বাসা থেকে বের হয়েছিলাম নারায়নগঞ্জ যাব বলে। কোন কাজে না, এমনি ঘুরতে। মানে ট্রেনে করে ঘুরতে। প্রথমে গেলাম বিমানবন্দর ষ্টেশনে। সেখান থেকে যাব কমলাপুর, এরপর নারায়নগঞ্জ। জানতাম সোয়া বারোটার দিকে নারায়নগঞ্জ কমিউটার ট্রেন ছাড়ে কমলাপুর থেকে। আমি বিমানবন্দর ষ্টেশনে পৌছালাম পৌনে এগারোটার দিকে। গিয়ে দেখি কমলাপুর অভিমুখি ট্রেনের জন্য বেশ বড় লাইন, কিন্তু কাউন্টার বন্ধ। এই লাইনে অনেকক্ষণ ধরে কোন ট্রেন নাই। শেষে এক আন্তনগর ট্রেন আসলো যেটার কোন টিকেট নাই। অবশ্য এই ট্রেন আসার পরেই লাইন বেশ ছোট হয়ে এলো, মানে অনেকেই বিনা টিকেটে যাত্রা করলেন।
শেষ পর্যন্ত টিকেট কাউন্টারে লোক আসলো। জানা গেলো জামালপুর কমিউটার ট্রেন আসছে, তার ভাড়া ২০ টাকা। টিকেট হাতে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে আসতেই ট্রেন চলে এলো, আমিও উঠে পড়লাম। এটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা। আগেরবার কমলাপুর গিয়েছিলাম ৪৫ টাকা দিয়ে, সেটি ছিলো আন্তনগর ট্রেন। কমিউটার ট্রেনের ভাড়া কম, মাত্র ২০ টাকা। আবার কিছু কিছু আন্তনগর ট্রেন থামলেও সেগুলোতে অফিসিয়ালি টিকেট নাই। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেকেই এসব ট্রেনে বিনা টিকেটে ভ্রমণ করেন। কেবল আমার মতো কিছু ব্যাক্কল মানসম্মানের ভয়ে টিকেট কেটে ভ্রমণ করে।
মাঝে তেজগাঁও ষ্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রেন কমলাপুর ষ্টেশনে আসলো। তবে আউটারে গতি বেশ ধীর হয়ে গিয়েছিলো। আমি উঠেছিলাম একবারে শেষের বগিতে। ট্রেন থেকে নেমে দেখি প্ল্যাটফর্ম আর শেষ হয় না। এতো লম্বা। শহরতলী প্ল্যাটফর্মে গিয়ে শুনি নারায়নগঞ্জ কমিউটার ৫ মিনিট আগে ছেড়ে গেছে। পরবর্তী ট্রেন দুপুর পৌনে তিনটায়।
কি আর করা। সাথে ক্যামেরা ছিলো। আমি ছবি তোলা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ বসে থাকলাম, মানুষজন দেখলামঅ আবার কিছুক্ষণ ছবি তুললাম। দুপুর ২টা বাজার পর শহরতলী প্ল্যাটফর্মে গিয়ে টিকেট করলাম। নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা।
আবারও বসে থাকার পালা। দুপুর আড়াইটার দিকে লোকজন দেখি সব উঠে দাড়িয়ে সামনের দিকে হাটছে। মানে ট্রেন আসছে। এবার আমি হাটতে হাটতে একদম সামনের দিকে চলে গেলাম। প্রথমে একটু কনফিউজড ছিলাম এই ট্রেন নারায়নগঞ্জের যাবে তো। কারণ কয়েকটি বগিতে লেখা আন্তনগর ট্রেন, কয়েকটিতে দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার। শেষের দিকে নারায়নগঞ্জ কমিউটার লেখা বগি পাওয়া গেলো।
আমি বগিতে উঠে বসে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর লোকোমোটিভ ঘুরিয়ে সামনে লাগানো হলো। বলতে সহজ হলেও বেশ কিছুটা সময় লাগলো এতে। শেষ পর্যন্ত ৪ মিনিট বিলম্বে ট্রেন যাত্রা শুরু করলো। শুরুতে গতি বেশ ধীর ছিলো। অথচ এই অংশটি নতুনই। নারায়নগঞ্জের দিকের লাইনগুলি পুরাতন। আমি যাত্রাপথে গেন্ডারিয়া রেলষ্টেশনটি কেবল চিনতে পারলাম। বাকি কোন ষ্টেশনই চিনতে পারি নাই। এই ষ্টেশনগুলির নামফলক থাকলেও কোন নাম ছিলো না। সহযাত্রীদের কাছ থেকে নাম জেনে নিচ্ছিলাম।
ফতুল্লার পরে ট্রেনের গতি কমে আসতেই দেখি সবাই উঠে দাড়াচ্ছে। আমিও ভাবলাম নারায়নগঞ্জ চলে এসেছে। ট্রেন থেকে নামার পর বুঝলাম এটি আসলে চাষাড়া। নারায়নগঞ্জ সামনে। আবার উঠা যেতো। কিন্তু কি মনে করে আর উঠলাম না। মেইন রোডে এসে কিছু ছবি তুললাম। একশন ক্যামের চার্য শেষ ততক্ষণে।
ছবি তুলতে তুলতেই দেখি উৎসব কোম্পানির বাস, ঢাকা যাচ্ছে। আমিও উঠে পড়লাম। বলা চলে নারায়নগঞ্জ ভ্রমণ সমাপ্ত হলো। এরপর একদিন সকালে এসে আশেপাশের জায়গা ঘুরে তারপর ফেরা যাবে। সেই সাথে নারায়নগঞ্জের নামকরা কোন রেষ্টুরেন্টে খাওয়াও যাবে।
ফেসবুক মন্তব্য