প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ

যদিও বলছি প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ, আসলে এর আগে ২/৩ বার ছোট লঞ্চে অল্প দূরত্বে ভ্রমণ করেছি। যেমন বুড়িগঙ্গা সেতু হওয়ার আগে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করতো। ফেরীও ছিলো। আর নৌকা তখনও ছিলো এখনও আছে এই রুটে। লঞ্চগুলো ছিলো একতলা। এই পথে লঞ্চ এবং ফেরীতে পার হয়েছি। কোন একবার সদরঘাটে ফটোওয়াকে গিয়ে আমরা পাগলা পর্যন্ত গিয়েছিলাম এরকম ছোট একটি লঞ্চে। এই সার্ভিসটিও এখন আর নাই।

তবে বড় লঞ্চে এটি ছিলো আমার পূর্নাঙ্গ ভ্রমণ। আমরা যাচ্ছিলাম চাঁদপুর, ফটোওয়াকে। আয়োজক ছিলো নাইকন ফ্যানক্লাব বাংলাদেশ। দিনটি ছিলো শুক্রবার আর তারিখ ছিলো ২১শে জুলাই ২০২৩ সাল।

আমরা মূলতঃ গিয়েছিলাম ফটোওয়াকে। ছবি তোলাই ছিলো মূখ্য উদ্দেশ্য। আমি ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক ভিডিও করছিলাম। কিন্তু একই সাথে ছবি তোলা এবং ভিডিও করা বেশ কঠিন কাজ। কোনটাই ঠিকমতো করা যায় না।

ভিডিও’র শুরুতে যে লঞ্চটি দেখেছিলেন সেটি এম ভি ফারহান ৮ লঞ্চ। ঢাকা থেকে যায় ইলিশা। এরকম ছোট বড় লঞ্চ চোখে পড়ছিলো, যদিও বড় লঞ্চগুলি বেশীর ভাগ চলাচল করে রাতে। বরিশাল,পটুয়াখালি এসব রুটে। দিনের বেলা চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ এসব রুটে লঞ্চ চলাচল করে।

যাত্রাপথে প্রচুর ইটভাটা চোখে পড়ছিলো। যদিও ইট তৈরীর মওসুম শেষ হয়েছে আগেই। এখন কেবল বিক্রি। একজনের কাছ থেকে জানলাম জায়গাটি গজারিয়া।

কোন একটি নদীবন্দর, সাথে ফেরীঘাটও আছে। ঢাকার আশেপাশে নদীর পাশে বেশ কিছু ডকইয়ার্ড আছে। যেখানে বিভিন্ন ধরণের নৌযান তৈরী এবং মেরামত করা হয়।

পথে একটি ফেরীর দেখা পাওয়া গেলো। বিভিন্ন যানবাহন এবং মানুষজন নিয়ে একপাড় থেকে আরেক পাড়ে যাচ্ছে। সড়ক এবং ব্রীজ তৈরীর ফলে এইসব ফেরী সার্ভিস এখন বেশ কমে আসছে। তবে আমার কাছে নৌকা বা লঞ্চের চাইতে ফেরী অনেক বেশী ভাল লাগে। এটি বেশ নিরাপদও।

নদীর এই অংশে পুরোই গ্রাম। ছোট ছোট বাড়ীঘর দেখা যাচ্ছে। আর আছে গাছপালা। মাঝে মধ্যে হয়তো ছোট নৌকা চোখে পড়ে।

ইট বা বালু নিয়ে যাচ্ছে এই নৌযানটি। এর নাম বাল্কহেড। আকারে ছোট দেখা গেলেও এগুলো কিন্ত বিশাল সাইজের। ইট / বালুর ওজনের কারণে বেশীরভাগ অংশ পানির নিচে। নদীপথে দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই বাল্কহেড। ইঞ্জিন ছাড়া আর কোন আধূনিক যন্ত্রপাতি থাকে না। ওজনের কারণে সহসাই হয়তো বামে ডানে সরতে পারে না।

এই ভ্রমণটি বেশ ভাল ছিলো। অনেকের সাথে দেখা হয়েছে, নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে। সাথে কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছে। যেমন এরকম ভ্রমণে অবশ্যই ফুলহাতা শার্ট বা টিশার্ট পড়া উচিত, সাথে হ্যাট। লম্বা সময় রোদে থাকলে সানবার্ণ নির্ঘাত। যদিও বাতাসের কারণে গরম তেমন একটা লাগে না।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।