অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া

গতকাল হঠাৎ করেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিলো হরিপুর জমিদার বাড়ি আর আরিফাইল মসজিদ ঘুরে আসা। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিলো। আবদুল্লাহপুর বাস ষ্ট্যান্ডে পৌছানোর পর আর বৃষ্টি ছিলো না। বাস ছাড়লো ৭:১৫ এর দিকে। কিন্তু বাস দেখি আশুলিয়ার দিকে যায় !?! একবার মনেও হলো ভুল বাসে উঠলাম না তো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম কামারপাড়া ইজতেমা মাঠের দিকে ডানে মোর নিলো। এরপর আবার মেইন রোডে এসে পূবাইলের দিকে যাত্রা। এখানে এসে পড়তে হলো জ্যামে। জ্যাম ছুটার পর আবার যাত্রা এবং রেল ক্রসিং এ এসে আবার বাস থামলো। সিলেট হাইওয়ে’তে উঠার পর বাসের গতি কিছুটা বাড়লো। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিটের যাত্রা শেষ করে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডে এসে নামলাম ১০:৪৫ এ।
 
নেমেই বুঝলাম ভুল দিনে আসছি। রাস্তা জুড়ে খানা-খন্দক আর কাঁদা-পানিতে সয়লাব। একজন’কে জিজ্ঞাসা করে জানলাম আগের দিন থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে, রাতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এক রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলাম সকালের নাশতা করার জন্য। নাশতা করতে করতেই রেলষ্টেশনের খোঁজ করলাম। পিচ্চি বয় বলে দুর আছে। সিএনজি’তে গেলে ঘন্টাখানেক, ভাড়া ৪০/৫০ টাকা। তিতাস কমিউটার ট্রেন ঢাকার দিকে যাবে ১:১০ এ, সুতরাং অন্য কোন দিকে গেলে ট্রেনে আর ফেরা হবে না। আর ঐদিকের রাস্তাঘাটের কি অবস্থা কে জানে। ঠিক করলাম নাশতা করে সোজা রেল ষ্টেশনে যাবো। আশে-পাশের কিছু ছবি তুলে ঢাকার দিকে রওনা হবো। এক সিএনজি ওয়ালার সাথে আলাপ হলো। সে জানালো আমাকে সে ষ্টেশনের কাছে নামিয়ে দিতে পারবে, সেখান থেকে অটো ভাড়া ১০ টাকা। উঠে পড়লাম। ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা ধরে ঝাকি খেতে খেতে এগোতে থাকলাম। এক জায়গায় এসে সিএনজিওয়ালা বললো এখান থেকে অটো পাবেন। জায়গার নাম পৈরতলা। এই এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ হচ্ছে। রাস্তার অবস্থা তথৈবচ। একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই ষ্টেশনের দিকের পথ দেখিয়ে দিলো। মুখেই একটি খালি অটো দাঁড়ানো ছিলো, ষ্টেশনের কথা বলতেই বললো উঠেন। আরো কয়েকজন উঠতেই অটো ছেড়ে দিলো। ভিতরের রাস্তাও দেখি ভাঙ্গাচোড়া। যাক শেষ পর্যন্ত ষ্টেশনে পৌছালাম।
 
ভেবেছিলাম ষ্টেশনে কিছু ছবি-টবি তুলবো। কিন্তু ষ্টেশনে ঢুকতেই তিতাস লেখা কাউন্টারের সামনে দেখি বিশাল লাইন, অথচ ঘড়িতে তখনও ১২টা বাজে নাই। কি আর করা। লাইনে দাঁড়ালাম। মাঝে একবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ওয়াশরুমে গেলাম পিছনের ভ্রদ্রলোককে সাক্ষী রেখে।
 
শেষ পর্যন্ত টিকেট দেয়া শুরু হলো। আমার সূযোগ আসার পর টিকেট পেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া – নরসিংদি পর্যন্ত। ভাড়া ৪০ টাকা। আমার আগে পরের সবারই একই অবস্থা। ১:২৫ এর দিকে ট্রেন যাত্রা শুরু করলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। এক একটা ষ্টেশন আসে আর যাত্রী উঠে, সবাই দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ পর টিকেট চেকার আসলো, টিকেট দেখানোর পর নরসিংদি – ঢাকা’র টিকেটের কথা জিজ্ঞেস করলাম। বলে তখন এসে ষ্ট্যান্ডিং টিকেট দিয়ে যাবে।
 
নরসিংদি আসার পর দু’জন এসে জানালেন এটা তাদের সিট। বিনা বাক্য ব্যয়ে সিট ছেড়ে দিলাম। টিকেট চেকার আসার পর ৩০ টাকার ষ্ট্যান্ডিং টিকেট দিলো। এমনিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ঢাকা ৬৫ টাকা টিকেটের মূল্য। কিছু পথ বসে বাকি পথ দাঁড়িয়ে গেলে লাগে ৭০ টাকা।
 
এরপর আর কোন ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি নাই। ট্রেন সোজা এসে থামলো টঙ্গী ষ্টেশনে। এখানে প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থেকে বিমানবন্দর ষ্টেশনের দিকে যাত্রা। বিমান বন্দরের আউটারে এসে আবার থামলো। বিমানবন্দর ষ্টেশনে এসে থামলো ভিন্ন লাইনে। সচরাচর ২ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে টঙ্গী থেকে আসা ট্রেন থামে। এবার থামলো ১ নাম্বার প্ল্যাটফর্মের ২ নাম্বার লাইনে। মানে কোন প্ল্যাটফর্ম নাই। ট্রেনের সিড়ি দিয়ে দুই পা নেমে তারপর লাফ। দুই ট্রেনের মাঝ দিয়ে হেটে যেতে যেতে দেখলাম ২ নাম্বার প্ল্যাটফর্মে একটি ট্রেন দাঁড়ানো। পরে শুনলাম এই ট্রেন ডিরেইলড হয়েছে আগের দিন।
 
খরচ : 
বাস ভাড়া মহাখালি (আবদুল্লাহপুর) – ব্রাহ্মণবাড়িয়া (বিশ্বরোড) ৩০০.০০
নাশতা (২ পরোটা, ডাল, ডিম ভাজি) ৫০.০০
সিএনজি ভাড়া (বিশ্বরোড – খয়ের পাড়া) ৪০.০০
অটো ভাড়া (খয়ের পাড়া – রেল ষ্টেশন) ১০.০০
ট্রেন টিকেট  ৭০.০০
পানি + ফ্রুটো ৫০.০০
বাসা থেকে আবদুল্লাহপুর / বিমানবন্দর ষ্টেশন থেকে বাসা ১০০.০০
সর্বমোট ৬২০.০০
সমাপ্ত হলো আমার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ভ্রমণ।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।