ধারণা

সে অনেক কাল আগের কথা। আমি তখন ্কোন এক কোম্পানিতে কামলা দেই। কোম্পানির কনস্ট্রাকশন ব্যবসা সহ আরো বেশ কিছু ব্যবসা ছিলো। তার মধ্যে একটি ছিলো পরিবহন ব্যবসা। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ২টি বাস চলে। আমাকে প্রতিদিনই বাসের জমা আনতে মহাখালি টার্মিনালে যেতে হয়। 

একবার এক বাসের ড্রাইভার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলো। ড্রাইভার ঠিকমতো জমা দেয় না আর ভাব দেখায় সে স্বয়ং নবাব। গাড়ীরও ঠিকমতো যত্ন নেয় না। যাই হোক। মালিক জানে ড্রাইভার পরিবর্তন করতে হবে। কারণ তিনিও সেই ড্রাইভারের ব্যবহারে সন্তুষ্ট ছিলেন না। মালিকের বাড়ী ময়মনসিংহ, তিনি সেখানের মালিক সমিতির সদস্য। ড্রাইভার সেখান থেকেই নেয়া হয়েছিলো। আমি তাই তাকেই নতুন ড্রাইভার নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছিলাম। তিনি অবশ্য আমাকে বলছিলেন ড্রাইভারের খোঁজ পেলে তাকে জানাতে। আমি অন্য গাড়ীর ড্রাইভারের কাছে বলে রেখেছিলাম ড্রাইভারের কথা। এই ড্রাইভারটি হিন্দু, এইচএসসি পাশ করেছিলো। কিন্তু অভাবের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারে নাই। ব্যবহার খূবই ভাল।

একদিন সেই হিন্দু ড্রাইভার এসে জানালো, ড্রাইভার একজন পাওয়া গেছে। সবদিক দিয়েই ভাল, কিন্তু কিছু দূর্নাম আছে। কি ধরণের দূর্নাম জিজ্ঞেস করায় আর কিছু বলে না। কেবল বলে সেইসব আপনার সামনে বলা যাবে না। আমি ভাবলাম হয়তো কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়েছিলো। জিজ্ঞাসা করে জানলাম সেরকম কিছু না। সে ড্রাইভার হিসেবে খূবই ভাল। গাড়ীরও যত্ন নেয়। শেষতক জানা গেলো তার কিছু ব্যক্তিগত দোষ আছে। ড্রাইভারদের মধ্যে মদের নেশা থাকে। জিজ্ঞাসা করায় বললো মদ সব ড্রাইভারই এক-আধটু খায়। অনেক ড্রাইভারই মদ খেয়ে গাড়ী চালায়, এমনও শুনেছি। তবে এই ড্রাইভারের সেরকম কোন রেকর্ড নাই। আরো একটা দোষ থাকতে পারে। তবে সে সম্পর্কে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। তবে সেটি কোনভাবেই গাড়ী চালানোর সাথে সম্পৃক্ত না। 

পরদিন সেই ড্রাইভার আসলো। কথা বললাম। বললাম আপনি গাড়ী নিয়ে ময়মনসিংহ যাবেন আবার পরদিন ঢাকায় আসবেন। আমি গাড়ীতেই থাকবো। সাথে বাবু (অন্য ড্রাইভার) ও থাকবে। কথা মতো আমি ময়মনসিংহ গেলাম আবার পরদিন ফেরত আসলাম। ড্রাইভার গাড়ী ভালই চালায়। গাড়ী চালানোর সময় সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনেক ড্রাইভারকে দেখি গাড়ী চালানোর সময় প্রচুর কথা বলে। কন্ডাক্টরকে বকাঝকা করে আবার যাত্রীর সাথেও ঝগড়া করে। এই ড্রাইভার দেখলাম সেরকম কিছু করে না। ষ্টপেজে আসলে কেবল ঘাড় ঘুড়িয়ে যাত্রীর ঊঠানামা দেখে। তারপর আবার গাড়ী চালানোতে মন দেয়। কালেভদ্রে কন্ডাক্টর বা হেলপারের সাথে কথা বলে। আমি ঢাকা ফিরে দেখলাম অন্য গাড়ীও এসেছে। সেই ড্রাইভার জানতো তাকে রাখা হবে না। আমি গিয়ে তাকে বললাম ময়মনসিংহ গিয়ে নতুন ড্রাইভারের কাছে চাবি বুঝিয়ে দিতে। চাবি বুঝিয়ে দেয়া মানে গাড়ী বুঝিয়ে দেয়া। গাড়ীতে কোন ত্রুটি আছে কিনা, ট্যাংক ফুল আছে কিনা , কোন মামলা আছে কিনা সবই বুঝিয়ে দিতে হবে। সাথে ট্রিপের টাকা।

