নীতি এবং নির্ধারক

সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা মোটেও ভাল না। তেলের দাম বাড়ায় সবকিছুর দামই উর্ধ্বমুখি। এদিকে তেলের প্রাপ্যতা এবং মজুদও হয়তো সন্তোষজনক না। ফলে সরকারী নীতি নির্ধারকরা নানা ভাবে চেষ্টা করছেন অবস্থা সামাল দিতে।

তেলের দামের সাথে সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যুৎ এর। লোডশেডিং এখন নৈমিত্তিক বিষয়। শুরুতে লোডশেডিং  এর সময়সূচি ঘোষণার কথা থাকলেও বাস্তবে কেউ মানছেন না। কোন এলাকায় হয়তো লোডশেডিং একেবারেই নাই আবার কোন এলাকায় বিদ্যুৎ কখন আসে সেটাই মূল প্রশ্ন। 

বিদ্যুৎ এর ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত সেয়া হয়েছে সম্প্রতি। যেমন এলাকাভিত্তিক ছুটি চালু করা হয়েছে শিল্প কারখানাগুলোর জন্য। আগে শুধূমাত্র মার্কেটগুলির জন্য এই নিয়ম চালু ছিলো। দোকান-পাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক এক নির্দেশে দোকান, হোটেল / রেস্তোরা ইত্যাদি বন্ধ করার ব্যাপারে আরেকটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশে হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট ঔষধের দোকান রাত ২টায় বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সাধারণ ঔষধের দোকানের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা রাত ১২টা। 

এখন প্রশ্ন হলো ঔষধের মতো একটি জরুরী সেবা, তাও আবার হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট ঔষধের দোকান নিয়ম মেনে বন্ধ করার নিয়ম কোন নীতিতে ফেললেন মাননীয় নীতি নির্ধারকবৃন্দ ? রাত ২টার পর কি কোন হাসপাতাল জরুরী স্বাস্থ্য সেবা দিবে না ? 

ফেসবুকে একজন ডাক্তারের ষ্ট্যাটাস হুবহু তুলে দিলাম।
“জরুরী বিভাগে রাত তিনটা আর দিন তিনটার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সেখানে মূলত দিনরাত একই হারে রোগী আসতে থাকে। মেডিকেল ইমারজেন্সি টাইম টেবিল মেনে আসে না। একদিকে অপারেশন থিয়েটারে লাইট জ্বালানো যাবে কিন্তু ঔষধের অভাবে অপারেশন শুরু করা যাবে না- ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না? করিমের হার্ট অ্যাটাক যদি বেলা তিনটায় হয়, রহিমের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে রাত ৩ টায়। ছিনতাইকারী রাত দুইটার আগে ছুরি মেরে রক্তক্ষরণ ঘটাবে, রাত ২ টার পরে নয় ব্যাপারটা কিন্তু তা হয় না। ইন্টার্ন লাইফে নাইট ডিউটি করার সময় দেখেছি সন্ধ্যা রাত আর শেষ রাত বলে ইমারজেন্সি এডমিশনে কোন পার্থক্য নাই। সেজন্যই একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন ভরাট গলায় নির্দেশ দিয়েছিলেন ঈদের ছুটিতে ইমারজেন্সি ২৪ ঘন্টা খোলা না রাখলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে তখন সবাই চুপিচুপি মুচকি হেসেছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা কিন্তু তিনি জানতেনই না ইমার্জেন্সি কখনো কোন হাসপাতালে এক মিনিটের জন্যও বন্ধ থাকে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আদেশ জারি করেছে রাত ২ টার পর হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত ডিসপেন্সারি তথা ওষুধের দোকান বন্ধ রাখতে হবে এবং হাসপাতালের সাথে সংযুক্ত নয় এমন ওষুধের দোকান বন্ধ রাখতে হবে রাত বারোটার পর থেকে।
 
রাত বারোটার পর যার জরুরী ওরস্যালাইন প্রয়োজন হবে তার কি হবে?
রাত দুইটার পর যার তীব্র শ্বাসকষ্টের জন্য কোন ইনজেকশন প্রয়োজন হবে, অক্সিজেনের নলের দরকার হবে, হার্ট অ্যাটাকের কারণে heparin, streptokinase দরকার হবে, তীব্র ব্যথায় কাতরাতে থাকা রোগীর ব্যথা নাশক দরকার হবে- তার কি হবে? এরকম উদাহরণ অনেক অনেক দেয়া যায়।” 

আর এই হলো সেই নীতির আদেশনামা
ভাল থাকবেন।
 
Photo by Matthias Schleiden: https://www.pexels.com/photo/sky-clouds-lines-blue-sky-11166542/

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।