ষ্টকহোম ডায়েরী (১৮)

বড় চাচার পরিবারের সাথে গ্রীষ্মের শেষের দিকে আরেকটি এমিউজমেন্ট পার্কে গিয়েছিলাম। নাম মনে নেই। তবে সেদিন সবার জন্য এন্ট্রি ফ্রি ছিলো। রাইড বা অন্য কোন একটিভিটির জন্য অবশ্য আলাদা করে টাকা খরচ করতে হতো। সেই পার্কের এক অংশে ছিলো একটি চিড়িয়া খানা। সেখানে আমাদের অতি পরিচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারও ছিলো। তবে সুইডেনে সবাই এটাকে বলে বেঙ্গল টাইগার। পোষ্ট অফিসের এক মেয়েও একদিন জানতে চেয়েছিলো বেঙ্গল টাইগার আমাদের দেশের কিনা। যাই হোক। বাঘ বাবাজিরা বিশাল এক ঘরে বন্দী সামনের অংশ এবং ছাদ ছিলো কাঁচের তৈরি। সামনের কাঁচগুলো ঠিক কতোটা পুরু জানা নাই, তবে বাঘ দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়লেও ভাঙ্গবে না। ভিতরে পূরো বন তৈরী করা হয়েছে আর তাপমাত্র সহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত। মানে পুরোটাই বাঘের উপযোগী বন্য পরিবেশ। বাঘের গায়ের রং অবশ্য কিছুটা সাদাটে। আরো বেশ কিছু বণ্য প্রাণী দেখেছিলাম যেগুলি এভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রাখা হয়েছে। উভের সাথে যে পার্কে গিয়েছিলাম সেখানে অবশ্য একটা বন বিড়াল টাইপের প্রাণী দেখেছিলাম যেটি খোলা জায়গায় ছাড়া অবস্থায় ছিলো।

এই এমিউজমেন্ট পার্কে বেশ কিছু রাইড ছিলো। প্রতিটিতেই টিকেট কেটে চড়তে হবে। আর ছিলো বেশ কিছু খেলা। যেমন একটি পানি ভর্তি গোল চৌবাচ্চায় শাপলার মতো কিছু ফুল (প্লাষ্টিকের তৈরী) ঘুরছিলো। চৌবাচ্চার কিনারায় ছিলো ঢেকির মতো একটি জিনিস। এক অংশে রাবারের তৈরী একটি ব্যাং রেখে অন্য অংশে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিতে হবে। যার ব্যাং উড়ে গিয়ে কোন ফুলের মধ্যে পড়বে সে কোন একটি গিফট পাবে। গিফট ছিলো ছোট বড় নানা রকমের টেডি বিয়ার। আমরা কেউ ই পারিনি, কেবল এক পিচ্চি ভাতিজির ব্যাং অর্ধেক ফুলে অর্ধেক পানিতে পড়েছিলো। তাকে ছোট একটি টেডি বিয়ার দেয়া হয়েছিলো।

আরেকটি মজার খেলা ছিলো। কাচের বাক্সের ভিতর কতগুলো পানি খাওয়ার গ্লাস উল্টো করে বসানো ছিলো। উপরে ছিলো দামী সব ব্র্যান্ডের ঘড়ি, কোন কোনটা গোল্ড প্লেটেড। গ্লাসগুলি সব ঘুরছিলো এবং স্থান পরিবর্তন করছিলো। বাক্সের চারপাশে ছিলো ৪টি আর্ম, স্লটে কয়েন ফেললে সেগুলি চালু হয় এবং কিছুটা এদিক সেদিক করা যায়। মিনিট খানেক মনে হয় চালু থাকে। এই সময়ের মধ্যে এই আর্ম দিয়ে কোন একটা গ্লাস উল্টে ফেলতে পারলেই দুই পাশের কোন এক ফোকড় দিয়ে ঘড়িটা বের হয়ে আসবে। কয়েকগুলোর দাম ছিলো ৫ ক্রোনা করে। আমি এবং কাজিনরা মিলে অজস্র বার চেষ্টা করেও কোন একটা গ্লাস উল্টাতে পারি নাই। গ্লাসগুলো মনে হচ্ছিলো পিছলে যাচ্ছিলো বার বার। আমার মনে হয় প্রায় দেড়শ ক্রোনা খরচ হয়েছিলো এই ঘড়ি পাওয়ার আশায়। 

উভের সাথে এক সাইন্স মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক কিছু ছিলো, কিছু কিছু জিনিস হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখা যায়। এগুলো ছিলো খূব ইন্টারেষ্টিং।  আমার একটির কথা এখনও মনে আছে। বিল্ডিং এর বাইরে দুটি ডিশ রাস্তার এমাথা ওমাথায় সেট করা ছিলো। দুটি ডিশ এর কেন্দ্রবিন্দু ছিলো একই উচ্চতায় এবং সরল রেখায়। দু’জন দুই ডিশের সামনে দাড়িয়ে সেই কেন্দ্র বরাবর কথা বললে একজন আরেকজনের কথা শুনতে পারতো। আমাদের চাইতে কম বয়সী দূজন ছেলে মেয়ে এটি নিয়ে দারুণ মেতে ছিলো। আমরাও একবার স্বল্প সময়ের জন্য সূযোগ পেয়েছিলাম।

উভে এক ফুটবল ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলো। কোন এক ডিভিশনে খেলতো ওর ক্লাব। আমাকে একবার নিয়ে গিয়েছিলো কাছের কোন এক উপশহরে ক্লাবের খেলা দেখতে। পুরো দলের সাথে সেই জার্নিটা ছিলো বেশ আনন্দদায়ক। ক্লাবে এক আফ্রিকান ছেলে খেলতো। ওর সাথেই কথা বলছিলাম বেশী। তবে সেদিন উভের ক্লাব হেরে গিয়েছিলো খেলায়। ওর ক্লাবের একটি দোকান ছিলো। নানা রকম জিনিসপত্র পাওয়া যেতো। বেশীর ভাগই ছিলো ব্যবহৃত, কিছু কিছু একেবারে নতুন। এগুলো সব ক্লাবের সাধারণ সদস্যরাই দান করতো। দোকান খোলা থাকতো শনিবার, উভেই চালাতো। এই দোকানেই প্রথমবার পরিচয় হয়েছিলো উভে’র মায়ের সাথে। আমি সেদিন টুকটাক কিছু জিনিস কিনেছিলাম। উভে চলে আসার সময় একটা নতুন ক্লক রেডিও উপহার দিয়েছিলো। 

ষ্টকহোমের কাছাকাছি এক উপশহরে ব্যবহুত জিনিসের বিশাল এক মার্কেট ছিলো। সেখানে প্রতিবছর গ্রীষ্মে একটি বড় মেলা হতো। সেটি নিয়ে পরে কোন একসময় লিখবো।

আজ এপর্যন্তই। ভাল থাকবেন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।