৭ই মার্চের ভাষণ এবং কপিরাইট

মাত্রই আমরা উদযাপন করলাম ৭ই মার্চ, বঙ্গবন্ধু’র সেই কালজয়ী ভাষণের বার্ষিকী। যে ভাষণ শুনে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দিপ্ত হয়েছিলো কোটি কোটি বঙ্গসন্তান। ২৫শে মার্চের কালো রাতে স্বৈরাচারী পাকিস্তানী বাহিনীর কাপুরোষিত আক্রমনের পরেও দমে না গিয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলো সেই সকল উদ্দিপ্ত বঙ্গসন্তানেরা। ফলাফল – নয়মাসের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছিলাম বিজয়। 

গতকাল রাতে যখন ফেসবুক দেখছিলাম তখন গেরিলা ১৯৭১ পেজের একটি পোষ্টে চোখ আটকে গেলো। পোষ্টের বক্তব্য হলো তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আপলোড করার পরপরই দৈনিক প্রথম আলো, মোহনা টিভি এবং আরো গোটা দূয়েক ভূঁইফোর প্রতিষ্ঠানের কপিরাইট ক্লেইম এর সূবাদে ভিডিও আর প্রকাশ হয় নাই। পরে ডিসপিউট সাবমিট করার পর তারা ক্লেইম প্রত্যাহার করে। 

এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। অমি রহমান পিয়াল এবং সাইফুর রহমান মিশু তাদের ওয়েব সাইটে / ইউটিউবে স্বাধীনতা যুদ্ধের নানা কন্টেন্ট আপলোড করার পর পরই কপিরাইট এর কারণ দেখিয়ে ডাউন করে দেয়া হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এসব ক্লেইম করেছে দেশী কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। 

কিছুদিন আগে আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা এর অধিবেশন সমাপ্তি’র ঘোষণা এবং জাতীয় সংগীত রেডিও থেকে রেকর্ড করে আপলোড করি। আপলোড সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই জানানো হয় আমাদের জাতীয় সংগীতের কম্পোজিশন কপিরাইট ক্লেইম করেছে Polari’s Hub AB নামের এক প্রতিষ্ঠান। 

এখন প্রশ্ন হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এর কপিরাইট কার ? যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এই কপিরাইট হতে পারে 
১. বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের
২. বাংলাদেশ সরকারের
৩. বাংলাদেশ বেতার কিংবা বাংলাদেশ টেলিভিশন এর (জানা মতে তারা ভাষণ রেকর্ড করেছিলেন)

বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত জাতীয় সংগীতের কম্পোজিশন কপিরাইট তো বাংলাদেশ বেতারের ই থাকার কথা। এখন তারা যদি ফরমায়েশ দিয়ে এটি তৈরী করে থাকেন তো কপিরাইট হবে চুক্তি অনুযায়ী। 

এখন প্রশ্ন হলো প্রথম আলো / মোহনা টিভি বা অন্য সব ভুঁইফোর প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু’র ভাষণের কপিরাই ক্লেইম করে কি ভাবে ? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু’র অনেক ভাষণ নানা সূত্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যার বেশীর ভাগই বাংলাদেশ বেতার / বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ধারণ করা হয়েছিলো। সে হিসেবে সকল কিছুই সরকারী সম্পত্তি। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক ছবি / ভিডিও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সরকারের উচিত এসব ছবি / ভিডিও এবং অন্যান্য বই ইত্যাদি সংগ্রহ করে সরকারী ভাবে সংরক্ষণ করা। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে স্বত্ব কিনে নেয়া। না হলে কোন একদিন পুরো স্বাধীনতাই হয়তো বেহাত হয়ে যাবে। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।