বাংলাদেশ বেতার (১)

বাংলাদেশ বেতারের সাথে আমার পরিচয় আসলে কবে !?! আমাদের চিটাগাং এর বাসায় একটা টিউব রেডিও ছিলো। কিন্তু সেটাতে কখনও কিছু শুনতাম কিনা আজ আর মনে নেই। সে সময় অবশ্য আমার বয়সও ছিলো কম। ১৯৬৮/৬৯ সালে আব্বা লন্ডনে একটা ট্রেনিং করতে গিয়ে আমার জন্য ছোট একটা পকেট রেডিও পাঠিয়েছিলেন। তবে সেটা আমার চাইতে বেশী শুনতেন আমার এক খালা, সে সময় তিনি আমাকে তার কাছে নিয়ে রেডিও অন করে বিভিন্ন সিনেমার গান শুনতেন। এরপর ১৯৭১ সালে শুরু হলো স্বাধীনতার সংগ্রাম। তখন অবশ্য আমাদের বাসায় কোন রেডিও ছিলো না, তবে একটা ফিলিপস টিভি ছিলো। বড় চাচার বাসায় সন্ধ্যার পর সবাই গোল হয়ে বসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতাম। চরমপত্র আর মুক্তিযুদ্ধের সব কালজয়ী গানের কথা আমার এখনও একটু একটু মনে আছে। 

এরপর অনেক দিন আর কোন রেডিও আমাদের বাসায় ছিলো না। ১৯৭৭ সালে যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, তখন আব্বা একটা স্যানিও টু ইন ওয়ান আনেন বিদেশ থেকে। ক্যাসেট খূব একটা কেনা হতো না, রেডিও বেশী শোনা হতো। আব্বা বেশী শুনতেন খবর সাউন্ড একটু বাড়িয়ে। আব্বার সাথে সাথে আমরাও শুনতাম। কোন এক সময় ক্যাসেট নষ্ট হয়ে গেলো, রেডিও ঠিক ছিলো। ক্লাস এইট / নাইনে পড়ার সময় সেই টু ইন ওয়ান একান্তই আমার হয়ে গেলো। শুরুর দিকে খবর / খেলা এসব শুনতাম। ক্লাস নাইনে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে পড়ার সময় বন্ধু জাকারিয়া পরিচয় করিয়ে দিলো বাংলাদেশ বেতারের ওয়ার্ল্ড মিউজিক অনুষ্ঠানের সাথে। জাকারিয়ার বাসায় তখন বিভিন্ন ধরণের রেকর্ড প্লেয়ার / রেকর্ড / ক্যাসেট প্লেয়ার এবং ক্যাসেট ছিলো। গিটারও ছিলো। এলপি রেকর্ড এবং ক্যাসেটের বেশীর ভাগ ছিলো ইংরেজী গানের। তখন থেকেই একটু একটু করে ইংরেজী গানের প্রতি আগ্রহ বাড়ছিলো। ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো নষ্ট, তাই আমার গান শোনার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে রেডিও। দুপুরে স্কুল থাকায় ওয়ার্ল্ড মিউজিক শুনতে পারতাম কেবল শনিবার / রবিবার আর অন্যান্য ছুটির দিনে। রবিবার হতো ইউর চয়েস – শ্রোতাদের অনুরোধের গানের অনুষ্ঠান। এখনও মনে হয় কান পাতলে আনোয়ারুল আর সাদিয়া’র অসাধারণ কন্ঠস্বর শুনতে পাই। 

এভাবেই আস্তে আস্তে বাংলাদেশ বেতার সহ অন্যান্য রেডিও শোনা শুরু হলো। (ক্রমশ…)

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।