খরচ কেমন !?!

ফেসবুকে মাঝে মধ্যে চমৎকার সব আলোচনা হয়। যেমন ডিএসডি’তে কেউ একজন প্রশ্ন করলেন দুইজনের পরিবারে মাসিক খাবার খরচ কেমন আসতে পারে। কমেন্ট থেকে জানা গেলো তিনি নতুন সংসার শুরু করতে যাচ্ছেন। তাই এই প্রশ্ন।

প্রচুর উত্তর এসেছে। ৪/৫ হাজার টাকা থেকে ২৫/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। আমি নিজে বাজার করি না, বিশেষ করে কাঁচা বাজার। তারপরও আমার মনে হয়েছে ৪/৫ হাজার টাকায় কি আসলেও কেবল খাবার খরচ হয় এই ঢাকা শহরে। তবে অনেকেই বলেন ঢাকা শহরে থাকার খরচ, যাতায়াত খরচ বেশী কিন্তু খাওয়ার খরচ অপেক্ষাকুত কম। অন্য দিকে জেলা শহর বা মফস্বলে থাকা বা যাতায়াতের খরচ কম হলেও খাওয়ার খরচ নাকি অপেক্ষাকৃত বেশী। এই মন্তব্য আসলে আমার এক মফস্বলে বসবাসরত এক আত্মীয়ের। তার বক্তব্য গ্রাম বা মফস্বলে যা উৎপাদিত হয় তার বেশীরভাগটাই চলে যায় ঢাকা শহরে। আর তাই দাম বেশী।

এবার দেখা যাক ফেসবুকে কে কি বললো। একজন লিখেছেন “প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন মানুষের ৮-১০ হাজার টাকা লাগার কথা বর্তমান বাজারে। ” আমার মনে হয় এটাই বাস্তবতা।

আর একজনের উত্তর “হপতায় দুদিন মুরগি আর বাকিদিন সবজি তরকারি আর মাঝে মাঝে কলা আপেল,৫/৬ হাজার। রেস্টুরেন্টে হপতায় ১ বার খাইলে মাসে ৮৫০০। আর হেলদি ফিটনেস মেনটেনড করে খাইলে ৭০০০।

একজন লিখলেন “How are you guys managing in 5-10k? We are two people and we spend about 25-30 k for food purpose! I want to save money. Following this post.” তিনি লিখেছেন অফিসে লাঞ্চ এবং স্ন্যাকস কিনে খেতে হয় সপ্তাহে ৫ দিন। তারপর  রেষ্টুরেন্টের খরচ এই হিসাবের মধ্যে নাই। আর তিনি নিজেই বাজার করেন, সুতরাং হিসাব সঠিক। এখন কথা হলো যার যেমন আয় তার লাইফ ষ্টাইল তেমনই। এই ঢাকা শহরে ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে অনেকেই টিকে আছে। সুপারশপ গুলো থেকে বাজার করলে অনেক সময় খরচ কিছুটা বেশী হয়। এখন কেউ যদি তার আয় অনুযায়ী সব ইম্পোর্ডেড জিনিসপত্র কিনেন দৈনিক বাজার হিসাবে তাহলে খরচ তো বাড়বেই। তারপর ও মনে হয় ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ, কেবল খাবারের পিছনে – মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।

একজন অবশ্য এই উত্তর দিয়েছেন “যদি নিম্নবিত্ত পরিবার হয় ৫০০০ মধ্যবিত্ত হলে ১০-১২০০০ আর উচ্চবিত্ত খাবার হলে তার কোন রেঞ্জ নাই ১৫-২০-৩০ যে যেভাবে খায়।”

আরেকজন উত্তর দিলেন “আমার প‌রিবা‌রে মানুষ ৮ জন। মু‌দির বাজার ক‌রি ৬০০০ টাকার, মাছ মাংস সব‌জি মি‌লি‌য়ে ৪০০০ টাকা, মোট ১০০০০ লা‌গে। উনা‌দের যে‌হেতু মাত্র দুজন সে‌হেতু হি‌সেব ক‌রে চল‌লে ৫ হাজা‌রের কম লাগার কথা।” মাছ-মাংস-সবজি মিলিয়ে মাসে মাত্র ৪ হাজার টাকা, তাও ৮ জনের জন্য। কেমন করে সম্ভব !!!

আরেকজন বললেন তিনি গ্রামে থাকেন। তার খরচ এরকম “শুকনা বাজার মানে চাল,ডাল,তেল,চিনি,মশলা, নুডুলস,চাপাতি,গুড়া দুধ এগুলা মাসের টা একসাথে কিনলে ৩-৪ হাজার লাগবে। আর মাছ কমপক্ষে ১৫০০, মুরগী ফার্ম হলে ১০০০, দেশী হলে সেটা ডিপেন্ড করবে, গরু এটলিস্ট ২০০০ টাকার, তরল দুধ, দৈনিক ৫০০ গ্রাম নিলেও ১০০০ টাকা, আর ফল ফ্রুটস,বিস্কুট কেমন খাবেন সেটা ডিপেন্ড করে, ডিম মাসে ৫০০ টাকার, আরো হাবি জাবি টুকটাক মিলে ধরুন ১০০০। এবার মিলিয়ে নিন কতো লাগতে পারে। আমরা দুজন,গ্রামে থাকি,সব কিনে খেতে হয়,বাসা ভাড়া দিয়ে মাসে ৩০ হাজার লেগে যায়।”

একজন ব্যাচেলর উত্তর দিয়েছেন “আমরা তিন ফ্রেন্ড এক সাথে থাকি। ব্যাচেলর। আমাদের কোনো মাসেই খাবার খরচ জনপ্রতি ১৮০০ টাকার উপর উঠে না। অথচ আমরা কিন্তু খুব বেশী খারাপ খাচ্ছি না। মাংশ মাছ ডিম সবজি সবই খাচ্ছি।” তিনি আরেকজনের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন “ শুধুমাত্র ঘরোয়া খাবারের খরচ। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন মুরগী খাওয়া পড়ে। আগে পোল্ট্রী খাইতাম, এখন পাকিস্তানী। গরু খাওয়া হয়না একজন হিন্দু থাকায়। মাছ রেগুলারই খাওয়া হচ্ছে। ইভেন মাঝে মাঝে বড় চিংড়িও খাওয়া হয়৷ পোলাও, খিচুরি সেসবও চলে।

একজন হিসাব দিলেন এরকম “১০০০০ অবশ্যই লাগে ভাই। সপ্তাহে একদিন গরুর মাংস, একদিন মুরগি, বাকি পাঁচ দিন মাছ।হিসেব করে দেখেন কত টাকা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ টাকার সবজি। পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে গেলে প্রতিদিন একটা করে ডিম, একটা ফল আর এক গ্লাস দুধ। শুকনো বাজার চাল, ডাল,তেল এগুলো তো আছেই। হিসেব করে দেখেন ১০ হাজারের কম না। সংসারের অভিজ্ঞতা তো একদম কমনা তার উপর জিনিসপত্রের যা দাম। “

আপনার কি মত জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
আর পোষ্টটি পড়তে চাইলে এখানে ঢু মারুন। গ্রুপের সদস্য না হলে হয়তো দেখতে পারবেন না।

Photo by nrd on Unsplash

 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।