আলাপন ১০-৫-১৮

আমি যে আমলের ছাত্র সে আমলে জিপিএ ৫ বা গোল্ডেন এ+ টাইপের কিছু ছিলো না। আমাদের ছিলো প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ আর তৃতীয় বিভাগ। ১০০০ নাম্বারের মধ্যে ৬০০ বা বেশী পেলে প্রথম বিভাগ, ৪৫০-৫৯৯ পেলে দ্বিতীয় বিভাগ আর ৩৩০ -৪৪৯ পেলে তৃতীয় বিভাগ। ৩৩০ এর কম পেলে ফেল। কোন সাবজেক্টে ৩৩ এর কম পেলে মোট নাম্বার ৩৩০ এর বেশী হলেও ফেল। কোন কোন বছর আবার ফেল করা সাবজেক্টে কিছু নাম্বার যোগ করে পাস করিয়ে দেয়া হতো। এটা ছিলো গ্রেস নাম্বার।

পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণীতে ছিলো বৃত্তি পরীক্ষা। তবে সব ছাত্র এই পরীক্ষা দেয়ার সূযোগ পেতো না। শিক্ষকদের দৃষ্টিতে সব বিষয়ে ভাল এমন ছাত্ররাই কেবল বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার সূযোগ পেতো। বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে বৃত্তি দেয়া হতো বোর্ড থেকে। আমার এখন ঠিক মনে নেই কত করে বৃত্তি দেয়া হতো, তবে খূব সম্ভবত ৩০-৫০ টাকা ছিলো। যারা বৃত্তি পেতো তারা আবার স্কুলেও বিনা বেতনে বা অর্ধেক বেতসে পড়ার সূযোগ পেতো। এসএসসি / এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাক্রম থাকতো প্রতি বোর্ডে। একটি ছিলো সম্মিলিত মেধা তালিকা, এরপর বিজ্ঞান, কলা আর বাণিজ্য বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা মেধাক্রম ছিলো। আর ছিলো মেয়েদের আলাদা একটি মেধা তালিকা।

সে আমলে এসএসসি / এইচএসসি’র রেজাল্ট বের হলে পত্রিকায় মেধাক্রমে স্থান পাওয়া ছেলে-মেয়েদের ছবি ছাপা হতো, সাক্ষাতকার সহ। দেখা যেতো বেশীরভাগ মেধাবী ছেলে-মেয়েই দিনে ১৬-১৮ ঘন্টা পড়াশোনা করতো। আর এই তথ্য আমার মতো অমেধাবীদের জন্য ছিলো চরম যন্ত্রনার কারণ। এই সব সাক্ষাতকারের সূত্র ধরেই দিন-রাত শুনতে হতো পড়তে বসার কথা। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো সেই সময়ের বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকের মেধাবী এক ছেলের কথা। সেই ছেলে দিন-রাত পড়ে এসএসসি’র মেধাক্রমে স্থান করে নিয়েছিলো। শোনা যায় চিকিৎসক পিতা দিন-রাত পড়ার জন্য ছেলের উপর মোটামুটি ষ্টিম রোলার চালাতেন। মেধাক্রমে স্থান পাওয়ার পরও সেটা অব্যহত ছিলো। ফলাফল – সেই ছেলের আর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। অতিরিক্ত চাপে সে মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলো। লেবু বেশী কচলালে যে তিতা হয়ে যায়, সেটা অনেক বাবা-মা ই বুঝে না।

পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে এই মাতামাতি আমার কাছে অতিরিক্ত মনে হয়। আগের সেই মেধাক্রম আর বর্তমানের গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া নিয়ে উচ্ছাস আসলে একই। অনেক ছেলে-মেয়ে বৃত্তি পাওয়ার পর এসএসসি’তে গোল্লা, এসএসসি’তে অনেক ভাল রেজাল্টের পর তাকে এইচএসসি’তে আর খূজে পাওয়া যায় না। সব ষ্টেজে ভাল রেজাল্টের পর ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে না পেরে অনেকেই ভেসে গেছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের উপর অনেক বেশী চাপ দেন কেবল ভাল রেজাল্ট করার জন্য। আর ভাল রেজাল্টের আশায় পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে তারা মোটেও কুন্ঠিত হন না। এটি যে অপরাধ এবং ছেলে-মেয়েদের দূর্নীতি’তে প্রাথমিক পাঠ – সেই বুঝ তো মনে হয় কারো নেই। যে ছেলে-মেয়ে বাবা-মায়ের দেয়া টাকা দিয়ে প্রশ্নপত্র কিনে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে, সে তার জীবনের পরবর্তী সব ধরণের পরীক্ষায় টাকা খরচ করেই পার হওয়ার চেষ্টা করবে।

যতদিন যাচ্ছে, জীবন ততোই জটিল হয়ে উঠছে।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *