শখের তোলা আশি টাকা (১)

Stamps from Sweden
Stamps from Sweden

প্রাইমারী স্কুলে থাকতে একবার বন্ধু সাব্বির’কে দেখে ষ্ট্যাম্প জমানোর শখ হয়েছিলো। তবে তা খূব বেশীদিন টিকে নাই। কারণ ষ্ট্যাম্প জোগাড়ের তেমন কোন সোর্স ছিলো না। এক ছিলো দোকান থেকে কিনে সংগ্রহ করা, কিন্তু প্রাইমারী স্কুলে থাকতে হাতখরচ বলে কোন কিছু বরাদ্দ ছিলো না। যা লাগতো আব্বা-আম্মাই কিনে দিতেন। স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম হেটে, টিফিন বাসা থেকে দিয়ে দেয়া হতো। তাই খরচ বাঁচিয়ে পকেটস্থ করার মতো কোন কিছুই ছিলো না। সুতরাং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সে শখ হারিয়ে গেলো। এর মধ্যে একবার সিগারেটের খালি প্যাকেট জমানো শুরু করেছিলাম, কিন্তু আব্বা এটা দেখে খূব রাগ করলেন একদিন। কারণ কলোনীর বাইরের ছেলেরা (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষজনের ছেলে) এগুলো দিয়ে একধরণের জুয়া খেলতো। তবে আমি বা কলোনীর ভিতরের ছেলেরা জাষ্ট জমানোর জন্য জমাতাম। কারো কারো কাছে বিদেশী সিগারেটের চমৎকার সব প্যাকেট ছিলো। তো এই শখও গেলো।

এরপর ৭৫ সালে আব্বা বদলি হলেন ময়মনসিংহে। সেখানে আর কোন শখ-টখ হয়নি। পড়ালেখা আর খেলাধূলার বাইরে করার তেমন কিছু ছিলো না। ৭৭ সালের দিকে আব্বা সিঙ্গাপুর থেকে একটা টু-ইন-ওয়ান নিয়ে আসলেন। সেটা হয়ে উঠলো বাসার সবারই বিনোদনের মাধ্যম। ময়মনসিংহে তখনও টিভি সম্প্রচার শুরু হয়নি, তাই বাসায় টিভি থাকলেও সেটা ভালমতো দেখা যেতো না। ৭৮ এর মাঝামাঝি আবার ঢাকায় আসলাম। এবার সেই টু-ইন-ওয়ান আমার দখলে। ততোদিনে ক্যাসেট প্লেয়ার নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু রেডিও ঠিকমতোই চলতো। মোটামুটি নিয়মিত রেডিও শোনার শুরু তখন থেকেই।

আমার প্রথম রেডিও অবশ্য আমি দেখেছিলাম জন্মের পরপরই। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের বাসায় একটা বড়সড় রেডিও ছিলো। সেটা থাকতে উচু একটা তাকের উপর, আমাদের হাতের নাগালেই বাইরে। আমার এখনও অর্প-বিস্তর মনে আছে রেডিওর চেহারাটা। এরপর ১৯৬৯ সালে আব্বা গেলেন লন্ডন। সেখান থেকে আমার জন্য BOAC (ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর আগের নাম) এর একটা খেলনা প্লেন আর একটা পকেট রেডিও পাঠিয়েছিলেন। তবে সেটা আমি যতটা শুনেছি তার চাইতে বেশী শুনেছেন আমার এক খালা। তখন সদ্য তার বিয়ে হয়েছে আপন চাচাত ভাই এর সাথে (মানে আমার এক মামার সাথে)। আব্বার অবর্তমানে আমরা তখন থাকতাম সেই মামার বাসায়। তিনি মনে হয় সেসময় সন্তান-সম্ভবা ছিলেন (তখন তো আর বুঝি নাই, এখন বুঝি)। দূপুর হলেই তিনি আমাকে ডাক দিতেন, আমি রেডিও সহ তার বিছানায়। এরপর বাংলাদেশ বেতারের বিজ্ঞাপন তরঙ্গ … নানা রকম ছায়াছবির গান …

এরপর ১৯৭৭ সালেও একটা পকেট রেডিও পেয়েছিলাম, কিন্তু কেরামতি করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।  টু-ইন-ওয়ান রেডিও’তে মিডিয়ামওয়েভ, এফএম আর শর্টওয়েভ ব্যান্ড ছিলো। কিন্তু এফএম তরঙ্গে তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন সম্প্রচার ছিলো না। আর শর্টওয়েভ (এবং এফএম) সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিলোনা। এফএম এ কোন আওয়াজ নাই আর শর্টওয়েভে নানা রকম আওয়াজের জন্য কিছুই বুঝি না দেখে মিডিয়াম ওয়েভেই টিউন করতাম সব সময়। আব্বা মাঝে মধ্যে দেখতাম শর্টওয়েভে বিবিসি টিউন করতেন। আমি অবশ্য যেখানে কাটা নিলে বিবিসি শোনা যায় সেখানে একটা দাগ দিয়ে রেখেছিলাম, যাতে সহজে খুজে পাই। এরপর ১৯৭৯ সাল … প্রায় শেষ দিকে আমরা চলে আসলাম বেইলী স্কয়ারে আর ভর্তি হলাম উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে।

এরপরের কাহিনী পরের পর্বে …

(ছবি : সুইডেন থেকে আসার সময় পোষ্ট অফিসের পোষ্টমাষ্টার উপহার হিসেবে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত সুইডিশ ষ্ট্যাম্পের এই কালেকশনটা দিয়েছিলো, সাথে আরো ছিলো একটা একটা ক্রিষ্টালের বোল)

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।