গত ৫ তারিখ গিয়েছিলাম মিরপুর ১১, দু’টো মেলা হচ্ছিলো। প্রথমটা ছিলো সেতারা কনভেনশন সেন্টারে আর দ্বিতীয়টা ছিলো বনলতা পার্টি সেন্টারে। মেলাগুলিতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পূরুষের হাতে গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিলো। এই প্রতিষ্ঠানগুলির বেশীর ভাগই আবার অনলাইন ভিত্তিক। কারো কারো নিজেদের সেলস সেন্টার (দোকান) থাকলেও বেশীর ভাগেরই নিজস্ব ওয়েব সাইট নেই, কেবল ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ দিয়েই ব্যবসা চালাচ্ছেন। ছোট-খাট জিনিস কেনার সূবাদে এদের কয়েকজনের সাথে আমার অনলাইনেই পরিচয়। এবার তাই মেলা উপলক্ষে সরাসরি পরিচিত হতে চলে গিয়েছিলাম।
আমাদের সময় তো সেরকম ভাবে ইন্টারনেট এর সূবিধা ছিলো না, আমাদের এক্সট্রা ইনকামের মাধ্যম ছিলো তাই টিউশনি নয়তো কোন পার্ট টাইম জব। এখনকার ছেলেমেয়েদের বা গৃহিনীদের সামনে এক্সট্রা ইনকামের মাধ্যম বেশ কিছু আছে। ফটোগ্রাফি করতে পারলে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করা যায়, পার্ট টাইম জবের সূযোগ আগের চাইতে অনেক বেশী। আর অনেকেই ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর দেশের ক্লায়েন্টদের নানা রকম কাজ করে দিচ্ছেন। অনেকেরই এই আউটসোর্সিং কে নিজেদের মূল পেশা হিসেবেই গ্রহন করেছেন। গৃহিনীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও নানারকম কাজ করছেন। কেউ বিভিন্ন খাবার আইটেম ঘরে তৈরী করে সরবরাহ করছেন বিভিন্ন শপে, কেউবা আবার অর্ডার নিয়ে খাবার তৈরী করে পৌছে দিচ্ছেন বিভিন্ন বাসায় কোন বিশেষ উপলক্ষে। কেউবা অফিস পাড়ায় নিয়মিত খাবার পৌছে দিচ্ছেন মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে। অনেকেই ঘরে বসে ড্রেস, জুয়েলারী তৈরী করে ফেসবুক পেজ/গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। কেউবা বিক্রি করছেন কসমেটিকস অথবা জুয়েলারী / ক্র্যাফটিং এর নানা আইটেম। মোদ্দা কথা অনেকেই নিজের নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু না কিছু করছেন। যারা সত্যিকার অর্থেই শ্রম দিচ্ছেন এবং ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিতে পারছেন তারা ভালই করছেন।
এই অনলাইন ব্যবসায় অন্য সব সেক্টরের মতো ভাল মন্দ আছে। ক্রেতা হিসেবে আমি যেমন বেশ কিছু ভাল বিক্রেতা পেয়েছি, তেমন কিছু বাটপারের কারণে কিছু আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। বিক্রেতারাও অভিযোগ করেন কিছু ক্রেতা আছেন যারা অর্ডার দিয়ে নানারকম ভাবে হ্যারাস করেন এবং জিনিস শিপ হওয়ার পর লাপাত্তা হয়ে যান। আরেকটি বিষয় আছে যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হন। কুরিয়ারের কারণে ভাঙ্গা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস যেমন পেয়েছেন অনেকেই, তেমনি ক্যাশ অনের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিক্রেতাকে বিরাট ক্ষতির মূখে পেলে দিয়েছেন এমন ঘটনাও আছে। আবার ২/৩টা ঘটনা আছে কুরিয়ারের ডেলিভারীম্যান ছিনতাই এর শিকার হয়েছেন। কিছুদিন আগে ফেসবুকে এক ভিডিও দেখেছিলাম জিনিস ডেলিভারী দিতে এসে রীতিমতো ডাকাতি করে গেছে।
এই সেক্টরটি এখনও বেশ নবীন। ক্রেতা, বিক্রেতা, কুরিয়ার সার্ভিস ছাড়াও আরো অনেকেই এই সেক্টরে তাদের পূঁজি, মেধা আর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সবারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হয়তো একদিন এই সেক্টর সবারই আস্থা অর্জনে সমর্থ হবে।
ফেসবুক মন্তব্য