একদিন বাংলাদেশ দূতাবাসের গাড়ীতে চড়ে কোথাও যাচ্ছি। গাড়ী চালাচ্ছিলো মরিস। মরিসের আদি বাড়ি হাঙ্গেরী। ছিলো বিমান বাহিনীর ফাইটার প্লেনের পাইলট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হাঙ্গেরী পূর্ব ব্লকে চলে গেলো, মরিস কোন একসময় পালিয়ে চলে আসে সুইডেন। সুইডিশ মেয়ে বিয়ে করে সুইডেনেই রয়ে যায়। যেহেতু প্লেনের পাইলট ছিলো সেটাকেই আবার পেশা হিসেবে নেয়। লাইসেন্স পায় কমার্শিয়াল প্লেন চালানোর। ভালই চলছিলো জীবন। বহু দেশে গেছে প্লেন নিয়ে। একসময় হার্টে সমস্যা ধরা পড়লো, ম্যাসিভ হার্ট এটাকও হলো। সুস্থ্য হওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড ঘোষণা করলো ‘আনফিট টু ফ্লাই’। এপর তো আর সময় কাটে না। বাংলাদেশ দূতাবাস সেই সময় একজন শোফার চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলো, মরিস গিয়ে হাজির হলো ইন্টারভিউ দিতে। তার সিভি দেখে প্রথম প্রশ্ন করা হলো প্লেন চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে গাড়ী চালানোর চাকরি তার কেন দরকার ? বেতনও তো পাইলটের ধারে কাছের না।মরিস নাকি বলেছিলো তার টাকার দরকার নাই, জাষ্ট সময় কাটানো দরকার। টাকা তার যথেষ্ঠই আছে। চাকরি হয়ে গেলো। মরিসের সাথে কোথাও গেলে ব্যাপক আলাপ আলোচনা হতো। সে অনর্গল কথা বলতে পারে আর আমি একজন ভাল শ্রোতা। তো সেদিন কথা হচ্ছিলো এই নিয়ম কানুন মানা নিয়ে। আমি বলছিলাম যে তোমার দেশের মানুষ কি ভাল, নিয়ম কানুন মেনে চলে। রাস্তা ঘাটে বা অন্য কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নাই। মরিস কথার মধ্যে হঠাৎ করে হর্ণ বাজালো একবার। ষ্টকহোমের রাস্তাতে হর্ণ এর শব্দ শোনা চাট্টিখানি কথা না, যদিও গাড়ী চলতেছে হাজারে হাজার। আমি তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মরিসের দিকে তাকাতে সে বললো পাশের লেনের গাড়ী সিগনাল দিয়েই তার লেনে চলে আসছে। তাই একটু বকে দিলো। আরেকদিন হর্ণ বাজানোর পরে কাকে জানি হাত নাড়লো। আমি মনে করেছিলাম পরিচিত হয়তো। বললো ঐ গাড়ীর মেয়েটা খূব সুন্দর ছিলো, খেয়াল করো নাই ?
তো সেদিনের নিয়ম কানুন মানা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলতে থাকলো। মরিস বললো দুনিয়ার কোন গাড়ী চালকই নিয়ম মানতে চায় না। ড্রাইভিং সিটে বসলে মনে করে উঠলাম এফ ১৬ এর ককপিটে। তাকে তার এফ ১৬ থেকে মাটির দূনিয়ায় নামিয়ে আনতে পারে কঠোর আইন আর জরিমানার বোঝা। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করলো এই ভাবে যে একই টাইপের ২/৩টা টিকেট পেলে তোমার ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি বাতিল হওয়ার পথে থাকে তুমি আইন মেনে চলতে বাধ্য। কারণ সবসময় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়ে পোষায় না। আবার কোন কোন চাকরিতে শর্তই দেয়া থাকে নিজের গাড়ী থাকা লাগবে। গাড়ী আছে, অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই সেটা তো হয়ে গেলো অনেকটা কাঁঠালের আমস্বত্বের মতো ব্যাপার। আবার লাইসেন্স বাতিল হলে নতুন করে লাইসেন্স পেতে আরো বেশী ঝামেলা। তাই কেউ লাইসেন্স হারাতে চায় না, আইনে মেনেই চলে নিয়মিত। আবার বড় অংকের জরিমানা তো আছেই। একবার জরিমানা হলে একই আইন আবার ভঙ্গ করলে নাকি জরিমানার পরিমান বেড়ে যায়। সেই সাথে বাড়ে লাইসেন্স হারানোর ঝুঁকি। যে লোক মিনিমাম ওয়েজে চলে তার যদি মাসে ৩/৪ বার জরিমানা দিতে হয় তো পকেট নাকি খালি হয়ে যাবে। সুতরাং তুমি কেষ্টু-বিষ্টু যাই হও, ট্রাফিক আইন তোমাকে মানতেই হবে। বিন্দু মাত্র ছাড় নাই।
ফেসবুক মন্তব্য