বাবুর সাথে কথা হলো। বাবু আমাকে একটা কথাই বললো, সবার কাছে যে খারাপ সে আপনার কাছে খারাপ নাও হতে পারে। তাকে সূযোগ দিলে সে আপনার সম্মান রাখবে। 

অফিসে জানালাম নতুন ড্রাইভার গাড়ী চালানো শুরু করেছে। সপ্তাহ দূয়েক পর মালিক ময়মনসিংহ গেলেন। ফিরে এসে পারলে আমাকে আছাড় মারেন আর কি। কি ড্রাইভার রাখছো, মালিক সমিতির সবাই ছি ছি করতেছে। কালই এই ড্রাইভার নামিয়ে দাও। আমি কেবল জিজ্ঞাসা করলাম নতুন ড্রাইভার ঠিক করেছেন কিনা । উত্তর হলো না। আমাকে প্রায় প্রতিদিনই বলতে লাগলেন ড্রাইভারকে নামিয়ে দিতে। আমিও নতুন ড্রাইভার পাচ্ছি না বলে সময় নিতে থাকলাম। 

একমাস পরে মালিক আবারও ময়মনসিংহ যাবেন। সাধারণত নিজের প্রাইভেট কার নিজেই ড্রাইভ করে যান। আমি বললাম নিজের বাসে যান। ড্রাইভারের গাড়ী চালানো দেখেন। পছন্দ না হলে নতুন ড্রাইভার ঠিক করে দিবেন। যে কথা সেই কাজ। বাসেই ময়মনসিংহ গেলেন এবং ঢাকায় ফেরত আসলেন।

ঢাকায় ফিরে দেখি আর ড্রাইভার বদলের কথা বলেন না। আমি নিয়মিতই মহাখালি যাচ্ছি আর আসছি। ড্রাইভার দু’জনেই জানালো নতুন ড্রাইভার নিয়োগের ব্যাপারে মালিক কিছু বলেন নাই। শেষ পর্যন্ত আমিই জিজ্ঞাসা করলাম নতুন ড্রাইভার নেয়ার কি হলো। তখন জানালেন ড্রাইভার তো বেশ ভাল গাড়ী চালায়, তার নাকি খূব পছন্দ হয়েছে। সমিতিতে সবাই অকথা-কুকথা বলে ছি ছি করায় তার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো। 

যাই হোক ড্রাইভার বহাল রইলো। কয়েক বছর পর বাস ঢাকা-শ্রীপুর রুটে চলে আসলো। লোকাল ড্রাইভার নিতে হবে। দূজন ড্রাইভারই বাদ দিতে হলো। কিন্তু সেই ড্রাইভারের চাকরি হলো মালিকের বড় ভাই এর কাছে। তার জিপ চালাবে। মালিক একসময় বাস দু’টোই বিক্রি করে দিয়ে পরিবহন ব্যবসা থেকে বের হয়ে এলেন। কিন্তু সেই ড্রাইভার আরো অনেক বছর তার বড় ভাই এর জিপ গাড়ী চালিয়েছে। 

বাবু’র কথা এখনও কানে বাজে “সবার জন্য যে খারাপ সে আপনার জন্য খারাপ না ও হতে পারে” !!!

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।