সন্তান

ইদানিং পরিচিত-আত্মীয়-বন্ধু স্থানীয় অনেকেরই দেখছি সন্তান হওয়া নিয়ে নানাবিধ সমস্যায় আছেন। সবচেয়ে বেশী সমস্যা মনে হয় সামাজিক। কোন কারণে কারো সন্তান না হলে আশে-পাশের মানুষজন মনে হয় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর নানারকম বাক্যবাণ, তথাকথিত পরামর্শ ইত্যাদি দিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেন। অথচ সঠিক পরামর্শ মনে হয় কেউ ই দেন না। 

পরিচিত একজনের কথা বলি। বিয়ের পর তারা ভালই ছিলেন। সমস্যা শুরু হলো মহিলার মিসক্যারেজের পর। গত কয়েক বছরে হাজার চেষ্টা করেও স্ত্রী কনসিভ করেন নাই। এটা নিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রীর কিছুটা টেনশন থাকলেও সমস্যা ছিলো না কোন। কিন্তু স্বামীর দিকের আত্মীয়স্বজন বিশেস করে মা আর বোনরা মিলে আবার বিয়ে করার মন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ কেউ ই মনে হয় ভাল ডাক্তার কিংবা টেষ্ট টিউব বেবীর ব্যাপারে পরামর্শ দেয় নাই। অথচ তাদেরই আরেক আত্মীয় টেষ্ট টিউব প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিয়েছে। 

পরিচিত একজনের বিয়ে ভেঙ্গে যওয়ার উপক্রম হয়েছিলো এই সন্তান না হওয়ার কারণেই। তবে সেখানে আরো একটি সমস্যা ছিলো। ভদ্রলোক বরাবরই এই জন্য ভদ্রমহিলাকে দায়ী করতেন। ডাক্তার দেখানোর কথা উঠলেই বলতেন তার নিজের কোন সমস্যা নাই, সমস্যা তার স্ত্রীর। যাই হোক ভদ্রমহিলা নিজেই যেতেন ডাক্তারের কাছে। সেখানে অবধারিতভাবেই প্রশ্ন আসতো স্বামীপ্রবর ছাড়া কেন। যাই হোক (একাধিক) ডাক্তার দেখানোর পরেও তারা কোন সমস্যা খূজে পান নাই। পরে একজন ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওজন কমানোর। শরীরে বেশী চর্বি থাকলে নাকি হরমোন নিঃসরণ বাধাগ্রস্থ হয়। হয়তো সেকারণেই সন্তান হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তাদের সন্তান হয়েছিলো, কিন্তু বিয়ে আর টেকে নাই। 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলেও হয়তো সন্তান হয় না অজানা কারণে। এ প্রসঙ্গে জসিম-সুচরিতার কথা মনে পড়ে গেলো। জসিম যখন সুচরিতা’কে বিয়ে করেন তখন তিনি (সুচরিতা) ছিলেন সদ্য কৈশোরোত্তীর্ন। দীর্ঘদিন ঘর করার পরেও তাদের কোন সন্তান হয় নাই। অতঃপর তারা আলাদা (ডিভোর্স) হয়ে দূজনেই অন্যত্র আবার বিয়ে করেন। সেখানে তাদের একাধিক সন্তান জন্ম নেয়। সুচরিতার ঘরে দুই ছেলে আর জসিমের ঘরে তিন ছেলে। 

বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ বেতারের একটি অনুষ্ঠান শুনছিলাম। বিষয় ছিলো মিসক্যারেজ। আলোচক চিকিৎসক অনেক কথার পর বললেন বর্তমান প্রজন্মের লাইফ ষ্টাইল, বিশেষ করে খাদ্যাভাস এর কারণেও নানা রকম শারীরিক সমস্যা হয় এবং হচ্ছে। বিশেষ করে ফাষ্ট ফুড এর আসক্তি স্থুলতা সহ নানা সমস্যা তৈরী করে। যেমন কেউ যদি গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খান তবে তার মিসক্যারেজ হতে পারে। সঞ্চালক প্রশ্ন করলেন কাঁচা ডিম তো পূরুষ / মহিলা সহজে কেউ খায় না। এবার চিকিৎসক জানালেন ফাষ্ট ফুডে যে মেয়নিজ ব্যবহার করা হয় সেটা কিন্তু কাঁচা ডিম দিয়েই তৈরী হয়। 

জীবনে চলতে গেলে সমস্যা থাকেই। সমাধান হয়তো খূঁজে বের করতে হবে। কিন্তু জনগণের কথায় নাচার চাইতে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সমাধানের চেষ্টা করা ভাল। আরো একটা কথা মাথায় রাখা ভাল – আপনার সন্তান হচ্ছে না এই দূঃখ / কষ্ট কিন্তু আপনার একার না, আপনার সাথীরও। তার সাথেই ভাগাভাগি করে নেন সবকিছু।

ভাল থাকুন নিরন্তর। 

ফেসবুক মন্তব্য

রিফাত জামিল ইউসুফজাই

জাতিতে বাঙ্গালী, তবে পূর্ব পূরুষরা নাকি এসেছিলো আফগানিস্তান থেকে - পাঠান ওসমান খানের নেতৃত্বে মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। লড়াই এ ওসমান খান নিহত এবং তার বাহিনী পরাজিত ও পর্যূদস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের ২২ গ্রামে। একসময় কালিহাতি উপজেলার চারাণ গ্রামে থিতু হয় তাদেরই কোন একজন। এখন আমি থাকি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। কোন এককালে শখ ছিলো শর্টওয়েভ রেডিও শোনা। প্রথম বিদেশ ভ্রমণে একমাত্র কাজ ছিলো একটি ডিজিটাল রেডিও কেনা। ১৯৯০ সালে ষ্টকহোমে কেনা সেই ফিলিপস ডি ২৯৩৫ রেডিও এখনও আছে। দিন-রাত রেডিও শুনে রিসেপশন রিপোর্ট পাঠানো আর QSL কার্ড সংগ্রহ করা - নেশার মতো ছিলো সেসময়। আস্তে আস্তে সেই শখ থিতু হয়ে আসে। জায়গা নেয় ছবি তোলা। এখনও শিখছি এবং তুলছি নানা রকম ছবি। কয়েক মাস ধরে শখ হয়েছে ক্র্যাফটিং এর। মূলত গয়না এবং নানা রকম কার্ড তৈরী, সাথে এক-আধটু স্ক্র্যাপবুকিং। সাথে মাঝে মধ্যে ব্লগ লেখা আর জাবর কাটা। এই নিয়েই চলছে জীবন বেশ।