কে-৬০৩

আগে একবার রেটেকেস ভি-১১৫ রেডিও কিনেছিলাম। সেটা পরে এক চাচাত ভাই’কে উপহার দিয়ে দেই। কিছুদিন পর মনে হলো বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান রেকর্ড করার জন্য ছোট একটা রেডিও থাকা দরকার। কিন্তু দারাজে ততোদিনে রেটেকেস ভি-১১৫ রেডিও দাম বেশ বেড়ে গেছে। আমি কিনেছিলাম ১৪শ টাকা এরাউন্ড, দাম বাড়ার পর হয়েছে ১৭/১৮শ টাকা এরাউন্ড। এই দামে কিনবো কি কিনবো না করতে করতে হঠাৎ চোখে পড়লো হানরংদা কে-৬০৩ রেডিওটি। ইউটিউবের বদৌলতে জেনেছিলাম ভি-১১৫ বিভিন্ন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মডেল নাম্বার দিয়ে তৈরী করে থাকে। মান প্রায় একই। কে-৬০৩ আর ভি-১১৫ একই রেডিও। দামও ১৫শ এরাউন্ড। অর্ডার করে ফেললাম দারাজে। সব মিলিয়ে দাম পড়লো ১৫৭৮ টাকা। এখন অবশ্য দাম ১৬৩২ টাকা + শিপিং।

অর্ডার করার ১০ দিনের মাথায় হাতে পেলাম। সে থেকে ব্যবহার করছি। বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠানগুলি এটাতেই শুনি। মাঝে মধ্যে এফএম এবং শর্টওয়েভও। তবে অনুষ্ঠান রেকর্ডিং এর কাজটি এটা দিয়েই বেশী করি। বেশীর ভাগই এই রেডিও থেকেই, আবার কখনও ভিন্ন রেডিও থেকে অডিও ক্যাবল দিয়ে।

শুরুতে এই রেডিও’র বৈশিষ্ঠ্য গুলি জানি

  • ডিজিটাল রেডিও, এলসিডি স্ক্রিণে ফ্রিকোয়েন্সী দেখা যায়
  • মিডিয়াম ওয়েভ, এফএম এবং শর্টওয়েভ ব্যান্ড আছে
  • ব্লুটুথ ফাংশন আছে
  • এমপিথ্রি প্লেয়ার
  • রেডিও থেকে সরাসরি, অডিও ক্যাবল দিয়ে এবং বিল্টইন মাইক্রোফোন দিয়ে রেকর্ড করা যায়
  • রিচার্জেবল ব্যাটারি দিয়ে চলে এবং সেটেই রিচার্জ করা যায়
  • সরাসরি কি এন্ট্রি এবং স্ক্যানিং এর মাধ্যমে টিউন করা যায় 
  • প্রতি ব্যান্ডে ৫০টি করে ফ্রিকোয়েন্সী মেমোরিতে রাখা যায়

এবার আসা যাক রেডিও’টির ফ্রিকোয়েন্সী রেঞ্জ বিষয়ে

  • মিডিয়াম ওয়েভ ৫২২ – ১৭১০ কিলোহার্টজ
  • এফএম ৬৪ – ১০৮ মেগাহার্টজ
  • শর্টওয়েভ ৪.৭৫ – ২১.৮৫ মেগাহার্টজ

হ্যানরংদা খূব সেনসেটিভ রেডিও না। তবে আপনি সাধারণ বেতার শ্রোতা হলে এটা দিয়েই আপনার কাজ চলে যাবে। স্থানীয় মিডিয়াম ওয়েভ ষ্টেশন ভালই পাবেন। আমি ঢাকা থেকে দিনের বেলা বাংলাদেশ বেতার ঢাকা (৬৩০ / ৮১৯ কিলোহার্টজ) ভালই পাই। ১১৭০ কিলোহার্টজ খূব একটা ভাল পাই না। বরং বাংলাদেশ বেতার খুলনা (৫৫৮ কিলোহার্টজ) মোটামুটি ভাল পাওয়া যায়। ভারতের আকাশবাণী মৈত্রী (৫৯৪ কিলোহার্টজ) ও দিনের বেলা শোনা যায়। তবে আকাশবাণী গীতাঞ্জলী (৬৫৭ কিলোহার্টজ) দিনের বেলা খূব একটা শোন যায় না। রাতের বেলা এই সব ফ্রিকোয়েন্সী ছাড়াও আকাশবাণীর আরো কয়েকটি ষ্টেশন মোটামুটি শোনা যায়।

এফএম ভালই। ঢাকায় বসে ঢাকার সব এফএম ষ্টেশনই পাই, তবে রুমের ভিতর রিসেপশনের তারতম্য হয়। শর্টওয়েভ এ শক্তিশালী ষ্টেশনগুলো ভালই ধরে। তবে খূব ক্ষীণ ষ্টেশনগুলো ধরা কঠিন। আমি অবশ্য আমার লং ওয়্যার এন্টেনা এই কে-৬০৩ রেও’র টেলিস্কোপিক এন্টেনার সাথে এটাচ করে দেই। তাতে রিসেপশন কিছুটা ভাল হয়। সূবিধা একটাই, সরাসরি সঠিক ফ্রিকোয়েন্সীতে টিউন করা যায়। এনালগ স্কেল হলে ব্যাপক কঠিন হতো। আগেই বলেছি সাধারণ শ্রোতাদের জন্য ভালই। তবে ডিএক্সইং এর জন্য উপযুক্ত না।

স্পিকার রেটেকেস ভি-১১৫ এর মতো অতোটা জোড়ালো না হলেও খারাপ বলা যাবে না। তবে ভলিউম বাড়ালে কেমন যেন চিন চিনে (নাকি ক্যান ক্যানে) আওয়াজ এর মতো হয়। 

রেটেকেস ভি-১১৫ এর মতোই টিউনিং এর জন্য এটারও কোন রোটারি হুইল নাই। এটাই এই রেডিও’র সব চাইতে বড় নেগেটিভ দিক আমার মতে। জাষ্ট ১ বা ২ কিলোহার্টজ সামনে-পিছনে যেতে হলেও ৩-৭ নংখ্যা একটা একটা করে কি প্রেস করতে হবে।

আগেই বলেছি এটা কেনা মূলত রেকর্ডিং করার জন্য। রেকর্ডিং এর মান মোটামুটি। আর ডেটা ক্যাবল দিয়ে চার্জিং এর পাশাপাশি রেকর্ড করা ফাইলগুলো পিসি বা ল্যাপটপে ট্রান্সফার করা যায়। মেমোরি কার্ড বের করার দরকার হয় না। 

আপাতত এ পর্যন্তই। ভাল থাকবেন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।