ভিভিয়ান মায়ার

ইউটিউবের একটি চ্যানেলে বিভিন্ন প্রথিথযশা আলোকচিত্রীদের নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করে। আমি মাঝে মধ্যেই এসব ভিডিও দেখে থাকি। সেদিন দেখলাম ভিভিয়ান মায়ার’কে নিয়ে একটি ভিডিও। সেখান থেকে জানলাম তাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র আছে ‘Finding Vivian Maier’ নামে। খূঁজে পেতে সেই তথ্যচিত্রটিও দেখলাম। 

ভিভিয়ান মায়ার অসম্ভব ট্যালেন্টেড একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন। কিন্তু তার জীবদ্দশায় তাকে কেউ চিনতেন না। অবশ্য এর কারণ ভিভিয়ান মায়ার কখনই তার ছবি বাইরে প্রকাশ করতে চান নাই। তিনি নিজের আনন্দে ছবি তুলেছেন এবং নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। 

তার মৃত্যুর পর জন মালুফ নামে এক তরুণ গবেষক এক অকশন হাউজ থেকে এক বাক্স ভর্তি ফিল্ম নেগেটিভ কিনে আনেন। তিনি সেসময় শিকাগো শহরের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছিলেন। শিকাগো শহরের পুরাতন কিছু ছবি দরকার ছিলো। সে কারণেই তিনি বাক্স ভর্তি এই নেগেটিভ গুলি কিনেন। বেগেটিভ গুলি ডিজিটাইজ করতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন এক অসাধারণ এক আলোকচিত্রীর সন্ধান তিনি পেয়েছেন। যার সম্পর্কে কোন তথ্য ইন্টারনেটে ছিলো না, যারা ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করেন তারাও কেউ ভিভিয়ান মায়ার এর নাম শুনে নাই। 

জন মালুফ তখন সেই অকশন হাউজে খোঁজ নিয়ে জানলেন আর কারা কারা ভিভিয়ান মায়ার এর জিনিসপত্র কিনেছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে সেসব কিনে আনলেন। নেগেটিভ ছাড়াও সেখানে পাওয়া গেলো জামাকাপড়, হ্যাট, ছোটখাট নানারকম জিনিসপত্র, চিঠিপত্র এবং আনপ্রসেসড / প্রসেসড নেগেটিভ ইত্যাদি।

চিঠিপত্র থেকে তিনি খূঁজে বের করলেন ভিভিয়ান মায়ার আসলে কোথায় থাকতেন। সেখানে খোঁজ নিতে গিয়ে জানলেন এক অসাধারণ তথ্য – ভিভিয়ান মায়ার আসলে ছিলেন একজন ক্যারিয়ার ন্যানী। বিভিন্ন পরিবারের সাথে থেকে তিনি বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন। এরকম কিছু পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার পর তারাও বেশ অবাক হয়ে জানলেন ভিভিয়ান মায়ার আসলে একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার ছিলেন। যদিও তারা তার কাছে একটি রোলিফ্লেক্স ক্যামেরা সবসময়ই দেখেছেন। বাচ্চাদের নিয়ে ভিভিয়ান মায়ার যখন বাইরে যেতেন ঘুরতে তখন সবসময়ই এই ক্যামেরাটি তার গলায় ঝুলানো থাকতো। বাচ্চাদের খেলার ফাঁকে ফাঁকে অথবা ঘোরার সময় তিনি অসংখ্য ছবি তুলতেন। এই কারণে তার ছবিতে শিকাগো শহরের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। সেলফ পোর্ট্রেট ও তুলেছেন অসংখ্য। তবে তার সেলফ পোর্টেট এর বৈশিষ্ঠ্য হলো তিনি কখনই ক্যামেরার দিকে মুখ করে ছবি তুলেন নাই। বরং কোন আয়না, দোকানের গ্লাস বা পানিতে নিজের প্রতিবিম্বের ছবি তুলেছেন। তার ছবি তোলার আরেকটি বৈশিষ্ঠ্য হলো তিনি সবসময়ই কোমরের কাছ থেকে ছবি তুলেছেন। অবশ্য রোলিফ্লেকাস ক্যামেরায় ভিউভাইন্ডার দেখতে হলে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখতে হয়। কোমরের কাছ থেকে ছবি তোলার কারণে বেশীরভাগ সময় সাবজেক্ট হয়তো বুঝতেই পারতো না তার ছবি তোলা হচ্ছে। 

ভিভিয়ান মায়ার জন্মের পর বেশকিছুদিন ফ্রান্সে ছিলেন। পরে চলে আসেন নিউইয়র্কে, সেখান থেকে শিকাগো। সেখানে অনেকটা নির্বান্ধব অবস্থায়  ২০০৯ সালে তার মৃত্যু হয়।

ভিভিয়ান মায়ার সম্পর্কে আরো জানতে এই ওয়েব সাইট এবং এই ওয়েব সাইট দেখতে পারেন।
দেখতে পারেন এই ভিডিও’টি। ইউটিউবে এরকম আরো কিছু ভিডিও পাবেন।

ফটো ক্রেডিট : By Vivian Maier, Her Undiscovered Work, Fair use, Link 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।