গুগল ম্যাপ সমাচার

১. ৩ নাতনী’কে নিয়ে শেষপর্যন্ত জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। ৩০০ ফিট দিয়ে যেতে হবে এই তথ্য মাথায় নিয়ে মোবাইলে গুগল ম্যাপ খুলে রওনা দিলাম প্রায় ১১:৩০ এর দিকে। গুগল ম্যাপ যেভাবে বলছিলো সেভাবেই ৩০০ ফিট দিয়ে যাচ্ছিলাম। সার্ভিস রোড দিয়ে আমাদের ডান দিকে মোর নিতে হবে এরকম একটা নির্দেশনা পেয়ে সামনে গিয়ে দেখি সে জায়গায় একটা খাদের মতো, গাড়ি যাবে না। খাদের পর থেকে আবার রাস্তা আছে। আমরা আবার প্রগতি স্মরনি’তে ফিরে গিয়ে সেই অংশটি পার হয়ে ডানে মোর নিলাম। এরপর বামে মোর নেয়ার রাস্তা মিস করে আবার প্রগতি স্মরনি’তে ফিরে এসে আবার একটা চক্কর দিয়ে গুগল ম্যাপে দেখানো পথে গেলাম। কিছুদুর গিয়ে দেখা গেলো কাঁচা রাস্তা (রাস্তা আন্ডার কনষ্ট্রাকশন), সেখান দিয়েই অটো, গাড়ি যাচ্ছে। আমরাও যাচ্ছি। কিছুদূর গিয়ে আর যাওয়ার পথ নাই। পরে লোকাল লোকজন’কে জিজ্ঞাসা করে অন্য রাস্তায় গেলাম। সেসব রাস্তা আবার গুগল ম্যাপে নাই। এরপর আমরা সঠিক রাস্তা পেয়ে জলসিড়ি পর্যন্ত পৌছালাম। এদিকে গুগল ম্যাপ তখন ডান-বাম করতেছে।

২. টিকেট করে ঢুকতে গিয়ে বাঁধা পেলাম। সিকিউরিটি গার্ড জানালেন ডিএসএলআর ক্যামেরা থাকলে ঢোকা যাবে না, নিষেধ আছে। গেটে এক কাপল দাঁড়ানো ছিলেন, তাদের কাছেও ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিলো। ঢুকতে পারছিলেন না। প্রতিজন ২৩০ টাকা করে টিকেট করা, জিজ্ঞেস করলাম ফেরত নিবে কিনা। উনি বললেন গাড়ি নিয়ে আসলে রেখে আসতে পারেন আর না ঢুকতে চাইলে ফেরত নিবে। আমরা টিকেট ফেরত দিয়ে আবার দিয়াবাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হলাম।

৩. রাস্তায় সাইনবোর্ড দেখে এক নাতনী বললো সি শেলস রিসোর্ট নাকি ভালই, সে ইউটিউবে ভিডিও দেখেছে। আবার গুগল ম্যাপের কথামতো ডান-বাম করতে করতে এবং রাস্তায় সি শেলস এর ছোট ছোট ব্যানার ফলো করো আমরা জায়গা মতো পৌছালাম। এন্ট্রি ফি প্রতিজন ১০০ টাকা করে। গাড়ির কোন পার্কিং ফি নাই। জলসিড়ি’তে প্রতিঘন্টা ৫০ টাকা করে পার্কিং ফি দিতে হয়।।

৪. সি শেলস মাঝারি সাইজের একটা রিসোর্ট। ভীড়-ভাট্টা নাই। ঘুরে ফিরে ছবি তোলা যায়। বিভিন্ন রাইড আছে (এ অংশে আমরা যাই নাই)। রেষ্টুরেন্ট আছে। আমরা যখন ছবি তুলছি তখন একটা পরিবার মাঠে চাদর বিছিয়ে পিকনিকের মতো আয়োজনে ব্যস্ত। খূব সম্ভবত তারা বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলো। ঘুরে ফিরে নিরিবিলিতে সময় কাটানো যায়। সুইমিংপুল আছে। কটেজ আছে দেখলাম।

৫. আমরা ৩:৩০ দিকে বের হলাম। ৩ নাতনী জানালো তারা উত্তরা গিয়ে কোন রুফটপ রেষ্টুরেন্টে খাবে। ড্রাইভার অবশ্য রিসোর্টেই খেয়ে নিয়েছিলো। ফেরার পথে আবারও গুগল ম্যাপের ভেলকি। বামে মোর নিতে গিয়ে দেখি রোড একটা আছে বটে, কিন্তু রাস্তায় একটা বাঁশ খাড়া করে আড়াআড়ি কাপড় শুকাতে দিয়েছে পাশের প্লটে বসবাসকারী। এটা আনন্দ হাউজিং এর এলাকা। ব্রিক সোলিং রাস্তা একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড। তাই রাস্তা খূঁজে বের করতে সমস্যা হয় নাই। সার্ভিস রোডে উঠে আমিই এবার ভুল করলাম। কুড়িলের দিকে যাওয়ার বদলে কাঞ্চন এর দিকে যাওয়ার ডিরেকশন দিলাম। যাই হোক। শেষ পর্যন্ত উত্তরায় আসলাম।

৬. শাহ মখদুম এভ্যেনিউ এর একটা রুফটপ রেষ্টুরেন্ট গিয়ে হাজির হলাম, এটাও গুগল ম্যাপের কারসাজিতে। সার্চ দিয়েছিলাম লা টিং টিং রেষ্টুরেন্ট উত্তরা লিখে। গুগল ডিরেকশন দিয়ে এখানে নিয়ে এসে জানালো এখানে ফরেষ্টি রফটপ রেষ্টুরেন্ট। সোজা উপরে উঠে গেলাম। আর খোঁজাখুঁজির ঝামেলা না করে।

বেশ একটা দিন গেলো। মাথা এখনও ডান-বাম করতেছে।
ছবি : ফরেষ্টি রুফটপ রেষ্টুরেন্টে অর্ডার দেয়া খাবার




ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।