আগে যখন নিয়মিত রেডিও শুনতাম ভয়েস অফ আমেরিকার ইংরেজী সার্ভিসের ন্পেশাল ইংলিশ এর অনুষ্ঠানগুলো ছিলো অত্যন্ত প্রিয়। স্পেশাল ইংলিশে সাধারণত ধীর গতিতে ইংরেজী পড়া / বলা হতো। সেই সাথে তাদের শব্দ ভান্ডারও ছিলো সীমিত। অনুষ্ঠানগুলি ছিলো নন-ইংলিশ স্পিকিং শ্রোতাদের জন্য, যাতে তারা সহজেই ইংরেজী বুঝতে পারে। এই সব স্পেশাল ইংলিশ প্রোগ্রামের মধ্যে আমার কাছে ভাল লাগতো Words and their stories প্রোগ্রামটি। এই অনুষ্ঠানে সাথারণত আমেরিকান ইংরেজীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ, বাগধারা ইত্যাদি কিভাবে এলো তার গল্প বলা হতো। খূবই চমৎকার ছিলো অনুষ্ঠানটি।
বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাতেও এরকম ২/১টি শব্দের গল্প শুনেছিলাম বিচ্ছিন্ন ভাবে। আজ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রামমান লাইব্রেরী থেকে বই আনতে গিয়ে এরকম ২টি বই পেয়ে গেলাম। একটি ‘বাগধারার গল্প’ লিখেছেনএ,কেএম আশরাফুল হক। অন্যটি সমর পালের লেখা ‘প্রবাদের উৎসসন্ধান’। কয়েক পাতা করে দুই বই এর কিছু অংশ পড়লাম। মজা লাগছে।একটি গল্প শুনিয়ে দেই আপনাদের। ‘অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’ – এই প্রবাদ যেভাবে এলো। এই গল্প অবশ্য আমি আগেও শুনেছি। কোন এক রাজার এক দুষ্ট গরু ছিলো। প্রতিদিন দূধ দোয়ানোর সময় সে নানারকম কান্ডকীর্তি করতো। রাজা একদিন রেগে গিয়ে বলেই ফেললেন তিনি পরদিন ঘুম থেকে উঠে যাকেই দেখবেন তাকেই গরুটি দান করে দিবেন। এক তাঁতী পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাজার কথাটি শুনে ফেললো। তড়িঘড়ি বাড়ী ফিরে সে পরিকল্পনা করতে লাগলো কি করে সেই রাজ গরু সে করায়ত্ব করতে পারে। হঠাৎ তার মনে হলো গরু যে আনতে যাবে দড়ি তো লাগবে টেনে আনতে। এতো রাতে দড়ি কিভাবে পায়। সে তার কাপড় বোনার সুতা দিয়ে দড়ি পাকানো শুরু করলো। দড়ি পাকানো শেষ হলে দেখা গেলো তার সুতোও শেষ হয়ে গেছে। তাঁতীর মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু পরক্ষণেই সে চিন্তা করলো রাজ গরু পেলে তার দূধ বেঁচেই সে আবার সুতা কিনতে পারবে। আর ঠিক তখনই তার মনে হলো তার মা কয়েকদিন ধরে তার কাছে টাকা চাইছিলো। হায় ! হায় !! বুড়ি তো দূধ বেঁচা টাকা দেখলে সব নিয়ে নিবে, তার কাছে কোন টাকাই থাকবে না। এই চিন্তা করে সে ঘুমন্ত মায়ের চোখ দু’টো নষ্ট করে দিলো যাতে সে আর গরু, দূধ কিংবা টাকা কোনটাই দেখতে না পারে। ভোর হওয়ার আগেই তাঁতী রাজবাড়ীর সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। ভোর হলো, রাজার ঘুম ভাঙ্গলো এবং অবশেষে রাজা বাইরে এলেন। সামনে তাঁতীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কি দরকার। তাঁতী তার নিবেদন পেশ করলো। রাজা রেগে গিয়ে পেয়াদা দিয়ে পিটিয়ে তাকে দূর করে দিলেন। তাঁতী তার কাজের সম্বল সুতা শেষ করে ফেলেছে, মায়ের চোখ নষ্ট করে ফেলেছে। আর এখন সে গরুও পেলো না। তাই তো বলে ‘অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’।
বই দু’টো কিনে ফেলতে পারেন অথবা সংগ্রহ করে পড়তে পারেন। আপনার নিজের এবং বাচ্চাদের ভাল লাগবে আশা করি।
ভাল থাকবেন।
Words and their stories এর ওয়েব সাইট
ফেসবুক মন্তব্য