নিষিদ্ধ বই

বাসায় কিছু গল্পের বই ছিলো। বই গুলো নিউজপ্রিন্টে ছাপা। আমরা বাসে / ট্রেনে কোথাও গেলে আম্মা হকারদের কাছ থেকে কিনতো। সেরকম প্রায় গোটা ১৫ বই শেলফে ছিলো। পত্রিকা / ম্যাগাজিন পড়ার পর এই বইগুলো দিয়েই আমার গল্পের বই পড়া শুরু।
 
বইগুলোর মধ্যে ছিলো মাসুদ রানা, কিরীটি রায় সহ আশুতোষ, ফাল্গুনি সহ আরো কয়েকজনের গল্প / উপন্যাস। তখন পড়ি মনে হয় ক্লাস ফাইভে। মাসুদ রানার ধ্বংস পাহাড় হাতে নিয়ে পড়ছিলাম। আম্মা হঠাৎ এসে বইটা আমার হাত থেকে নিয়ে বললো এই বই পড়ার বয়স তোমার হয় নাই। বড় হয়ে পড়বা।
 
আমার তো মাথাতেই ঢুকলো না যে বই পড়তে আবার বয়স লাগে কেন। মাথার মধ্যে কেবল কিলবিল করতেছে কি এমন বিষয়। এদিকে আম্মা যে বই নিয়ে কোথায় রাখছে সেটা আর খূজে পাই না। শেলফে সব বইই আছে, কেবল মাসুদ রানার যে কয়টা বই ছিলো সব উধাও।
 
একদিন দূপুর বেলা দেখি আম্মা শুয়ে শুয়ে মাসুদ রানা পড়তেছে। আমিও তক্কে তক্কে থাকলাম পড়ার পরে বই কোথায় রাখে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পর আম্মা যেন কোথায় গিয়েছে, আমি যথারীতি রুমে ঢুকে খোঁজ করলাম বই এর। চোখে দেখা যায় এমন কোথাও নাই। কি মনে করে তোষকের এক কোনা তুলতেই দেখি সব কয়টা মাসুদ রানা সেখানে। আমাকে আর পায় কে।
 
ছুটির দিনে আম্মা যখন রান্নাঘরে আমি তখন মাসুদ রানা স্কুলের বই এর নিচে রেখে পড়তাম। আম্মা রান্না শেষ করে গোসলে ঢুকলে আমি বই আবার তোষকের নিচে রেখে আসতাম। এই ভাবে সব কয়টা মাসুদ রানা শেষ করেছিলাম। পরে ক্লাস এইটে উঠার পর আর কোন রেষ্ট্রিকশন ছিলো না। তবে স্কুল / কলেজের বই এর নিচে গল্পের বই রেখে পড়ার অভ্যাস আরো কয়েক বছর চালু ছিলো। একবার পরীক্ষার সময় এরকম ভাবে গল্পের বই পড়তে গিয়ে ধরা পড়ে কানমলাও জুটেছিলো।
 
আগেকার দিনগুলো কি চমৎকার ছিলো। বুক ধুকপুক করতো, আবার মজাও লাগতো।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।