১. চকবাজার এর অগ্নিকান্ডের পর বনানী, এরপর গুলশান ১ এর ডিএনসিসি এর কাঁচাবাজার। গত কয়েকদিনে ছোট-খাট আরো কিছু অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, যদিও ত্বরিত পদক্ষেপের কারণে হতাহতের ঘটনা নেই। আবার গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ কালবৈশাখীতে সারাদেশে ৬ জন নিহত, ফসল হানির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতেও গাছ উপড়ে রাস্তা বন্ধ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। আর বরাবরের মতো সড়কে দূর্ঘটনা তো আছেই। পত্রিকা / টিভি খুললেই এখন কেবল এইসব নানা দূর্ঘটনার খবর আর ছবি। মন মেজাজও আজকাল ভাল নাই।
২. আজ এপ্রিলের ১ তারিখ। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এপ্রিল ফুল নিয়ে ভ্রান্ত ইতিহাস চর্চার হার এবছর অনেকটাই কম। তারপরও ফেসবুকে ২/৩ জায়গায় চোখে পড়লো। কোন এক গ্রুপে কিছু ছবি দিয়েছিলো একজন, কয়েকজন ছেলে-মেয়ে পথচারী, গাড়ীর যাত্রীদের এবং কর্তব্যরত পুলিশদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো। জনৈক কমেন্ট করলেন মুসলিম হত্যার বার্ষিকী পালন করছে।
৩. আসলেই কি ১লা এপ্রিল রাণী ইসাবেলা আর রাজা ফার্দিনান্দ স্পেন বিজয় করে করে মুসলিমদের বোকা বানিয়ে মসজিদে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিলো ? মুসলিমরা প্রায় ৮০০ বছর স্পেন (আসলে গ্র্যানাডা) শাসনের পর খ্রীস্টানরা যখন তাদের পরাজিত করে তখন নানারকম অত্যাচারের ঘটনা ঘটে, মুসলিমদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়, মসজিদগুলিকে চার্চে রুপান্তর করা হয় – কিন্তু মসজিদে আটকিয়ে পুড়িয়ে মারার কোন ঘটনা ঘটেছিলো বলে জানা যায় না। আর মুসলিমরা পরাজিত হয় ১৪৯২ সালের ২রা জানুয়ারী, ১লা এপ্রিল না। তবে আগুন লাগানোর ঘটনা একটা আছে অবশ্য। স্পেনে মুসলিম শাসন ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার জন্য। মুসলিম এবং তাদের অধিন্যস্ত খ্রীষ্টান এবং অন্যান্য ধর্মালম্বিরা সেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা করে অসংখ্য পুস্তক রচনা করেছিলেন। মুসলিমদের পরাজয়ের পর সেসব পুস্তক একেবারে লাইব্রেরী সহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। বিবিসি’তে একটু ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম বেশ আগে। সেখানে বলা হয়েছিলো মুসলিম শাসকরা যতদিন তাদের অধিন্যস্ত বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের ব্যাপারে সদয় ছিলেন ততোদিন পর্যন্ত এই জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা চলেছিলো। যদিও অন্যান্য ধর্মালম্বীরা সেসময় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছিলেন। অনেকেই তাদের মুসলিম নিয়োগকর্তার নামের শেষাংশ ব্যবহার করতেন নিজেদের নামের সাথে, শুধূমাত্র তাদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসা প্রকাশের জন্য। মুসলিম শাসকরা যখন থেকে কঠোর হতে শুরু করেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরোপ করা আরম্ভ করেন তখন থেকেই মূলতঃ তাদের পতনের শুরু হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। ভিতর থেকে যোগাযোগ করা হয় বাইরের খ্রীষ্টান রাষ্ট্রগুলির সাথে।
এপ্রিল ফুল’স ডে পালন করবেন কি করবেন না, সে সিদ্ধান্ত আপনার একান্তই নিজস্ব। তবে কোন বিষয়ে জানতে হলে আগে পড়তে হবে, বুঝতে হবে।
ভাল থাকুন। ইতিহাস জানুন, পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
ছবি : ফ্রিপিক থেকে নেয়া
Calendar vector created by freepik
ফেসবুক মন্তব্য