টিয়ে ছারপোকা ধ্বংস করি। দেখা যায় পরদিনই আবার বেশ কিছু এসে হাজির হয়েছে।
ক্র্যাফটিং এর জন্য একটা হিট গান কিনেছিলাম শখ করে। এখন এই হিট গানের মূল কাজ হলো ছারপোকা নিধন। বালিশ আর ম্যাট্রেসের কোনায় কোনায় লুকিয়ে থাকে যেসব সেগুলো এই হিটগান দিয়ে মারতে হয়। মাঝে কয়েকদিন সাবান পানি স্প্রে করেছি পূরো ম্যাট্রেসে, সাময়িক ফল পাওয়া গেলেও আবার পূর্ণোদ্যমে বংশ বিস্তার শুরু করে দেয়। ভিতরের ম্যাটেরিয়াল নষ্ট বা পঁচে যাওয়ার ভয়ে খূব বেশী স্প্রে করি না। মাঝে মধ্যে ইস্ত্রি (আয়রন) দিয়ে পূরো ম্যাট্রেস / বালিশ গরম করে এগুলো মারার চেষ্টা করি। তারপরও শেষ হয় না।
গতবছর নেটে একবার ভালমতো খোঁজখবর নিলাম এই ছারপোকা দমন করার কি কি পদ্ধতি আছে জানার জন্য। শুরুতেই জানলাম এই ছারপোকা কেবল বাংলাদেশ বা ভারতীয় উপমহাদেশেই কেবল না, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সহ আরো অনেক দেশেই আছে। আমেরিকায় অবশ্য স্পেশালাইজড সার্ভিসও আছে এই ছারপোকা দমনের জন্য। বাংলাদেশেও কেউ কেউ এরকম সার্ভিস দিয়ে থাকে। কিন্তু এই বাসায় দূ’জন বয়স্ক রোগী থাকায় সেসব সার্ভিস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ধরণের স্প্রে আছে। প্রবাসী এক কাজিনের মাধ্যমে এরকম একটা স্প্রে পেয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো তেমন কার্যকরি মনে হয় নাই।
নেট ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে জানা গেলো ল্যাভেন্ডার এসেনসিয়াল ওয়েল প্রতিদিন ২/৩ ফোটা করে বিছানা / বালিশে দিলে ছারপোকার আক্রমন কমে আসে এবং একসময় প্রায় ছাড়পোকা শুন্য হয়ে যায়। ঢাকায় কোথায় পাওয়া যায় খোঁজ করতে গিয়ে এক ফেসবুক পেজ পেলাম যারা বিভিন্ন ধরণের এসেনসিয়াল ওয়েল বিক্রি করে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেলো ১০ এমএল এর ছোট এক বোতল ল্যাভেন্ডার ওয়েলের দাম ১৬০০ টাকার মতো। মানে মশা মারতে কামান দাঁগা আর কি।
আগোরায় কিছু একটা কিনতে গিয়ে একদিন চোখ গেলো সারি সারি এয়ার ফ্রেশনারের দিকে। সেখানে একটায় লেখা ল্যাভেন্ডার। ক্যানের গায়ে লেখা দেখলাম সামান্য পরিমান ল্যাভেন্ডার ওয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। চিন্তা করতে করতে কিনেই ফেললাম, দেখি না কি হয়। ২০০ টাকার ক্যান ব্যবহার করলাম টানা কয়েকদিন। প্রথম প্রথম নিজেরই মাথা ধরে যেতো গন্ধে। বালিশ/তোষক/ম্যাট্রেস সব জায়গায় সরাসরি স্প্রে করলাম। ফলাফল – ছারপোকার যন্ত্রনা কমতে শুরু করলো। এক সময় প্রায় শুণ্যের কোঠায় নেমে আসলো।
বছরের উপরে বেশ ভাল অবস্থা ছিলো। মাঝে মধ্যে ছারপোকার সন্ধান পাওয়া গেলে বিপুল বিক্রমে আবার স্প্রে করা হতো। মাঝে মধ্যে সাবান পানি স্প্রে করে এর উপর ল্যাভেন্ডার এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করতাম। এরপর আস্তে আস্তে আবার বাড়তে লাগলো ছারপোকার সংখ্যা। মনে হলো ল্যাভেন্ডারে তারা অভ্যস্থ হয়ে গেছে। এখন স্প্রে করলে ঘন্টা তিনেক হয়তো আরামে থাকা যায় রাতে, এরপর আবার শুরু করে যন্ত্রনা।
এরমধ্যে দেখলাম নন ঊভেন ব্যাগ যেগুলো আছে, সেখানে ছারপোকা থাকে না। গজ হিসেবে পাওয়া গেলে হয়তো বালিশ / ম্যাট্রেসের কাভার বানানো যেতো এগুলো দিয়ে। মাঝে একবার প্যারাসুটের কাপড় খোঁব করেছিলাম। ম্যাট্রেসের কাভার বানানোর জন্য, পাই নাই।
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে দেখলাম অনেকেই এলুমিনিয়াম ফসফাইড নামে একটা ট্যাবলেট ব্যবহার করতে বলেছেন ছারপোকা দমনের জন্য। ফসলের জমিতে পোকা-মাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করে এই জিনিস। ঘরের কয়েক জায়গায় এই ট্যাবলেট ছড়িয়ে দিয়ে দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দিতে হবে ২৪ ঘন্টার জন্য। তখন সে রুমে থাকাও যাবে না। এটা ব্যবহারে নাকি বছর খানেক কোন ছারপোকা থাকে না। তবে মারাত্মক বিষ, মানুষ এর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে তার কোন চিকিৎসা নেই। বাসায় বয়স্ক দূ’জন রোগী থাকায় এই জিনিস ব্যবহারের সাহস পাচ্ছি না।
আপাতত ছারপোকার সাথে চোর পুলিশ খেলা চলছেই। হয়তো চলতেই থাকবে।
ফেসবুক মন্তব্য