HRD-737 রিভিউ

এই রেডিও কিনবো কি কিনবো না করে অনেক দিন কাটিয়েছি। না কেনার পক্ষে বড় যুক্তি ছিলো এর দাম। দাম মোটামুটি হাজার তিনেকের বেশী বর্তমানে। মাঝে কিছু কম ছিলো। তখন দোটানায় আর কেনা হয় নাই। আর কেনার পক্ষে বড় যুক্তি ছিলো এর এয়ার ব্যান্ড এবং ভিএইচএফ ব্যান্ড। শেষ পর্যন্ত কিনেই ফেললাম। গত প্রায় ২ সপতাহ ধরে ব্যবহার করছি। আজ তার ফলাফল কিছুটা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। 

Hanrongda HRD-737 ছোট একটি পকেট রেডিও। বেশ কিছু ফিচারের কারণে এটি কেনার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী হয়েছিলাম। প্রথমত এর এয়ার ব্যান্ড এবং দ্বিতীয়ত ভিএইচএফ ব্যান্ড। যদিও আমার Radiwow R-108 রেডিও’তে এয়ার ব্যান্ড ছিলো, কিন্তু এই রেডিও’র স্পিকারটি তেমন ভাল না হওয়ায় কথাবার্তা তেমন বুঝতে পারতাম না। ভলিউম সর্বোচ্চ দিলেও খূব একটা পরিস্কার বুঝা যেতো না। তাই এয়ার ব্যান্ড আছে দেখে কেনার জন্য আগ্রহী হয়েছিলাম। যদিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন রিভিউতে এয়ার ব্যান্ড সম্পর্কে বলা ছিলো যে এসব কনসিউমার গ্রেড রেডিও’তে এয়ার ব্যান্ড খূব একটা ভাল হয় না। শুনতে চাইলে স্ক্যানার রেডিও ভাল হবে। যাই হোক দ্বিতীয় যে কারণটি ছিলো সেটি ভিএইচএফ ব্যান্ড। ঢাকা তথা বাংলাদেশে ভিএইচএফ ব্যান্ড কোন কিছু শুতে পাওয়া খূব দুস্কর যদিও। এখানে কোন NOAA ওয়েদার ষ্টেশন নাই, কেবল এমেচার রেডিও’র ২ মিটার ব্যান্ডে (144-148 mHz) হয়তো কিছু শোনা যেতে পারে। 

আর না কেনার পিছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি ছিলো এর দাম। ৩ হাজার টাকার বেশী দাম দারাজে। মাঝে কিছুদিন দারাজে দাম ৩ হাজারের সামান্য কম ছিলো। কিন্তু কিনবো কি কিনবো না করতে করতে দাম বেড়ে গেলো আবার। ৩ হাজার টাকায় হয়তো ভারতীয় কোন এনালগ রেডিও অথবা সনি / প্যানাসনিক ব্র্যান্ডের কিছু রেডিও পাওয়া যেতো। এগুলো পারফরমেন্স নিয়ে আমার ধারণা খূবই কম, যদি্ বাংলাদেশের অনেকেই ভারতের সন্তোষ, ফিলিপস বা ইন্দোনেশিয়ায় তৈরী হাল আমলের সনি বা প্যানাসনিক রেডিও’র ব্যাপারে বেশ উচ্চকিত। 

অবশেষে হাতে কিছু টাকা আসতেই দারাজে অর্ডার করে ফেললাম গত ২১শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে। দাম ছিলো ৩২৩৪ টাকা, সাথে শিপিং (হোম ডেলিভারী) ৮০ টাকা। হোম ডেলিভারী ফ্রি পেলাম আর ডিকয়েন দিয়ে ছাড় পেলাম ১৬১ টাকা। সব মিলিয়ে আমার দাম পড়লো ৩০৭৩ টাকা। চীন থেকে বলা চলে বেশ দ্রুতই হাতে পেলাম। ৩১শে ডিসেম্বর তারিখে বাসায় ডেলিভারী দিয়ে গেয়েছিলো দারাজের রাইডার।

প্যাকেট খোলার পর রেডিও’র সাথে একটা ইয়ার ফোন, একটা চার্জিং ক্যাবল এবং ৯+ ফিট লম্বা একটা ওয়্যার এন্টেনা পেলাম। আর ছিলো একটি ইংরেজী ম্যানুয়াল। প্যাকেজিং খূ আহামরি টাইপের কিছু ছিলো না। সাধারণ কাগজের বক্স। পরিবহনের সময় কোনার দিকগুলো কিছুটা ট্যাপ খাওয়া। তবে ভিতরের মূল রেডিও’তে কোন সমস্যা হয় নাই শোলার কারণে। 

