ঘটনা, দুর্ঘটনা এবং মানসিকতা

২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হলো, সেবার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো রুণা, রত্না আর আসমা নামের তিন মেয়ের। অগ্নিকান্ডে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, স্বজন হারিয়েছিলেন। আর সেই ডামাডোলে তাদের বিয়েও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো। শেষ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এই তিন মেয়ের বিয়ে সুসম্পন্ন হয়েছিলো। এই বিয়ে সেসময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো। একদল যেমন সাধূবাদ জানাচ্ছিলেন তখন আরেক দল ব্যাপক সমালোচনা করতেও পিছপা হননি। এই চরম বিয়োগান্ত পরিবেশে বিয়ে দিতে হবে কেন এই ছিলো তাদের মূল অস্ত্র।

একটি পারিবারিক ঘটনা দিয়ে শুরু করি। মফস্বলের বাসিন্দা আমার এক কাজিন এর এফেয়ার ছিলো। বাসার কেউ ই জানতো না। একদিন সেই ছেলের সাথে কাজিন’কে দেখে ফেললেন তারই বড় ভাই। বাসায় এসে খোঁজ-খবর নিতেই বের হলো সব। রাত্রে সবাই মিলে বসে মেয়েকে বলে দিলেন, ছেলের পরিবার যদি প্রস্তাব পাঠায় তবে তারা বিবেচনা করবেন। না হলে এই সম্পর্ক আর বাড়তে দেয়া হবে না। তারা তার বিয়ের জন্য যোগাযোগ শুরু করবেন। ছেলের পরিবার খবর পেয়ে ঠিকই প্রস্তাব পাঠিয়ে দিলো। এবার রীতিমতো বেকায়দায় পড়লো মেয়ের পরিবার। কারণ মেয়ের পিঠাপিঠি এক বড়বোন ছিলো, তখনও অবিবাহিত। কিন্তু তাদের আর কিছু করার ছিলো না। বড় বোন’কে রেখে ছোট বোনের বিয়ে দিতেই হলো। এরপর শুরু হলো কাহিনী। বড় বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসে, পাত্রপক্ষ যখন শুনে ছোট বোনের আগে বিয়ে হয়েছে, তখন তারা পিছিয়ে যায়। অনেকে প্রশ্ন করে জেনে নেয়, তারপরও কিছু হয়না। এদিকে বড় বোন অনেকটাই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়লো। ছোট বোন’কে দেখলেই ক্ষেপে যায়। একদিন তো বলে বটি নিয়ে তারা করেছিলো ছোট বোন’কে। অভিযোগ ছোট বোনের কারণেই তার এই অবস্থা। আগে-পাশের মানুষের ত্বরিত হস্তক্ষেপে সেদিন বড় কোন দূর্ঘনা ঘটতে পারেনি। সব কিছুরই শেষ আছে। বড় বোনের একদিন বিয়ে হয়ে গেলো। এরপর সব স্বাভাবিক। দু’বোন এখন স্বামী সংসার নিয়ে ভালই আছেন, তাদের ছেলে-মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে।

উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তদের মধ্যে এরকম কুসংস্কার কতোটা আছে আমার জানা নেই, তবে আমাদের মদ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজে এধরণের ঘটনা অনেক দেখা যায়। ডিভোর্সী হলেও অনেক ধরণের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিম মেয়েরাই।

যাই হোক সেবার রুণা, রত্না আর আসমার বিয়েতে আমার অবস্থান ছিলো তাদের ত্বরিত বিয়ের পক্ষে। নিকটতম স্বজন হারানোর পর বিয়ে হয়তো একটু দৃষ্টিকটু ছিলো, কিন্তু শোক থিতু হওয়ার সাথে সাথে নানারকম কুসংস্কার মাথা চাড়া দেয়ার কিংবা পাত্রপক্ষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার সূযোগও বাড়তো। ফলশ্রুতিতে কি হতে পারতো, সেটা এখন আর আলোচনা করে লাভ নেই।

আগুন লাগার পর শিল্পমন্ত্রী বলে ফেললেন আগুন লেগেছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে। ভাবটা এমন তাতে কেমিক্যালের গুদাম সরানোর কথা আসে কেমন করে। তার কথার সুত্র ধরে এখন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরাও গোঁ ধরেছেন তারা এসব সরাবেন না। আগুন তো বিভিন্ন কারণেই লাগে বা লাগতে পারে, কিন্তু আশে-পাশে কেমিক্যাল কিংবা অন্য কোন দাহ্য পদার্থ থাকলে সেটা কি পরিমাণ ভয়ঙ্কর হতে পারে ২০১০ সালে নিমতলি এবং ২০১৯ সালে চকবাজারের মারাত্মক অগ্নিকান্ড চোখে আঙ্গুল দিয়েই দেখিয়ে দিলো। তারপরও কিছু হার্মাদের হুশ হয় না। নিজের বা পরিবারের কারো ক্ষতি হয়নি বলেই তারা একই ভাবে আইন অমান্য করে যেতে আগ্রহী। তাদের কাছে টাকাটাই মূখ্য।

গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের পর যে নর্থ সাউথ রোড, সেখানে আগে ছিলো পতিত জমি, একটা ডোবা মতোনও ছিলো শুনেছিলাম। নতুন রাস্তা করার জন্য সরকার জায়গা অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপুরণ দিয়ে দিয়েছিলো। এরপর দীর্ঘদিন পর যখন রাস্তা তৈরীর কাজ শুরু হলো তখন বেঁকে বসলো সবাই, জায়গা ছাড়বে না। এরপর যখন বিডিআর (মতান্তরে সেনাবাহিনী) তলব করা হলো তখন জায়গা ছাড়তে হলো সবাইকে। বলা চলে শক্তের ভক্ত আমরা সবাই।

পুরাতন ঢাকা (অথবা আবাসিক এলাকা) থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে হলে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করা হোক। যারা এরপরও অবৈধভাবে কেমিক্যাল মজুদ করবে তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হোক। কোন রকম ছাড় দেয়ার মানে হলো অদূর ভবিষ্যতে আরেকটা নিমতলি বা চকবাজার ট্র্যাজেডির জন্ম দেয়া।  

ছবি : সংগৃহিত

নিমতলি অগ্নিকান্ড
রুনা, রত্না, আসমার বিয়ে

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।