হ-য-ব-র-ল (৩)

১. বাসায় আব্বা-আম্মা দু-জনেই অসুস্থ্য। বয়স, ষ্ট্রোক, হার্টের সমস্যা সহ নানা সমস্যা সর্বোপরি ডায়বেটিসের কারণে দু’জনেরই কাহিল অবস্থা। তবে বর্তমানে দু’জনেরই একটি কমন প্রব – ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা উর্ধমুখি। খাবারের মেনু নিয়ন্ত্রন করে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঔষধ দিয়ে সেই মাত্রা নিম্নমুখি করার প্রচেষ্টা চলছে। খাবারের মেনু নিয়ন্ত্রন করা খূবই কঠিন। ডায়বেটিসের কারণে কার্ব কন্ট্রোল করতে হচ্ছে এমনিতেই, তারপর ক্রিয়েটিনিন এর কারণে এখন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে প্রোটিন। আব্বা আবার শাক-সবজি তেমন একটা খেতে চায় না। মাছ-মাংসও যে খূব বেশী খায় তাও না। তার পছন্দ হলো মূলত ডাল। ডাল দিয়েই সে ভাত খেতে আগ্রহী। আগে দুপুর আর রাতের খাবারে ডাল দেয়া হলেও এখন পুরোপুরি বন্ধ। ডালের জন্য তার মন একটু খারাপ। তারপর বুঝিয়ে রাজি করানো হয়েছে ডাল এর বদলে একটু বেশী করে সবজি খাওয়ার জন্য। আবার বেশী বেশী সবজি খাওয়ানোর ফ্যাকরাও আছে, পেট পাতলা হয়ে যায়। আর বয়সের কারণে এখন আর সেরকম ভাবে হয়তো নিয়ন্ত্রনও করতে পারেন না, ফলে কাপড় নষ্ট করে ফেলেন। আগে থেকে বলতে পারলে বা সম্ভাবনা দেখলে হয়তো ডায়পার পরানো হয়, নচেত যা  হওয়ার তাই হয়। আম্মাকে নিয়ে এখন সমস্যা হলো খাওয়ানো। রীতিমতো বাচ্চাদের মতো করে বলে-কয়ে-বকে খাওয়াতে হয়। নিজে আর কিছু করতে পারেন না, এখন পুরাই শয্যাশায়ী।

২. দু’দিন আগে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হার্ট এটাক হওয়ার কারণে হাসপাতালে নীত হন। ভারতের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ দেবী শেঠি এসে তাকে দেখে যান, পরে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য। আবারও সেই পুরাতন বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সাংসদরা অসুস্থ্য হলেই তারা চলে যান বিদেশে আর আমরা আম-জনতা দেশে থেকেই চিকিৎসা নেই বা নিতে বাধ্য হই ‘অনুন্নত চিকিৎসা’ ব্যবস্থা। 

আসলেই কি আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা খূবই খারাপ ? আমার একান্ত নিজস্ব মত হচ্ছে – অন্য সব সেক্টরের মতোই এখানে অব্যবস্থাপনা প্রকট, ফলে কাঙ্খিত সেবা খূব সহজেই পাওয়া যায় না। জনসংখ্যার অনুপাতে আমাদের দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও ভাল চিকিৎসক নেই এটা কখনই বলা যাবে না। আর এই অপ্রতুল চিকিৎসক সংখ্যার কারণেই যতো সমস্যা। একজন রোগীকে যতটুকু সময় দেয়া প্রয়োজন সেটি দিতে পারছেন না একজন চিকিৎসক। কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারের গেলে দেখা যায় কমন এরিয়ায় প্রচুর লোক বসে-দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। চেম্বারের ভিতরে আবার ২ বা ৩ ষ্টেপে বসার ব্যবস্থা। ডাক্তার সাহেব হয়তো একজন রোগী দেখছেন, পাশের চেয়ারেই আরেকজন বসে অপেক্ষা করছেন। আরেকটু দুরে আরো একজন আছেন অপেক্ষায়। আবার রোগী হিসেবে আমরাও এক কাঠি উপরে। কিছু হলেই সোজা নক করি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে। মাঝে মধ্যে দেখি কোন কোন চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১ পর্যন্ত টানা রোগী দেখে যাচ্ছেন, সিরিয়াল দেখলে হয়তো দেখা যায় ৬০-৭০ জন। সারাদিনের কথা আর নাই বা বলি। আব্বাকে ২/৩ বছর আগে এক ক্লিনিকে ভর্তি করতে হয়েছিলো কিছু জটিলতার কারণে। সেবার এইচডিইউ তে ভর্তি ছিলেন কয়েকদিন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রায় প্রতিদিনই এসেছেন রাত্রে, ২/১ দিন এসেছেন রাত দেড়টার দিকে। 

এই চিকিৎসক সংকটের ফসল তুলছেন আসলে ব্যবসায়ীরা। আপনি হয়তো বলবেন চিকিৎসকরাও তো লাভবান হচ্ছেন। সেটাও হয়তো ঠিক, তবে তাদের কাঁধে বন্দুক রেখে লাভবান বেশী হচ্ছেন কারা একটু চিন্তা করে দেখেন। অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও এই চিকিৎসা সেবায় বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। ভাল লাভ আছে বলেই তো তারা বিনিয়োগ করেছেন, রোগী বা তার পরিবারের দোয়ার আশায় নিশ্চয়ই করেন নাই।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। একজন চিকিৎসকের কথা জানি, তিনি সর্বোচ্চ ৩০ জন রোগী দেখেন। প্রতিদিনের সিরিয়াল প্রতিদিন দেয়া হয়। এ কারণেই কিনা জানি না, তার চেম্বারে ভীড় একেবারেই নেই।

৩. যতদিন যাচ্ছে চিকিৎসার ব্যয় বাড়ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সরকারী চিকিৎসা সেবা নিতে গেলেও সমস্যা, আবার প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালেও খরচ অনেক বেশী। আব্বা-আম্মা অসুস্থ্য হওয়ার পর সবচেয়ে বেশী অনুভব করছি বয়স্কদের জন্য আসলে সূবিধা আরো অপ্রতুল। অনেক সেবাই অর্থের বিনিময়ে পাওয়া গেলেও সবার তো আর টাকা নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় চিকিৎসা সেবাও শুনতে পাই অনেক বেশী খরচের। স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলিতে সত্যিকার অর্থেই চিকিৎসা সেবা ফ্রি। তবে সে জন্য সেসব দেশের জনগণকে ট্যাক্স দিতে হয় অনেক বেশী। আমেরিকায় হেলথ ইন্সুরেন্স ছাড়া চিকিৎসার কথা কেউ চিন্তাও করে না। সেখানে এখনও সবার হেলথ ইন্সুরেন্স নাই, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠির। আমাদের দেশেও এখন এরকম ইন্সুরেন্স সময়ের দাবী। সীমিত পর্যায়ে শুরু হলেও আম-জনতার কাছে সে সূবিধা পৌছাতে এখনও অনেক দেরী।

সেই সাথে ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে আমুল পরিবর্তন।

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।