করোনা কাল ৫

গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে আব্বা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর  থেকেই আমার বাইরে যাওয়া কমে গিয়েছিলো। তারপরও নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই হাটতে বের হতাম সকাল বা বিকালে, কোন কোন দিন দু’বেলাই। মাঝে মধ্যে ঔষধ কিনতে যেতে হতো। সে সময় পুরো এক চক্কর ঘুরে আসতাম। ওজন কমানো শুরু করার পর হয়তো হাতে গোনা দুই একদিন রিকশায় চড়েছি, বাকি সব কাজে হেটে গিয়েছি, ফিরেছি হেটে। ব্যাংকে যেতো হতো, পোষ্ট অফিসে যেতে হতো। বলতে গেলে বাসার আশে-পাশেই জীবন সীমিত হয়ে গিয়েছিলো।

করোনা ভাইরাস সংক্রমন শুরু হওয়ার পর থেকে বাইরে যাওয়া একদমই কমে গেলো। এমন কি হাটতে যাওয়াও কমিয়ে দিয়েছিলাম। যাওয়ার মধ্যে আব্বার ঔষধ কিনতে যাওয়া আর কোন টুকিটাকি জিনিস কিনতে যাওয়া। প্লেজার ট্রিপ টাইপের কিছু আর হিসাবে ছিলো না।

সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষনার পর বাইরে গিয়েছি বড়জোর ২/৩ দিন, তাও ঔষধ আর ডায়পার কিনতে। বাসার দুই বুয়া ছুটিতে, ড্রাইভার ছুটিতে। একমাত্র বাসার কাছে এক বুয়া থাকে সে এসে কিছু কাজ করে দিয়ে যায়। একা বোনের পক্ষে সব কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর বাসায় আব্বা-আম্মা দু’জনই রোগী। দুলাভাই আর ভাগ্নে প্রথম শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলো, এরপর থেকে বাসাতেই আছে। বাসায় ভাগ্নে আর ভাগ্নে বউ এর বয়সই ৩০ এর নিচে। বাকি সবাই ৫৫ বছরের উপরে। সুতরাং আমাদের ঝুঁকি একটু বেশী।

কিন্তু বাসায় বসে আসলে তেমন কিছু করা হচ্ছে না। ছবি তুলছি নিয়মিত। বাসায় বই আছে বেশ কিছু, যা এখনও পড়া হয়নি। কিন্তু বই পড়া হচ্ছে না মোটেও। বেশ কিছু সিনেমা ডাউনলোড করা আছে। সেগুলোও দেখা হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কোন কিছুতেই আসলে সেভাবে মনসংযোগ করা যাচ্ছে না।

গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছেন ১১২ জন। সামনের দিনগুলি আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। হাতের জমানো টাকা শেষ হয়ে আসছে, ব্যাংকে যাওয়া জরুরী। তারপরও যেতে পারছি না, বার বার কেবল মনে হয় বাইরে গেলেই বাহক হয়ে নিয়ে আসবো ঘরে।

ভাল থাকুন, ঘরেই থাকুন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।