আয়-ব্যয় এবং সঞ্চয়

সরকার বাহাদুর ব্যাংকের সুদ নয়-ছয় করতে গিয়ে মধ্যবিত্ত এবং অবসরপ্রাপ্তদের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন মনে হচ্ছে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সুদের হার ৬% এর নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও নাকি পূনর্বিন্যাস করা হবে। ব্যাংকে আমানতের সুদের হারও সর্বোচ্চ ৬% করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে পুরোদমে কার্যকর হবে এই নিয়ম।

যাই হোক। একটা কাহিনী বলি। সেদিন আব্বার জন্য এক ডাক্তারের আগাম এপয়েন্টমেন্ট করতে গিয়ে জানলাম দিনের টা দিনে করতে হবে এবং সেদিনের  কোটা শেষ। তিনি নাকি বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৫০ জন। তিনি এক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে বসেন। রোগী প্রতি ভিজিট ৮০০ টাকা। তাহলে ছোট একটি হিসাব করি। প্রতিদিন তার আয় ৫০ জন গুনন ৮০০ টাকা বা ৪০ হাজার টাকা মাত্র। সপ্তাহে ৬দিন রোগী দেখেন। মানে তার সাপ্তাহিক আয় ৬ গুনন ৪০ হাজার টাকাা বা ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা মাত্র। মানে মাসে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তার একজন ষ্টাফ আছেন, ২ জন সদ্য পাশ করা ডাক্তার তার সাথে বসেন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। তারা অবশ্য প্রেসক্রিপশন লেখার কাজটিও করেন। ডাক্তার সাহেব শেষে একবার চেক করে দেন। চেম্বার এর জন্য এবং ষ্টাফদের জন্য তার কি পরিমান খরচ হয় আমার জানা নেই। সাপ্তাহিক ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে যদি ৪০ হাজার টাকা খরচ ধরি তাহলে তার মাসিক আয় ৮ লক্ষ টাকা। অবশ্য আপনি ইচ্ছে করলে মাসিক আয় ৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ ধরে মাসিক ৯ লক্ষ টাকা আয় ধরতে পারেন। তিনি একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের প্রফেসর। সেখান থেকে তার আয় হয়। যে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে বসেন তাদের হাসাপাতালে রোগীদের দেখেন। সেখানেও রোগী প্রতি প্রতিবার হাজার দু’য়েক টাকা ভিজিট কাটা হয়। এইসব আয় এবং তার সামগ্রিক ব্যয়ের কোন তথ্য আমার কাছে নাই। তাই এসম্পর্কে কিছু বলা গেলো না। ৫-৯টা পর্যন্ত রোগী দেখেই তিনি বছরে ৯৬ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা আয় করেন।

আব্বার জন্য কি পরিমান খরচ হয় শুনবেন ? শুধূ ডায়পার এর হিসাব দেই। লার্জ সাইজ ১০ পিসের এডাল্ট ডায়পার প্যাকেটের দাম ৭০০ টাকা। প্রতি ৬ ঘন্টা পর পর ডায়পার বদলালে প্রতিদিন ডায়পার লাগে ৪টি। সে হিসাবে মাসে ডায়পার লাগে ১২ প্যাকেট মানে খরচ ৮ হাজার ৪০০ টাকা। বাকি সব খরচ ডাক্তার, টেষ্ট, ঐষধ এসবের খরচ আর বললাম না। থাকা-খাওয়ার খরচও আছে। মানে বছরে ডায়পার বাবদ শুধূ আব্বার জন্য খরচ হয় ১ লক্ষ টাকার কিছু বেশী। এই খরচ কমানোর জন্য মাঝে মধ্যেই ডায়পার ব্যবহার কমাতে হয়। তাতে লুঙ্গি/চাদর প্রায় প্রতিদিনই ধোয়া লাগে। অনেকেই হয়তো বলবেন টাকা খরচ করে ডায়পার ব্যবহার করার দরকার কি, লুঙ্গি / গামছা ব্যবহার করেন। আমার কোন উত্তর নাই।

থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ বোন দুলাভাই বহন করেন। ডাক্তার ইত্যাদি বাবদ খরছের বড় একটা অংশ আসে আব্বার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা / সুদ থেকে। খরচ বাদ দেয়ার পর যা থাকে সেটা দিয়ে আমি চলি। আমার তেমন কোন সঞ্চয় নাই। খরচ বাঁচিয়ে লাখ তিনেক টাকা ব্যাংকে জমা করেছি। এটাই সঞ্চয় বলতে পারেন।

এখন একজন ডাক্তার মাসে আয় করছেন প্রায় কোটি টাকা, তার সঞ্চয় হয়তো কয়েক কোটি। আর আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার সরকারী চাকরি করার সুবাদে হয়তো সঞ্চয়পত্রে জমা করেছিলো কিছু আর আছে ছোট একটা এপার্টমেন্ট। কারো হয়তো ৬ তলা বাড়ি আছে। 

তবে মনের সান্তনা হলো আমাদের পরিবারের চাইতেও খারাপ অবস্থায় অনেকেই আছেন। কারো হয়তো দিন আনে দিন খায় অবস্থা। কেউ হয়তো জানে না আগামীকাল কি খাবে। সে তুলনায় নিশ্চিতই ভাল আছি, অনেক ভাল আছি। কেবল চিন্তা একটাই। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দিলে চলবো কি ভাবে।

ভাল থাকুন, ভবিষ্যতের চিন্তা এখনই করে রাখুন।

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।