এই ২ সপ্তাহে মোটামুটি ব্যবহার করলাম। এফএম ব্যান্ড ছাড়া মিডিয়াম ওয়েভ বা শর্ট ওয়েভ খূব একটা ভাল না। ঢাকায় বসে মিডিয়াম ওয়েভে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা ৬৯৩, ৬৩০ এবং ৮১৯ কিলোহার্টজ শুনতে পাই। বাংলাদেশ বেতার খুলনা ৫৫৮ কিলোহার্টজ, ভারতীয় আকাশবাণী মৈত্রী ৫৯৪ কিলোহার্টজ এবং আকাশবাণী গীতাঞ্জলী ৬৫৭ কিলোহার্টজ মোটামুটি শোনা যায়। অবশ্য দিনের বেলায় খুলনা এবং কলকাতার রিসেপশন খূব ভালো না, নয়েজ থাকে। এর বাইরে আর কোন চ্যানেল তেমন একটা পাই নাই। আরো ২/৩ চ্যানেল পেলেও সেগুলো ঠিক শ্রবণযোগ্য না। 

শর্ট ওয়েভও তথৈবচ। একমাত্র ষ্ট্রং ষ্টেশনগুলিই পাওয়া যায়, যার অথিকাংশই চাইনিজ। আমি অবশ্য এর বিল্ট-ইন টেলিস্কোপিক এন্টেনা ব্যবহার করেছি। এটার সাইজ অবশ্য বেশ ছোট। সম্পূর্ণ খুললে ৯.৫ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়। ওয়্যার এন্টেনা দিয়ে এখনও চেষ্টা করি নাই।  ভবিষ্যতে করার ইচ্ছে আছে। 

এফএম এ রিসেপশন অপেক্ষাকৃত ভাল, তবে রুমের বাইরে গেলে। বিল্ট-ইন টেলিস্কোপিক এন্টেনা দিয়ে বারান্দায় প্রায় ২৫টি চ্যানেল পেয়েছি। বলা চলে ঢাকা থেকে সম্প্রচারিত সকল এফএম রেডিও চ্যানেলই পেয়েছি। ঘরের ভিতর রিসেপশন একেবারেই ভাল না, সাথের ওয়্যার এন্টেনা লাগালে রিসেপশন কিছুটা ভাল হয়।

এবার আসি এয়ার ব্যান্ড এবং ভিএইচএফ ব্যান্ডে। সাথে দেয়া ওয়্যার এন্টেনা দিয়ে ঘরের ভিতরেও এয়ার ব্যান্ডের রিসেপশন ভাল। এর কারণ অবশ্য ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বেশ কাছেই আমার বাসা। তবে আমি বলবো Radiwow R-108 এর তুলনায় এয়ার ব্যান্ড এর রিসেপশন কিছুটা ভাল। স্পিকারে আওয়াজ ও বেশ স্পষ্ট। কথাবার্তা ভালই বুঝা যায়। ভিএইচএফ ব্যান্ডের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হলো ঢাকার এফএফ রেডিও’র বেশ কয়েকটি এই চ্যানেল ধরা পড়ে (৮৮-১০৮ মেগাহার্টজ বাদে), কোন টিভি সাউন্ড পাই নাই। তবে একটা ডিজিটাল ট্রান্সমিশন টাইপ কিছু একটা পেয়েছিলাম। হ্যাম ব্যান্ডের কোন টাইম ফিক্সড না থাকায় এখনও কোন কিছু শুনতে পাই নাই। আর বড় সমস্যা হলো নির্দিষ্ট কোন ফ্রিকোয়েন্সীতে যেতে ম্যালা সময় লাগে। কোন কিপ্যাড নাই এবং কোন রোটারি সুইচও নাই। কেবল আপ-ডাউন সুইচ দিয়ে সামনে পিছনে যাওয়া যায়। 

এখন প্রশ্ন হলো আপনি কি এই রেডিও কিনবেন ? আমার উত্তর হলো না। মিডিয়াম ওয়েভ / শর্টওয়েভ / এফএম ব্যান্ড শুনতে চাইলে এই দামে আরো ভাল রেডিও পাবেন। শুধূ এফএম বা এয়ার ব্যান্ড শোনার জন্য এই দামে এই রেডিও কেনার কোন মানে হয় না। আর আপনি এয়ারপোর্টের আশে-পাশে না থাকলে সেটা শোনার সম্ভাবনাও নাই। বলা হয়ে থাকে এয়ারপোর্টের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে থকলে এয়ার ব্যান্ডের কথাবার্তা শুনতে পারবেন। আর অন্য সব দেশের এয়ারপোর্টের তুলনায় ঢাকা এয়ারপোর্টে বিমান খূব বেশী ওঠানামা করে না। 

আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। এই রেডিও’তে ৭০০ এমএইচ এর রিচার্জেবল ব্যাটারী ব্যবহার করা হয়েছে, যা খূব বেশী হলে ৩-৪ ঘন্টা একনাগারে চলবে। আমি এয়ার ব্যান্ড শুনতে গিয়ে এক সন্ধ্যাতেই ব্যাটারীর চার্জ শেষ করে ফেলেছিলাম।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।