ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে শুরু করতে চাইলে আপনাকে ভিডিও তৈরির সরঞ্জাম সম্পর্কে কিছু মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। যেমন – কিভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করতে হয় অথবা কিভাবে আলো এবং শব্দ নিয়ে কাজ করতে হয়। সেই সাথে এডিটিং সম্পর্কে ধারণা। আমরা এখানে সাধারণভাবে প্রচলিত কিছু প্রোডাকশন সরঞ্জাম সম্পর্কে আলোকপাত করবো। আশা করি কাজ শুরু করতে এটি আপনাকে সহায়তা করবে।
ক্যামেরা
বাজারে বহু ধরণের ক্যামেরা আছে। আপনি কি ধরণের কাজ করতে চান এবং আপনার বাজেট অনুযায়ী ক্যামেরা নির্বাচন করতে হবে। সাধারণ ভাবে তিন ধরণের ক্যামেরা পাবেন
১. পয়েন্ট এন্ড শুট
২. ডিএসএলআর / মিররলেস ক্যামেরা
৩. একশন ক্যামেরা
১. পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা গুলি খূবই সাধারণ, সাইজে ছোট ও হালকা এবং পরিচালনা করা অপেক্ষাকৃত সহজ। দামও অপেক্ষাকৃত কম থাকে। যদিও বর্তমান সময়ে অনেক ক্যামেরা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা তৈরী বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে একবারে নতুন না হলেও পূর্বে ব্যবহৃত হয়েছে (সেকেন্ডহ্যান্ড) এমন কিছু পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা পাওয়া যায়। দাম মোটামুটি হাজার পাঁচেক টাকার মধ্যে। একদম নতুন ক্যামেরা চাইলে আপনার জন্য একটি মাত্র বিকল্প আছে, তা হলো সনির ZV-1 বা ZV-1F, তবে এটির দাম মোটামুটি ৬৫ হাজার টাকার মতো। আপনার যদি বিদেশে কোন আত্মীয়-স্বজন থাকেন তবে তাদের দিয়ে অন্য কোন কম দামের পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা আনাতে পারেন। পুরাতন পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরার চাইতে বর্তমানের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা গুলি অনেক ভাল। আমরা পরে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
২. আপনি যদি পেশাদার কাজ করতে আগ্রহী হন তবে আপনার প্রথম পছন্দ ডিএসএলআর ক্যামেরা গুলি। ডিএসএলআর ক্যামেরা গুলি সাইজে বড় এবং ভারী। দামও অপেক্ষাকৃত বেশী হয়ে থাকে। এসব ক্যামেরায় প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের লেন্স এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। ফলে খরচ আরো বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা এই ধরণের ক্যামেরা পরিচালনা শিখতে আপনাকে কিছুদিন সময় দিতে হবে।
তবে বড় বড় ক্যামেরা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এইসব ডিএসএলআর ক্যামেরা তৈরী করা বন্ধ করে দিচ্ছে। তার বদলে তারা মিররলেস ক্যামেরার দিকে ঝুঁকছে। র্তমানে সিররলেস ক্যামেরাগুলি অপেক্ষাকৃত দামী। বাংলাদেশে বর্তমানে পুরাতন এবং ব্যবহৃত ডিএসএলআর ক্যামেরা মোটামুটি কম দামে পাওয়া যায়। তবে এসব ক্যামেরা ক্রয় করতে চাইলে আপনাকে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সে সম্পর্কে আরেকদিন আলোকপাত করা যাবে।
৩. একশন ক্যামেরা
একশন ক্যামেরা ছোট, হালকা এবং টেকসই ডিভাইস যা সাধারণত চরম পরিবেশে ব্যবহার করা হয়। এগুলো ওয়াটারপ্রুফ এবং শকপ্রুফ হওয়ায় ভ্রমণ, অ্যাডভেঞ্চার এবং স্পোর্টস ভিডিও ধারণের জন্য আদর্শ। একশন ক্যামেরাগুলো সাধারণত ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করে, সেই সাথে উচ্চ রেজোলিউশনের ভিডিও ধারণের ক্ষমতা থাকে। এগুলো হেলমেট, সাইকেল বা ড্রোনের মতো বিভিন্ন জায়গায় মাউন্ট করা যায়, এমন কি নিজের শরীরেও। ফলে অনন্য ও ডায়নামিক শট নেয়া যায়। বাংলাদেশে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭৫ হাজার টাকা বা আরো বেশী দামের একশন ক্যামেরা পাওয়া যায়। কমদামী (১+ হাজার টাকা) দামেরও কিছু একশন ক্যামেরা বাজারে পাবেন, ইচ্ছে করলে প্রাথমিকভাবে এগুলো দিয়ে হাত পাঁকাতে পারেন। তবে একশন ক্যামেরার দুটি সীমাবদ্ধতা আছে। প্রথমত ব্যাটারী ব্যাকআপ বেশ কম, এক চার্জে আধ ঘন্টার মতো ভিডিও করা যায়। সেক্ষেক্রে একাধিক চার্জড ব্যাটারী সাথে রাখতে পারেন। দবিতীয়ত একশন ক্যামেরা মূলত দিনের বেলা আউটডোরে ব্যবহারের জন্য তৈরী ঘরের ভিতর বা রাতের বেলা ভিডিও খূব একটা ভাল হয় না।
এর বাইরে ইদানিং ড্রোন ক্যামেরাও ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে। চৎকার সব এরিয়াল শট নেয়া যায় এই ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করে। তবে ড্রোন ক্যামেরা কিছুটা দামী এবং পরিচালনা করা কিছুটা কঠিন। ঠিকমতো পরিচালনা করতে না জানলে আপনি আপনার প্রিয় ড্রোনটি হারাতে পারেন। আবার এটি সব জায়গায় উড়ানো যায় না (যেমন এয়ারপোর্টের আশেপাশে) এবং সাধারণ ভাবে উড়ানোর জন্য সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতি নিতে হয়।
এসব ক্যামেরা ব্যবহারের আরেকটি সীমাবদ্ধতা আছে। ভিডিও এডিট করার জন্য আপনার একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ লাগবে। আর ভিডিও যদি 4k মানের হয় তো আলাদা জিপিইউ সহ শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন। সেখানেও বড় একটি খরচ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো আপনি কোনটি কিনবেন। আমার মত হলো আপনার হাতে যে মোবাইল ফোনটি আছে সেটির ক্যামেরার দিকে আগে নজর দিন। বর্তমানে ১০-১৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোনগুলিতে যেসব ক্যামেরা থাকে তা দিয়ে আপনি সহজেই এইচডি কোয়ালিটির ভিডিও করতে পারবেন। পর্যাপ্ত আলো থাকলে ঘরের ভিতরেও ভাল ভিডিও করা যায়। সাথে আরো কিছু আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম থাকলে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই চমৎকার সব ভিডিও তৈরী করা সম্ভব। মোবাইল ফোনের আরো একটি কাজ আছে, তা হলো তৈরী ভিডিও আপনি সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে পারবেন। আপনার বাজেট সীমিত হলে আপনি শুরুতে তাই মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়েই ভিডিও তৈরী করা শুরু করুন। তারপর নিজের দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সাথে নিজের সরঞ্জামগুলি পরিবর্তন করুন। মোবাইল ফোন ক্যামেরা থেকে একশন ক্যামেরা, এরপর পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা অথবা ডিএসএলআর / মিররলেস ক্যামেরা। একজন দক্ষ ভিডিওগ্রাফার হয়ে উঠলে আপনি ডিএসএলআর / মিররলেস ক্যামেরা, একশন ক্যামেরা এবং ড্রোন ক্যামেরা সহযোগে চমৎকার সব ভিডিও তৈরী করতে পারবেন।
ডিসক্লেইমার : লেখাটি তৈরী করতে বিভিন্ন আর্টিকেল এর সাহায্য নেয়া হয়েছে। সেই সাথে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হয়েছে তথ্য আহরণ এবং প্রাথমিক অনুবাদের জন্য।
ফটো ক্রেডিট : Freepk AI
ফেসবুক মন্তব্য