বই পড়া এবং মাসূদ রানা

যখন থেকে বানান করে পড়তে শিখেছি, তখন থেকেই হাতের কাছে যা পাই পড়ি। মানে পড়ার চেষ্টা করি। প্রথম প্রথম পড়তাম পত্রিকা। বাসায় নিয়মিত রাখা হতো দৈনিক পূর্বদেশ। পড়ার ব্যপ্তি এতোটাই ছিলো যে খবর শেষ করে পত্রিকার আনাচে-কানাচে যা ছিলো সবই পড়তাম, এমনকি বিজ্ঞাপনও। একদম শেষে প্রিন্টার্স লাইনও বাদ যেতো না। দৈনিক পত্রিকার বাইরে আম্মা মাঝে মধ্যে কিছু ম্যাগাজিন কিনতেন, যেমন বেগম। প্রতি রোজার ঈদে ঢাউস সাইজের একটা ঈদ সংখ্যা বেগম কেনা হতো। বলতে গেলে গল্পের সাথে পরিচয় সে থেকেই। এছাড়াও টুকটাক গল্পের বই কেনা হতো। সেসময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশন থেকে ছবিওয়ালা চমৎকার সব বই প্রকাশ করা হতো।

‘মাসুদ রানা’ এর সাথে পরিচয় ক্লাস ফোরে পড়ার সময়। আম্মার কালেকশনে বেশ কয়েকটা ছিলো, তারমধ্যে অন্যতম ছিলো ‘ধ্বংস পাহাড়’ – সেটা দিয়েই শুরু। ‘ধ্বংস পাহাড়’ বেশ কয়েকপাতা পড়ার পর আম্মা বইটা সিজ করলো এই বলে যে আমার নাকি এটা পড়ার বয়স হয় নাই। আমি আজন্ম অনুসন্ধিৎসু, আম্মার এহেন আচরনে প্রশ্ন জাগলো বই পড়ার আবার বয়স আছে নাকি, তাও আবার গল্পের বই। সুতরাং আম্মা রান্নাঘরে বা অন্য কোথাও ব্যস্ত থাকলে আমার অনুসন্ধান পর্ব চলতে থাকলো। একসময় বইটা আবিস্কার করলাম আম্মার বিছানার তোষকের নিচে। এরপর চলতে থাকলো চোর-পুলিশ খেলা। আমি প্রায় রতিদিন তোষক উল্টিয়ে প্রথমে দেখতাম কোন বই (আরো কয়েকটা মাসুদ রানা ছিলো) কোন পজিশনে আছে। এরপর বইটা নিয়ে পত্রিকা বা পড়ার বই এর এর নিচে রেখে পড়তাম। ঠিক কয়দিনে বইটা শেষ করেছিলাম মনে নেই, কি বুঝেছিলাম সেটাও। তবে যুদ্ধ-বিগ্রহ’র ব্যাপারটা ভালই লেগেছিরো। এভাবে বাকি কয়টাও শেষ করেছি। এক-আধবার ধরাও পড়তে হয়েছে। বকার পর আবার বই উধাও। নতুন করে অনুসন্ধান আর খূজে পেয়ে লুকিয়ে পড়া। ক্লাস সেভেনে ওঠার পর মোটামুটি জনসম্মুখেই ‘মাসুদ রানা’ পড়তাম। সেসময় তো আর বই কিনতে পারতাম না, চেনা পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করেই পড়তাম। ক্লাস টেনে ওঠার পর হাত খরচ বাঁচিয়ে কয়েকটা কিনতে পেরেছিলাম। তবে সেসময়ও মাঝে মধ্যে লুকিয়ে মাসুদ রানা পড়তে হয়েছে। নতুন একটা বই নিয়ে এসেছি, ঠিক সন্ধ্যার সময় টেবিলে বসার কথা স্কুলের বই নিয়ে। কিন্তু মন পড়ে আছে গল্পের বই এর দিকে। পড়ার বই এর নিচে মাসুদ রানা রেখে পড়ার ভান করতাম আর মাসুদ রানা পড়তাম। আর সন্ধ্যার সময় যদি কেউ আমাকে পড়ার কথা বলতো তো সেদিন পূরানো মাসুদ রানা নিয়ে বসতাম। কলেজে ওঠার পর বন্ধুদের মধ্যে আরো কিছু রানা ভক্ত পাওয়া গেল। তখন বদলাবদলি করে বই পড়তাম। এভাবে বদলাবদলি করতে গিয়ে অনেক বই বেদখল হয়ে গেছে। বেইলী স্কয়ারে এক প্রতিবেশী ছেলের কাছে সেবা প্রথাশনীর বই এর বিশাল এক সংগ্রহ ছিলো। ও বইগুলোর খূব যত্ন নিতো। কেনার পর মলাট দিতো প্রগতি প্রকাশনীর উদয়ন নামের ম্যাগাজিনের পাতা দিয়ে। আর রাখতো একটা ঢাউস টিনের ট্রাংকে। ও শর্ত দিয়েছিলো বই দিবে কিন্তু আমি পড়ে সরাসরি ওকে ফেরত দেব আর বই ভাজ করে পড়া যাবে না (বই যাতে নষ্ট না হয়)। ওর কাছ থেকে নিয়ে প্র-চু-র বই পড়েছি। আহা সেই দিনগুলি।

বছর কয়েক আগে শখ করে একটা মাসুদ রানার বই কিনেছিলাম। কিন্তু কেন জানি খূব বেশী দূর পড়া হয়নি। হয়তো বয়স …

প্রচ্ছদ ছবি কৃতজ্ঞতা : সেবা প্রকাশনী ফেসবুক পেজ

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *