সেদিন ফেসবুকের এক গ্রুপে এক পোষ্ট দেখে থমকাতে হলো। এক ভদ্রলোক তার বড় ভাই নিয়ে যে পারিবারিক সমস্যায় পরেছেন তা নিয়ে পোষ্ট দিয়ে সম্ভাব্য সমাধান চেয়েছিলেন। ডেসপারেটলি সিকিং টাইপ গ্রুপ গুলিতে মানুষ জন নানা ধরণের প্রশ্ন বা সমস্যা নিয়ে হাজির হয়, তার মধ্যে কিছু পারিবারিক সমস্যাও থাকে। এ ধরণের সমস্যা অনেক না হলেও খূব অজানা না। আমরা অনেকেই হয়তো এধরণের সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, কিন্তু সেটি জটিল হওয়ার আগেই হয়তো সমাধান হয়ে গিয়েছে।
সমস্যা ছিলো বড় ভাই’কে নিয়ে। তিনি খূব রগচটা, পরিবারের কারো সাথেই সদ্ভাব নেই। কিছু হলেই ভাঙ্গচুর করেন। এমনকি ঈদের দিনেও খাবার দাবার নষ্ট করেছেন। এই ভাই তেমন একটা পড়ালেখা করেন নি। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। এখান সারাদিন ঘুরে বেড়ান আর বিভিন্ন জনের সাথে ঝগড়া করেন। বাসাতেও একই অবস্থা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো পড়াশোনা করে একটা সময় বেকার থেকেছি, সেসময় অনেকেই হয়তো হতাশাতেও ভূগেছি। তারপর কোন এক সময় চাকরি বা ব্যবসায় যোগ দিয়ে একটা পর্যায়ে এসে সব হয়ে গেছে ‘পুরানো সেসব দিনের কথা’। একবার চিন্তা করে দেখেন এই বেকার থাকার সময় বা হতাশার সময় যদি আরো দীর্ঘায়িত হতো – তাহলে আমাদের কি সেই বড় ভাই এর মতো অবস্থা হতো না।!!! হতে পারতো হয়তো। পোষ্ট পড়ে আমার মনে হয়েছে তার পরিবার হয়তো কিছুটা দায়ী এর জন্য। হয়তো যা চেয়েছে তাই দিয়েছে ছোটবেলা থেকে। একটা সময় এসে হয়তো তার চাহিদা মেটানোর মতো কিছু পায়নি, তারপরও চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেই ছেলে তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য পরিবারের অসহযোগীতাকে দায়ী করেছে। ফেসবুকেই আরো একজনের পোষ্ট দেখেছিলাম কিছুদিন আগে। সে এখন একজন স্থপতি। বলছিলো তার এসএসসি পাশের পরে তার বাবা-মা তাকে তেমন কিছু উপহার দেয়নি। অথচ তার বন্ধুমহলের অনেকেই বাবা-মা’র কাছ থেকে মোবাইল ফোন সহ আরো দামী উপহার পেয়েছিলো। এখন সে স্থপতি হয়ে তার বাবা-মা’কে তার বেতনের টাকা দিয়ে উপহার কিনে দিয়ে অসাধারণ আনন্দ পাচ্ছে। সেই সাথে সে তার বাবা-মা’র কাছে কৃতজ্ঞ যে দামী উপহার দিয়ে তার মাথা নষ্ট করেননি বলে।
সমাধান হিসেবে বেশীর ভাগ তাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা বা রাম পিটুনি দেয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার তাকে ড্রাগ এডিক্ট ধরে নিয়ে রিহ্যাবে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেছিলেন। আমার পরামর্শ ছিলো এরকম
“পড়াশোনা / ব্যবসা কোন কিছুতেই কিছু করতে পারেন নাই এটা বলছেন আপনি। হয়তো এ নিয়ে নিজের মনেই ক্ষোভ আছে। বাসার লোকজন হয়তো এ নিয়ে ভাল মন্দ কিছু বললে তার সেই ক্ষোভটাই বের হয়ে আসে। অনেকেই ড্রাগের কথা বলছেন, কিন্তু পোস্টদাতা তো সেরকম কিছু বলেন নাই। যদি বলতেন সবসময় টাকা চায়, না দিলেই এমন করে তাহলে হয়তো ড্রাগ এডিক্ট হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
প্রথমত আপনাদের পরিবারের বাইরে কোন মুরুব্বি কে বলেন তার সাথে কথা বলতে। সেরকম কেউ না থাকলে কোন ক্লোজ ফ্রেন্ড। তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন কি সমস্যা।
আপনারা যদি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে থাকেন তবে তাকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিন তার চলার মতো। এটি হবে তার ব্যক্তিগত খরচ। থাকা-খাওয়া তো বাসাতেই হচ্ছে। এর মধ্যে পারলে একজন সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলেন, যিনি তার মনের সব ধরনের রাগ/দূঃখ প্রশমনে সাহায়্য করবেন। পরের ষ্টেপ হবে তার জীবিকার ব্যবস্থা করা। ব্যবসায় যেহেতু কিছু করতে পারেন নাই, সে পথে যাবেন না। যে কোন ধরনের চাকরিতে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন। আর চাকরিতে ঢোকার সাথে সাথেই বাসা থেকে যে টাকা পেতো সেটা বন্ধ বা তার কাছ থেকে সংসার চালানোর টাকা চাইতে যাবেন না ভুলেও। তাকে সময় দিতে হবে।। “
পরে অবশ্য সেই ভদ্রলোক আরো একটি ফলোআপ পোষ্ট দেয়ার পর বুঝতে পারলাম তাকে আসলে শোধরানো ব্যাপক কঠিন। তবে একজন খূব ভাল একটি পরামর্শ দিয়েছেন। সেটি’র স্ক্রিণশট দিলাম
তবে আমাদের দেশে এরকম অনেক সমস্যাই ফেলে রাখা হয়। একসময় দেখা যায় সেটি সমাধানের অযোগ্য হয়ে গেছে। যদি শুরুতেই এসব ব্যাপারে কাউন্সেলিং করানোর ব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তো সবারই উপকার হতো।
ভাল থাকুন নিরন্তর।
ফেসবুক মন্তব্য